E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য প্রত্যাহার দাবিতে ৪৫টি প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠনের যৌথ বিবৃতি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ ১৯:২২:১৫
দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য প্রত্যাহার দাবিতে ৪৫টি প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠনের যৌথ বিবৃতি

প্রবাস ডেস্ক : দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের ৪৫টি প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠন। এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা এ মন্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। গতকাল শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন ফর এথনিক এন্ড রিলিজিয়াস মাইনওরিটিজ ইন বাংলাদেশ লিমিটেড এর পরিচালক শর্মিষ্ঠা সাহা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দুর্গাপূজায় মদ-গাঁজার আসর বসানো যাবে না।” এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংগঠনগুলো বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে মাদক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে তিনি শুধু হিন্দুধর্মকে অপমান করেননি, বরং দেশের নাজুক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকেও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলেছেন। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকে গভীরভাবে আঘাত করেছে এবং দুর্গাপূজার মতো পবিত্র উৎসবকে ‘মদ-গাঁজা’র সঙ্গে যুক্ত করে বিভ্রান্তিকর বার্তা দিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের অত্যন্ত দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন বর্ণবাদী ও উসকানিমূলক বক্তব্য উগ্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর জন্য বিপজ্জনক অজুহাত তৈরি করবে। বিশেষত কথিত “তৌহিদি জনতা” গোষ্ঠী এসব মন্তব্যকে কাজে লাগিয়ে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানসমূহকে ভুয়া অজুহাতে অপবাদ দেওয়া, আক্রমণ বা বিঘ্ন ঘটানোর সুযোগ পেতে পারে। শোভাযাত্রা ও বিসর্জন অনুষ্ঠানেও ইচ্ছামতো বিধিনিষেধ আরোপ করে তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও চর্চার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন।

সংগঠনগুলোর দাবি, এ বক্তব্য জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তির (ICCPR) ২০(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতিগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক প্রচারণা যা বৈষম্য, শত্রুতা বা সহিংসতায় প্ররোচনা দেয়, তা নিষিদ্ধ করবে রাষ্ট্র।

বিবৃতিতে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়

১. অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার অবমাননাকর মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন এবং বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন।

২. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ক্ষমা না চাইলে তাঁকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।

৩. বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরণের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকবে এবং সারাদেশে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।

৪. ভবিষ্যতে কোনো ধর্মীয় উৎসব বা আচার-অনুষ্ঠানকে সরকারি বক্তব্যের মাধ্যমে অবমাননা বা সীমাবদ্ধ করা হবে না। একই সঙ্গে হিন্দুসহ সব ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ ও বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন এ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষায় বাধ্যবাধকতা পালনে তাগিদ দেন।

বিবৃতির শেষে প্রবাসী সংগঠনগুলো বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতি অবিচল সংহতি পুনর্ব্যক্ত করে বহুত্ববাদ, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানবিক মর্যাদার মূল্যবোধ রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

(পিআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test