ডেমরা গণহত্যার রক্তাক্ত ইতিহাস
দেবেশ চন্দ্র সান্যাল
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে সারাদেশে অনেক গণ হত্যা হয়েছে। ইহার মধ্যে পাবনা জেলার সাঁথিয়া তানার বাউস গাড়ী ও রুপসী গ্রাম এবং ফরিদপুর থানার ডেমরা গ্রাম ও ইউনিয়ন এক যোগে পাকিস্তানি আর্মিরা গণ হত্যা করেছিল। এই গণ হত্যা টিকে ডেমরা (বাউস গাড়ী- রুপসী) গণহত্যা হিসেবে বলে থাকেন। এই গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন স্নেহলতা সান্যাল। তিনি এই গণহত্যায় স্বামী ও একজন আপন ভগ্নিপতি সহ ১০ জন নিকট আত্মীয় হারিয়েছেন। তিনি এই হণহত্যার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা হলো-১৯৭১ সালের ১৪ মে ( ১ জ্যৈষ্ঠ,১৩৭৮) শুক্রবার এই গণ হত্যাটি ঘটিয়েছে। এই গণহত্যার জন ডেমরা গ্রামের আসাদ ও অন্যান্য স্বাধীনতা বিরোধীরা বেড়া আর্মি ক্যাম্পে থেকে পাকিস্তানি সৈন্য নিয়ে এসে ছিল। তারা বেড়া পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্প থেকে লঞ্চে পাঁচ শতাধিক আর্মি নিয়ে এসেছিল। শুক্রবার ভোরে আযানের পরপর ডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে নদীর ঘাটে লঞ্চ ফিরিয়ে ওরা ব্রাশ ফায়ার করলো। গুলির শব্দে সবাই আতঙ্কিত হয়ে জীবন বাঁচাতে যার যার মত গুলির শব্দের বিপরীত দিকে বাইস গাড়ী ও রুপসী গ্রামের জঙ্গল ও পুকুরের দিকে ছটতে থাকলো। অনেকেই আশ্রয় নিল বাঁশ ঝাড়, জঙ্গল, মজাপুকুর ও অন্যান্য স্থানে। আমি আশ্রয় নিয়ে ছিলাম দক্ষিণ পাড়ার খালের মধ্যে।
আর্মিরা ডেমরা গ্রাম তিন দিকে ঘিরে ফেললো। সূর্যোদয়ের পর, দেখে দেখে পাখির মত মানুষ হত্যা করলো। লালু রায়ের বাড়িতে ঢুকে নাম ধরে ধরে দালালেরা ডেকে আনলো গোড়া রায় ও দাসু রায়কে। তাদের দুই ভাই কে উঠানের মধ্যেই দাড় করিয়ে লালু রায়ের সম্মুখে গুলি করে হত্যার দুই সদস্য কে করলো। দুপুর প্রায় ১২-০০ টা পর্যন্ত এই গণ হত্যা ঘটালো। পাকিস্তানি সৈন্যরা ডেমরা বাজারের কালী মূর্তি ব্রাশ ফায়ার করে ভেঙ্গেছে। আসাদ দালাল ও অন্যান্যরা বুঝিয়ে স্থানীয় কিছূ মুসলমান যুবক কে পাকিস্তানি সৈন্যদের হুকুম পালন কারী বানালো। মুসলমান যুবকদের দিয়ে ডেমরা বাজারের সকল হিন্দুর দোকান লুটরাত করালো। দোকান গুলিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল। এই গণহত্যায় বাউশ গাড়ী গ্রামের অধিবাসী পিতা বলরাম রায়, জ্যষ্ঠো রামজগন্নাথ রায় ও জ্যাষ্ঠাতো দাদা পাবনাদ এডরুক কোম্পানী লেবার ইনর্চাজ দিলীপ কুমার রায়কে হারিয়েছেন বেনু রায়। তিনি এই গণ হত্যার একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
এই গণহত্যার কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন- আমার পূর্ববর্তী মাসীমা যা বলছেন। তা সঠিক। পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের সহযোগিতা করা স্থানীয় লোকেরা আমাদের বড়ঘরে ও জ্যষ্ঠা মহাশয়ের বড় ঘরে পেট্রোল ঢেলে ও গান আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। পাকিস্তানি আর্মিরা আমার বাবাকে জীবন্ত হাত পা বেধে জ্বলন্ত বড় ঘরের আগুনে ফেলে নির্মম ভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। বাড়ির পাশের এক টি মজা পুকুর দেখিয়ে বললেন- ঐ নিচু মজাপুকুরের গা ঘেষে আমি, আমার মা ও বোন দাড়িয়ে ছিলাম। মাথা উচ্চু করলে ও খান থেকে সব দেখা যাচ্ছিল। আমাদের কিছুই করার ছিলনা। অমর চন্দ্র চক্রবর্তী ও অশোক চন্দ্র চক্রবর্তী ভাতৃদ্বয় এই গণ হত্যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। তাঁরা এই গণহত্যায় পিতা লালু চক্রবর্তী ও মেশো মহাশয় প্রবোধ কুমার মজুমদার (মোনা মজুমদার) সহ ১০ জন নিকট আত্মীয় হারিয়েছেন। তাঁদের বাড়ি উল্লাপাড়া থানার বামন গ্রাম নামক গ্রামে। তাঁরা জীবন বাঁচাতে বাবা সহ মেশো মহাশয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।
এই গণহত্যার কথা বলতে গিয়ে তাঁরা বলেন- “আমাদের মাসীমা যা বলেছেন। সব ঠিক আছে। অরুন কুমার পাল এই গণ হত্যার একজন প্রত্যক্ষ দর্শী। তাঁদের বাড়ি শাহজাদপুর থানা সদরস্থ মনিরামপুর বাজারে। তাঁরা অনেক ধনাঢ্য পরিবারের মানুষ। জীবন বাঁচাতে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে এই গ্রামে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন দেবেন্দ্র নাথ পাল। তিনি এই গণ হত্যায় তাঁর পিতা দেবেন্দ্র নাথ পালকে হারিয়েছেন। তাঁর বাবাকে ডেমরা খালের পাশে দাঁড় করিয়ে অণ্য কয়েক জনের সাথে গুলি করে পাকিস্তানি আর্মিরা এক সাথে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। এই গণ হত্যার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ডেমরা গ্রামের প্রফুল্ল হলদার। সে এই গণ হত্যায় তাঁর বাবাকে হারিয়েছেন।
