E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

‘বাংলাদেশকে হিংস্রতার যে থাবা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে- এর শেষ কোথায় ?’ নিউইয়র্ক সমাবেশের প্রশ্ন

২০১৬ জুন ১৩ ১১:৪৬:৫৭
‘বাংলাদেশকে হিংস্রতার যে থাবা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে- এর শেষ কোথায় ?’ নিউইয়র্ক সমাবেশের প্রশ্ন

নিউইয়র্ক থেকে হাকীকুল ইসলাম খোকন: বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসী রোধে কঠোর পদক্ষেপ দাবিতে নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সমাবেশ।

‘বাংলাদেশকে হিংস্রতার যে থাবা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে- এর শেষ কোথায় ?’ নিউইয়র্ক সমাবেশের প্রশ্ন
বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ বন্ধে সরকারকে সত্যিকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ১১ জুন শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বেশ কটি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, বিদেশী নাগরিক, পীর, ইমাম ফকির, পুরোহিত, বৌদ্ধ ভিক্ষু, খ্রিস্টার ধর্মাবলম্বীদের হত্যার প্রতিবাদে’ অনুষ্ঠিত এ সমাবেশের স্লোগান ছিল, ‘স্টপ টেররিজম ইন বাংলাদেশ’, ‘সেইভ মাইনোরিটি’, ‘সেইভ ফ্রি-থিঙ্কার্স’, ‘সেইভ বাংলাদেশ’, ‘স্টপ টার্গেট কিলিংস’ ইত্যাদি। সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের তালিকা সম্বলিত একটি ঘোষণা পত্রও পাঠ করা হয় এ কর্মসূচি থেকে। দাবির সমর্থনে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে ২৬ জুন জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে আরেকটি বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় এ সমাবেশের আয়োজক সংগঠনের মধ্যে ছিল ইউএস কমিটি ফর সেক্যুলার এন্ড ডেমক্র্যাটিক বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক গণজাগরণ মঞ্চ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি রাইটস মুভমেন্ট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মৈত্রী ফাউন্ডেশন, সম্প্রীতি মঞ্চ, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট সেন্টার ইত্যাদি। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মুহম্মদউল্লাহ। সঞ্চালন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সেক্রেটারি স্বীকৃতি বডুয়া। সমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বাংলাদেশী মাইনোরিটি মুভমেন্টের শুভ রায়।

আগামী ২৬ জুন জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বেলা একটা থেকে অপরাহ্ন ৩টা পর্যন্ত একই দাবিতে আরেকটি সমাবেশ এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করেন আয়োজকদের অন্যতম শিতাংশু গুহ। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা শংকিত, এবং এমন নাজুক পরিস্থিতি অবসানের দায়িত্ব সরকারের।’ শিতাংশু বলেন, ‘হত্যাকান্ডের জন্যে সরকারী দল দায়ি করছে বিএনপি-জামাত জোটকে। অপরদিকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন যে, হত্যাকান্ডে আওয়ামী লীগই দায়ী। এভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে। আস্কারা পাচ্ছে ঘাতকরা।’ শিতাংশু বলেন, ‘দায়ী যারাই হউক, তাদের গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। আমরা সরকারের কাছে থেকে সে ভ’মিকা আশা করছি।’

সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘হত্যাযজ্ঞে লিপ্তদের ব্যাপারে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন। তাই আমরা আশা করছি শীঘ্রই সকল ঘাতক গ্রেফতার হবে এবং মানুষ স্বস্তি ফিরে পাবে।’ ‘জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী ধরতে যে অভিযান শুরু হয়েছে, তা যেন প্রহসনে পরিণত না হয়’-এ আহবান সরকারের প্রতি রাখেন মুহম্মদ উল্লাহ।
সর্বস্তরে প্রতিনিধিত্বকারি প্রবাসী নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো ছিলেন এডভোকেট মজিবুর রহমান, নব্যেন্দু দত্ত, টমাস দুলু রায়, মিনহাজ আহমেদ সাম্মু, মিথুন আহমেদ, লুৎফুন্নাহার লতা, জিএইচ আরজু, স্বীকৃতি বড়zয়া, শুভ রায়, গোপাল সান্যাল, সিবলি সাদিক সিবলু, তুর্য , প্রমুখ।

