E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কোম্পানি বিক্রির ২৪০ মিলিয়ন ডলার কর্মীদের বোনাস দিলেন মালিক  

২০২৫ ডিসেম্বর ২৭ ১৭:৫৪:০৮
কোম্পানি বিক্রির ২৪০ মিলিয়ন ডলার কর্মীদের বোনাস দিলেন মালিক  

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার এক কারখানা–প্রধান যেন বাস্তবের সান্তা ক্লজ তিনি তাঁর ৫৪০ জন পূর্ণকালীন কর্মীকে মোট ২৪০ মিলিয়ন ডলার বোনাস দিয়েছেন, প্রত্যেকের ভাগে পড়েছে ছয় অঙ্কের চেক। এই উদারতার পেছনে কারণ, তিনি কোম্পানিটি ১.৭ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেছেন।

গ্রাহাম ওয়াকার, ফাইবারবন্ডের সাবেক সিইও, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-কে জানান সম্ভাব্য ক্রেতা ইটন যদি বিক্রয়মূল্যের ১৫ শতাংশ কর্মীদের জন্য বরাদ্দ না করত, তবে তিনি বিক্রিতে রাজি হতেন না যদিও কর্মীদের কারও শেয়ার ছিল না।

এ বছরের শুরুতে ইটন যখন ফাইবারবন্ড অধিগ্রহণ করে, তখন এই শর্ত কার্যকর হয়। ফলে ৫৪০ জন কর্মী গড়ে প্রতি জন প্রায় ৪ লাখ ৪৩ হাজার ডলার করে বোনাস পাচ্ছেন যা পাঁচ বছরে কিস্তিতে দেওয়া হবে। দীর্ঘদিনের কর্মীরা এর চেয়েও বেশি পেয়েছেন।

৪৬ বছর বয়সী ওয়াকার বলেন, এই শর্ত ছিল অলোচনাহীন। জুনে কর্মীরা সিল করা খামে নিজেদের বোনাসের বিস্তারিত পান—কেউ আবেগে ভেঙে পড়েন, কেউ ভেবেছিলেন এটি রসিকতা; আবার কেউ বিস্ময়ে নীরব হয়ে যান।

১৯৯৫ সালে ঘণ্টায় ৫.৩৫ ডলার মজুরিতে কাজ শুরু করা ২৯ বছরের অভিজ্ঞ কর্মী লেসিয়া কী চিঠি খুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এখন ৫১ বছর বয়সী কী ফাইবারবন্ডের ২৫৪ একর ক্যাম্পাস জুড়ে একাধিক স্থাপনা তদারক করেন এবং ১৮ জনের দল পরিচালনা করেন। বোনাসের অর্থে তিনি ঋণমুক্ত হয়েছেন এবং কাছের এক শহরে একটি পোশাকের বুটিক খুলেছেন।

আগে আমরা মাসের শেষে মাস চালাতে হিমশিম খেতাম, কী বলেন। এখন আমি সত্যিই বাঁচতে পারছি।

আরেক কর্মী পুরো পরিবারকে ক্যানকুন ভ্রমণে নিয়ে গেছেন। অনেকে ক্রেডিট কার্ডের দেনা শোধ করেছেন, গাড়ি কিনেছেন, কলেজের টিউশন দিয়েছেন বা অবসর সঞ্চয় বাড়িয়েছেন।

দীর্ঘদিনের সহকারী ম্যানেজার হং ‘টিটি’ ব্ল্যাকওয়েল (৬৭)—ভিয়েতনাম থেকে আসা অভিবাসী কয়েক লাখ ডলার পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে অবসর নেন। তিনি স্বামীর জন্য একটি টয়োটা টাকোমা কিনেছেন এবং বাকিটা সঞ্চয় করেছেন। এখন আর চিন্তা নেই। তিনি বলেন আমার অবসর শান্ত।

কর কেটে প্রায় ১ লাখ ডলার কমে গেলেও, হাতে পাওয়া অর্থ ছিল জীবন বদলে দেওয়ার মতো।
প্রায় ১২ হাজার জনসংখ্যার শহর মাইন্ডেন-এ এই অর্থ দ্রুতই স্থানীয় অর্থনীতিতে ঢেউ তোলে। খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রি বেড়েছে; মানুষ দেনা শোধ, বাড়ি সংস্কার ও বহুদিনের কেনাকাটা সেরেছেন। শহরের মেয়র নিক কক্স বলেন, খরচের অঙ্ক নিয়ে শহরজুড়ে বেশ গুঞ্জন।

ফাইবারবন্ড প্রতিষ্ঠা করেন ওয়াকারের বাবা ক্লড ওয়াকার ১৯৮২ সালে মাত্র এক ডজন কর্মী নিয়ে বিদ্যুৎ ও টেলিকম সরঞ্জামের আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়ে। ১৯৯০–এর সেলুলার বুমে কোম্পানি ফুলে–ফেঁপে ওঠে; কিন্তু ১৯৯৮ সালে কারখানা পুড়ে গেলে প্রায় ধসে পড়ে। তবু উৎপাদন থেমে থাকলেও ওয়াকার পরিবার কর্মীদের বেতন চালু রাখে যা আজও কোম্পানির আনুগত্য–সংস্কৃতির ভিত্তি বলে কর্মীরা মানেন।

২০০০–এর শুরুতে ডট–কম ধস কোম্পানির গ্রাহক কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনে; কর্মীসংখ্যা ৯০০ থেকে ৩২০-এ নেমে যায়। পরে গ্রাহাম ও তাঁর ভাই দায়িত্ব নিয়ে সম্পদ বিক্রি ও ঋণ শোধ করে নতুন বাজার খোঁজেন।

পালাবদল আসে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে—ডেটা সেন্টারের জন্য মডুলার পাওয়ার এনক্লোজার তৈরিতে মোড় নেওয়ায়। মহামারির সময় ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের চাহিদা বেড়ে গেলে সেই বাজি সফল হয়। পাঁচ বছরে বিক্রি প্রায় ৪০০ শতাংশ বেড়ে যায়।

ওয়াকার প্রতিটি সম্ভাব্য ক্রেতাকে একই কথা বলেছেন—বিক্রয়মূল্যের ১৫ শতাংশ কর্মীদের জন্য। কেন ১৫ শতাংশ? তাঁর জবাব, “১০ শতাংশের চেয়েও বেশি।”

পরামর্শকেরা সতর্ক করেছিলেন, এই শর্তে চুক্তি জটিল হতে পারে বা বাদ পড়া সাবেক কর্মীরা মামলা করতে পারেন—তবু ওয়াকার অনড় থাকেন।

বোনাসগুলো রিটেনশন অ্যাওয়ার্ড হিসেবে সাজানো—পাঁচ বছরে বার্ষিক কিস্তিতে, যাতে অধিকাংশ কর্মী কোম্পানিতে থেকে পুরো অর্থ পান। ওয়াকার বলেন, বিক্রির পরও কাজ স্বাভাবিক রাখতে এই শর্তটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(আইএ/এসপি/ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test