এই গণহত্যার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন- আমার পিতার রক্তাক্ত প্রাণহীন লাশ পেয়ে ছিলাম অন্যান্য এক গাদা লাশের মধ্যে। জল পথ ছাড়া এই গ্রামে আসার আর তেমন কোন রাস্তা ছিল না। নিরাপদ ভেবে শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, বেড়া, কুচিয়া মারা ও অন্যান্য গ্রামের অনেক হিন্দু এই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা।
পাঠকের মতামত:
- 'মিত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা পুরো পাকবাহিনীকে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেন'
- এলজিইডির উন্নয়ন কাজে বদলে গেছে গ্রামীণ জনপদ
- যশোরে ২৫ কোটি টাকার শীতকালীন সবজির চারা বিক্রির লক্ষ্য
- হিলি বন্দর দিয়ে ফের পেঁয়াজ আমদানি শুরু, কমেছে দাম
- বালিয়াকান্দিতে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে চা-দোকানী গ্রেফতার
- মুক্তিপণের দাবিতে সুন্দরবনে কর্মরত থেকে ৭ জেলেকে অপহরণ
- তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বাগেরহাটে ভিক্ষক পরিবারকে টিনসেড ঘর উপহার
- দিনাজপুরে হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সেই শিশুটি স্থান পেলো এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে
- রাজবাড়ীতে আমন ধানের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশ কৃষক
- দরপত্র ছাড়া বিদ্যালয়ের টিনসেড ঘর বিক্রি, তদন্তে কমিটি
- যথাযোগ্য মর্যাদায় সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস পালিত
- সুন্দরবন থেকে ট্রলারসহ ৭ জেলে আটক
- সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময়
- কমিটি গঠনের ৬ দিনের মাথায় কোটালীপাড়ায় জামায়তের হিন্দু শাখার ৯ নেতাকর্মীর পদত্যাগ
- শীতের তীব্রতায় ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোশক কারিগরদের
- নগরকান্দায় ধর্মীয় অনুভূতি অবমাননার অভিযোগে প্রতিবাদ সমাবেশ
- ফরিদপুরে ডিবি পুলিশের হাতে ১ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ১
- ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল কানাডা-আলাস্কা সীমান্ত এলাকা
- কবিরহাটে রোহান দিবা-রাত্রি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত
- পাংশায় মুক্তিযোদ্ধাদের কববের জন্য নির্ধারিত স্থানের আগুন
- চলচ্চিত্র উৎসবের নারী নির্মাতা বিভাগে বিচারক আফসানা মিমি
- আমিরাতের লিগে অভিষেকে উজ্জ্বল মোস্তাফিজ
- ‘বিএনপি সবসময়ই প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী’
- নড়াইলে পুকুর পাড় থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার
- শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ
- বিবস্ত্র করে মারপিট, লজ্জায় কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা
- ভণ্ডামি আর নাটক থেকে মুক্তি চান আঁখি আলমগীর
- নরসিংদীতে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৫
- ভোলায় ১৩ জেলে নিয়ে ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ৮
- ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিন, এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবো’
- কক্সবাজারে পাহাড় ধসে শিশুসহ ৪ মৃত্যু
- বরাদ্দ সংকটে বরগুনার ৪৭৭ কি.মি. সড়ক, চরম দুর্ভোগে স্থানীয়রা
- আবদুল হামিদ মাহবুব'র একগুচ্ছ লিমেরিক
- বরগুনায় আওয়ামীলীগের ২৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা
- সিলেটে কমছে বন্যার পানি, দেখা মিলেছে রোদের
- শেখ হাসিনার সাথে মুঠোফোনে কথা বলায় গ্রেফতার আ.নেতা জাহাঙ্গীর
- পঞ্চগড়ে ভাষা সৈনিক সুলতান বইমেলায় নতুন তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
- মহম্মদপুরে শহীদ আবীর পাঠাগারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্থাপনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি
- বই পড়ার অভ্যাসে তলানিতে বাংলাদেশ, বছরে পড়ে ৩টিরও কম
- সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নাই
- একদিনে ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু
- 'নির্লজ্জ বেহায়া হতেই কী আমরা তোমাকে খুন করেছি কিংবা তোমাকে রক্ষা করিনি?'
- 'তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে'
- নোয়াখালীর বানভাসিদের পাশে শরীয়তপুরের শিক্ষার্থীরা
- চুয়াডাঙ্গায় দুই আলমসাধুর মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক নিহত
-1.gif)








