বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি লাঠিখেলা

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে শফিকুল ইসলাম মিন্টু : এক সময় গ্রামে গ্রামে আয়োজন হতো লাঠিখেলা। ঢাক-ঢোল আর বাঁশির তালে তালে চলতো লাঠির নানা কসরত। সে সময় গ্রামের পথে পথে চোখে পড়তো, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। কিন্তু সময়ের পথ ধরে আজ তা অতীতের ধূসর স্মৃতি।
নতুন নতুন নানা-বিনোদন মাধ্যমের ভিড়ে এখন খুব একটা চোখে পড়ে না তা। শহর তো বটেই, গ্রামেও আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না এই খেলা।
উৎসব-পার্বণ ছাড়া কালেভদ্রেই শুধু দেখা মেলে এটি। মহররম মাস এলেই ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শুরু হয় লাঠি খেলা। উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের অষ্টগড়, গড়পাড়া, মামুদ নগর, রসুলপুর, কৃষ্ণপুর, ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের বায়ড়াউড়া, পৌরসভার পাছেরকান্দা, অচিন্তপুর ইউনিয়নের খান্দার, চৈয়ারকান্দা গ্রামের লাঠিয়াল দল উপজেলা সদর সহ আশেপাশের বাজারগুলোতে লাঠিখেলা প্রদর্শন করে থাকে।
কিছু মানুষ অবশ্য এখনো হৃদয়ের গহীনে যতনে রেখেছেন গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য। ঢোল আর লাঠির তালে নাচানাচি, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টান টান উত্তেজনার একটি খেলার নাম লাঠিখেলা। রং করা বাঁশের লাঠিতে একজন অন্যজনকে কৃত্রিম আক্রমণ করে চলে।
লাঠির সাথে লাঠির ঠোকাঠুুকি চলে অবিরাম। মাঝে মাঝে হুংকার ছেড়ে আক্রমণ করে একে অন্যকে। তবে ক্ষতি হয় না কারো। এটা যে শুধু আনন্দ দেয়ার জন্যই খেলা। বাদ্যের তালে তালে আর দর্শকদের মূহর্মহ তালিতে এগিয়ে চলে লাঠিখেলা।
ইংরেজদের আগ্রাসন থেকে ভূ-সম্পত্তি ও রাজত্ব রক্ষায় সেই সময় থেকেই অনেক রাজা-বাদশা ও জমিদাররা গড়ে তোলেন লাঠিয়াল বাহিনী। প্রশিক্ষিত সেই লাঠিয়াল জওয়ানদের কৃতিত্ব ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে। পরবর্তীতে ডাকাতের হাত থেকে বাড়ির জানমাল রক্ষায় লাঠির কসরত রপ্ত করেন অনেকেই। যা আস্তে আস্তে জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়।
সে সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা হিসেবে লাঠিখেলার বেশ কদর সৃষ্টি হলেও দিনে দিনে তা বিলুপ্তির পথে।
কিন্তু গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলাটি এখনো বেশ জনপ্রিয়। লাঠি খেলা শুরু হলেই মজমা স্থানে মুহূর্তেই শত শত দর্শকের ভিড় জমে যায়।
লাঠিখেলার ইতিহাস :
লাঠি খেলা একটি ঐতিহ্যগত মার্শাল আর্ট যেটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কিছু জায়গায় চর্চা করা হত। মূলত মার্শাল আর্ট আর লাঠি এই দুইয়ের সংমিশ্রন ও এর মধ্যে ঢোলের অনুপ্রবেশই এটাকে খেলায় রূপান্তরিত করেছে।
লাঠি খেলা' অনুশীলন কারীকে 'লাঠিয়াল' বলা হয়। লাঠি খেলা লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা শেখায়। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা (পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বঙ্গ) নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করত। বিভন্ন চঞ্চলে জমি দখলের জন্য মানুষ এখনও লাঠি দিয়ে মারামারি করে। মহরম, ঈদ ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে এই খেলাটি তাদের পরাক্রম ও সাহস প্রদর্শনের জন্য খেলা হয়ে থাকে।
লাঠিখেলার নিয়ম কানুন ও সরঞ্জাম :
এই খেলার জন্য ব্যবহৃত লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা, এবং প্রায়ই তৈলাক্ত হয়। অত্যাশ্চর্য কৌশলের সঙ্গে প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকেরাই এই খেলায় অংশ নিতে পারে। কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষরাই লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানের সময় "লাঠি খেলা" এর প্রদর্শনী এখনও আছে। লাঠিখেলার আসরে লাঠির পাশাপাশি যন্ত্র হিসেবে ঢোলক, কর্নেট, ঝুমঝুমি, কাড়া ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় এবং সঙ্গীতের সাথে চুড়ি নৃত্য দেখানো হয়।
