E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শেবামেকে সুচিকিৎসা নিশ্চিতে কর্ম পরিকল্পনা পেশ

২০২৫ আগস্ট ২৭ ১৯:৫৭:৫৫
শেবামেকে সুচিকিৎসা নিশ্চিতে কর্ম পরিকল্পনা পেশ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবামেক) হাসপাতালে সর্ব সাধারণের জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে কর্ম পরিকল্পনা পেশ করেছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর।

বুধবার (২৭ আগস্ট) তিনি এক প্রেস বার্তার মাধ্যমে হাসপাতালে রোগী সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এসময় তার কার্যালয়ে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ চিকিৎসক, নার্সসহ সর্বস্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিচালক বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহসহ সর্ব সাধারণের জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু কার্যক্রম ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। হাসপাতালে রোগী সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তিন ধাপে কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিগত আট মাসে সর্ব সাধারণের জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু কার্যক্রম ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরিচালক আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে হাসপাতালে রোগী সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে যে সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে সমাপ্ত হবে সেগুলো হচ্ছে-কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা ১০টি থেকে বর্তমানে ২০টি মেশিনে উন্নীত করা হয়। এরমধ্যে দুইটি মেশিনে সি-ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালাইসিস করা হয়। আরো পাঁচটি মেশিন ক্রয় প্রক্রিয়াধীন। আউটডোর ও ইনডোরের প্রায় সকল রোগীর প্যাথলজি ও রেডিওলজি পরীক্ষা হাসপাতালেই করা হচ্ছে। সিটি স্ক্যান মেশিন পুনরায় চালু করা হয়েছে। বর্তমানে এন্ডোসকপি, কোলনস্কপি, ফাইব্রোস্ক্যান, ইভিএল, কিডনি বায়োপসি পরীক্ষা ও নেফ্রোলিথোটমিসহ কিডনি ও ইউরোলজির সবধরনের অপারেশন নিয়মিত হচ্ছে।

কার্ডিওলজি, রিউমাটোলজি, ইউরোলজি, ভাস্কুলার সার্জারি আউটডোর, এন্ড্রোক্রাইনোলজি, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, নিউরো সার্জারি, হেমাটোলজি ইনডোর চিকিৎসা চালু করা হয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইউনিট (লিভার, কিডনি, হরমোন ও ডায়াবেটিস, বক্ষব্যাধি, পরিপাক তন্ত্র, নিউরো, রিউমাটোলজি ও গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, হেমাটোলজি) চালু রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ন্যাশনাল ইলেকট্রো ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) থেকে সাত সদস্যর কারিগরি টিম হাসপাতালে ৯৫টি অকেজো মেশিন সচল করেছে।

অকেজো থেকে সচল হওয়া মেশিনগুলোর মধ্যে রয়েছে-ছয়টি অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন, ২৫টি সাকশন মেশিন, ১০টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর, পাঁচটি অটোক্লেভ, একটি সি-আর্ম মেশিন, দুইটি মনিটর, আটটি ওটি টেবিল, পাঁচটি ব্লাড ব্যাংক রেফ্রিজারেটর, ১০টি হাই ফ্লো নাসাল ক্যানুলা, পাঁচটি আইসিইউ বেড, ছয়টি ওটি লাইট, পাঁচটি ডেন্টাল ইউনিট, দুইটি ডায়াথার্মি মেশিন, চারটি ইসিজি মেশিন ও একটি এক্সরে মেশিন। আরো ২০টি মেশিন সচলের কার্যক্রম চলছে। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বর্ধিত সভায় রোগীদের অসন্তোষ্টের মূল জায়গা মেডিসিন বিভাগ মূল ভবনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। উক্ত স্থানান্তরের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

পরিচালক আরও জানান, ইতোমধ্যে ওই ভবনের নীচ তলায় মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনি বহির্বিভাগ স্থানান্তর করে চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে (সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে) ওই ভবনে সকল বহির্বিভাগ স্থানান্তর করে চালু করা হবে। ফলে পুরাতন ভবনটি পুরোপরি ইনডোর ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হবে। রোগীদের সুবিধার্থে নতুন আউটডোর ভবনে টিকেট কাউন্টার ও ডিসপেনসারি চালু করা হয়েছে। হাসপাতালে অতিরিক্ত দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণের জন্য দর্শনার্থী কার্ড প্রাথমিকভাবে চালু করা হয়েছে।

পরবর্তীতে পুরো হাসপাতাল দর্শনার্থী কার্ডের আওতায় আনা হচ্ছে। রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালে সকল স্বেচ্ছাসেবী ট্রলিম্যানকে বহিস্কার করা হয়েছে। নতুন ৪৬ জন জনবল প্রাপ্তির পর বর্তমানে ট্রলি ম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সরকারি স্টাফদের।

তিনি জানান, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট উৎখাত করা হয়েছে। বেসরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করতে পারবে না। রোগী নিয়ে আসলে তাদের নামিয়ে দিয়ে দ্রুত হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করতে হবে। হাসপাতাল অভ্যন্তরে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রোগী ধরতে পারবে না বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। এর বিপরীতে সরকারি সাতটি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করা হয়েছে জরুরি বিভাগের সামনে। পাশাপাশি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে জরুরি বিভাগে। হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পেতে (০১৭৮২-৭৫৫৫০০) নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

হাসপাতালর ল্যাব সম্প্রসারণসহ সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সকল কাউন্টারে অটোমেশন চালু করা হবে। হাসপাতালে রোগী বহনের সকল পুরাতন ট্রলি মেরামত ও নতুন করে আরো ১০টি ট্রলি প্রদান করা হয়েছে। সাতটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এই মনিটরিং টিম বিকেল ও রাতে হাসপাতালের বহিঃ ও আন্তঃবিভাগে মনিটরিং করেছেন। এ কাজে উচ্চপর্যায়ে আরো পাঁচটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ১০০টি সিলিং ফ্যান লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যা আরো বাড়ানো হবে। হাসপাতালের সিসিইউ ভবন সংস্কারের ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আধুনিক সিসিইউ ওয়ার্ড রোগী সেবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে যা সম্পূর্ণ করা হবে। গাইনি ওটি, বিশেষায়িত ওটি চালু করা হয়েছে। বিশেষায়িত ওটিতে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে নিউরো নিউরো সার্জারি অপারেশন করা হচ্ছে। হাসপাতালে নতুনভাবে আধুনিক মানের মানসিক বিভাগ চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের আউটডোর রোগী জন্য খাবার পানির একাধিক ফিলটার বসানো হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালের সামনে পুরাতন খাবার পানির দুইটি ট্যাংকি মেরামত করা হয়েছে।

হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ২২টি কেবিন আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। যাহার ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে কেবিনগুলো রোগী সেবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। হাসপাতালের সকল টয়লেট পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে অস্থায়ীভাবে ৯০ জন হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা নিয়মিতভাবে জারি থাকবে। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ২৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৭ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test