ইফতারের পর ক্ষুব্ধ প্রবাসীদের এ সমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘আমরা গভীর আতঙ্ক ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি-বাংলাদেশের মানচিত্রকে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত করা হচ্ছে। দেশে এখন একাত্তরের ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ধ্বংস, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে হত্যা, মুক্তবুদ্ধির দেশকে নিশ্চিহ্ন ও প্রগতীর চাকাকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যই একের পর এক ঘাতকরা হত্যার হোলি খেলছে। কিন্ত এসব হত্যাকান্ডের স্বরুপ উন্মোচন করতে সরকার ব্যর্থ বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। সরকারের ব্যর্থতা ঘাতকদের উৎসাহিত করছে। ফলে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।’

ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১০ জুন পর্যন্ত দেড় বছরে এ রকম হত্যাকান্ড ঘটেছে ৪৯টি। এর মধ্যে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী যেমন আছেন, তেমনি আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়। নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় জাপান ও ইতালির দুই নাগরিক, লেখক, প্রকাশক, ব্লগার, রাজনৈতিক কর্মী, পীর, ফকির, সাধু, পুরোহিত, বৌদ্ধ ভিক্ষু, খ্রিষ্টান ধর্মযাজক, শিয়া, লালনভক্ত, পীরের অনুসারী, সমকামীদের অধিকারকর্মী ও ধর্মান্তরিত মুসলমানও রয়েছেন।’

ঘোষণা পত্রে বলা হয়েছে, ‘আগাম ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাবনায় একটি আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঝিনাইদহে পুরোহিত হত্যার তিন দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটল। আর গত এক সপ্তাহের মধ্যে এটা চতুর্থ হত্যাকান্ড। সরকার জঙ্গিবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্বাসযোগ্য কিছু করতে পারেনি। একটি খুনের ঘটনা ঘটছে, গণমাধ্যমে তা নিয়ে হৈ চৈ হচ্ছে, পুলিশ প্রশাসন তথা সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ হচ্ছে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, রেহাই দেয়া হবে না- ইত্যাদি হুংকার শোনা যাচ্ছে কিন্তু খুন বন্ধ হচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুনিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। মানুষ কথায় নয়, কাজে আস্থ’া রাখতে চায়। মানুষ দেখতে চায়, জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের যৌথ অভিযান যেন বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরতে পরিণত না হয়।’
আরো বলা হয়েছে, ‘এসব বর্বর হত্যাকান্ড এখনই বন্ধ করা না গেলে দেশ খুব তাড়াতাড়ি সংখ্যালঘু শূন্য হয়ে পড়বে বলে যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে-তা দেশের জন্য শুভফল বয়ে আনবে না। দেশব্যাপী খুনের ঘটনায় আমরা ভীত। আশ্রমে থেকেও রক্ষা মিলছে না। নিরীহ, অসহায় মানুষদের কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের উপসানলয়ে গিয়ে প্রার্থনা,পূজার্চনা করতে ভয় পাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের মন্দির, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে,ফলে তারা দেশান্তর হতে বাধ্য হচ্ছে। মৃত্যুর আতঙ্ক ও শংকায় দিন-রাত বেঁচে থাকতে হচ্ছে দেশের মানুষদের। শোকে স্তব্ধ বাংলাদেশ-মানুষের জীবন। বাংলাদেশকে হিংস্রতার যে থাবা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে- এর শেষ কোথায় ? কেউ বলতে পারছে না। না সরকার না দেশের মানুষ। গুটি কয়েক দুর্বৃত্তের কাছে ১৬ কোটি মানুষ জিম্মি থাকতে পারে না। আমরা এর অবসান চাই।’
‘নিশ্চিন্ত-নিরাপদে একজন নাগররিক হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই। সবাই সচেষ্ট হলে এদের প্রতিরোধ করা সম্ভব। আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।’
ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আহ্বান, গুপ্তহত্যাকারীদের খুঁজে বের করুন। কারা পরিকল্পনা করছে, তা দেখুন। তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, ৩০ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে আমরা যে মানচিত্র, যে পতাকা অর্জন করেছি, সেই প্রিয় দেশে আমাদেরকে নিরাপদে,শান্তিতে বেচেঁ থাকতে দিন।’




(এইচআইকে/এস/জুন ১৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৫ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test