লাঠি খেলা এদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ভ্রাম্যমাণ পরিবেশনা শিল্প। গ্রামের সাধারণ মানুষেরা তাদের নৈমিত্তিক জীবনের উৎসব-বাংলা বর্ষ বরণ, বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি অনুষ্ঠান উপলক্ষে লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাধারণত কোনও লাঠিয়াল দলকে ভাড়া করে আনা হয়।
লাঠিখেলার ধরণ :
বিভিন্ন ধরনের লাঠিখেলা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- সড়কি খেলা, ফড়ে খেলা, ডাকাত খেলা, বানুটি খেলা, বাওই জাঁক (গ্রুপ যুদ্ধ), নরি বারী (লাঠি দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) খেলা এবং দাও খেলা (ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) খেলা ইত্যাদি।
(এসআইএম/এএস/অক্টোবর ২৩, ২০১৫)
পাঠকের মতামত:
- নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের আহবান
- সন্ধ্যায় জমে ওঠে কোটি টাকার পানের হাট
- ববিতে ভর্তি হতে না পারা শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিলো ছাত্রদল
- হাতিয়ায় ক্রীড়া ফাউন্ডেশনের লটারী ড্র অনুষ্ঠিত
- শ্যামনগরে কৃষকলীগ নেতা কাশেম হত্যা মামলার আসামীকে হাতুড়ি পেটা ও পায়ের রগ কেটে হত্যার চেষ্টা
- হাতিয়াতে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ আটক ৪, আগ্নেয়াস্ত্র, স্বর্ণ উদ্ধার
- ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩৮৬
- দায় স্বীকার করে সাবেক সিইসি নুরুল হুদার জবানবন্দি
- জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিএনপির সভা
- ‘নতুন দেশ গঠনের জন্য এবার রাজপথে নেমেছি’
- ভারতে কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ৩৪
- ইতালি প্রবাসীকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে স্বজন ও এলাকায়বাসীর বিক্ষোভ
- দুর্দান্ত নৈপুণ্যে আলো ছড়ালেন রইসুল, আয়ান ও বিত্ত
- আ.লীগকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের ফেসবুক স্ট্যাটাস
- ড. ইউনূসের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে যে আলাপ হয়েছে সিইসির
- মেট্রোরেল নির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজিমাত
- শ্যামনগরে সাপের কামড়ে ঘের মালিকের মৃত্যু
- সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর নারকীয় হামলা, চিহিৃত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার
- ‘দেশনায়ক তারেক রহমান পাবনা-৩ আসনে মনোনয়ন দিলে ইলেকশন করবো’
- গৌরনদীতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
- আগৈলঝাড়ায় জুয়েলারি দোকানে চুরি, পুলিশের ঘটনাস্থল পরিদর্শন
- আবদুল হামিদ মাহবুব'র একগুচ্ছ লিমেরিক
- পুঁজিবাজার: ধোঁয়ার আয়নায় স্বপ্নের ছাই
- ফেসবুক : যোগাযোগের মাধ্যম নাকি গুজব-হয়রানির প্ল্যাটফর্ম?
- আন্দোলনের জেরে ঈশ্বরদীতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম স্থগিত
- মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ২ গোলা পড়লো বাংলাদেশে
- এক মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধ দিনের কথা
- চিরনিদ্রায় শায়িত আহমেদ রুবেল
- দেশে ফেরার আকুতি সৌদিতে নির্যাতিত হবিগঞ্জের সাহেনার
- অবশেষে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ চ্যাম্পিয়ন
- মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন ধীতপুর
- সাতক্ষীরায় কেমিকেল মিশিয়ে ঢাকায় পাঠানোর সময় ৫ ক্যারেট আম জব্দ
- তামাক নয়, জীবনের পক্ষে দাঁড়ান
- কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস আজ
- ‘দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য অর্থনীতিকে প্রস্তুত করছে রাশিয়া’
- কুষ্টিয়ায় নারী-শিশুসহ ৩ জনকে হত্যার দায়ে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড
- ‘অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়’
- টাঙ্গাইলে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত
- ঝিনাইদহে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
- ঘাটাইলে নানা কর্মসূচির মধ্যে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত
- ‘আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এ দেশের বাস্তবতা বোঝে না’
- সফলতার পথ
- পেঁয়াজের মৌসুমে নাটকীয়ভাবে দাম বেড়ে দ্বিগুণ
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- সাংবাদিক আশফাকের বাসার গৃহকর্মীরা কেন বারবার লাফ দেয়?