E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

এলো নতুন স্বাধীনতা

২০১৫ মে ১৬ ১৯:৪১:১৫
এলো নতুন স্বাধীনতা

ময়ূখ ইসলাম : ছিটমহলবাসী, যাদের পঞ্চগড়ের স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘আজার বস’। মানে রাজার অধীন। রাজা নেই, তবু তারা ছিলো রাজার অধীনেই। তাই হয়তো স্বাধীন বাংলায় বা ভারতে নাগরিক হিসেবে তারা ঠাই পায় নাই দীর্ঘ ৪১ বছর। তবে দীর্ঘ এই প্রতীক্ষার আজ অবসান হতে চলেছে। ভারতের রাজ্যসভায় ও লোকসভায় স্থলসীমান্ত বিল পাস হওয়ার খবর শুনে আনন্দে ভেসে যায় পঞ্চগড়ের তিন উপজেলার ৩৬ ছিটমহলের বাসিন্দারা। তাঁরা এখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।

পঞ্চগড় সীমান্তবর্তী এমনি একটি ছিটমহল গারাতি। স্বশরীরে উপস্থিত হয়েছিলাম এই ছিটের বাসিন্দাদের দৈন্য দশা থেকে মুক্তির গল্প শুনতে। এই ছিটের বাসিন্দা জনাব শামসুল আলম বলেন, “আমরা এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক, আমাদের যে মানবেতর জীবন ছিল তা থেকে এখন আমরা রেহাই পাবো”। এই এলাকার মানুষ নাগরিকের যে মৌলিক সুবিধাগুলো থেকে এই পর্যন্ত বঞ্চিত ছিলো, এখন সেই সুবিধা গুলো পাবার স্বপ্ন লালন করা শুরু করেছেন তারা। তবে ইব্রাহিম খলিল সরকারের মনে প্রশ্ন জাগে এই বিলের বাস্তব পরিণতি নিয়ে। তাই তাদের দাবি, শুধু কাগজে কলমে এই পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ না রেখে খুব দ্রুত যেন তাদের নাগরিক সুবিধা গুলো দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়। দীর্ঘ দিন ধরে ছিটের মানুষ লেখাপড়া, স্বাস্থ্যসেবা, চাকুরি, পানি ও বিদ্যুৎ সহ সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ জন্য দ্রুততর সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্নান সহ বিদ্যুৎ এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি তাদের।

ইব্রাহিম খলিল সরকার বলেন, ‘ছিটের মানুষ’ এই কথা বলে এত দিন সমাজ তাদের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। বিভিন্ন মৌলিক ও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই মানুষগুলো মর্যাদা নিয়ে জীবনযাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছিলেন। কয়েক দফায় উভয় দেশের সরকারপ্রধানদের স্মারকলিপি দিয়েছেন। এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে তাঁদের আন্দোলন-সংগ্রাম অবশেষে সফল হয়েছে বলে মনে করছেন ছিটমহলবাসীরা। গারাতি গামের শামসুল আলমের কাছ থেকে জানা জায়, ছিটের মানুষ এত দিন কৃষি নির্ভর জীবন যাপন করে আসছেন। মাঝে মাঝে স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে ছিটের অভ্যন্তরে জমি কেনাবেচাও হয়। শিক্ষা আর চাকুরী তাদের জন্য এক দুর্লভ বিষয়। এই গ্রামের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ দাবি করেন, অতি দ্রুত এই এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করে সরকার যেন তাদের যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নয়ন করেন। তিনি আরো বলেন, এই এলাকার একমাত্র অবলম্বন সৌরবিদ্যুৎ। তিনি এলাকায় অতি দ্রুত বিদ্যুৎ বিভাগের বৈদ্যুতিক লাইন আনয়নের দাবিও করেন।

এই গল্প যে শুধু পঞ্চগড় সিমান্তের গারাতি ছিটমহলবাসীর নয়, বরং দুই দেশের ১৬২ টি ছিটমহলবাসীরই তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।

(এস/পি/মে ১৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১১ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test