বেলকুচি থানা অপারেশন
দেবেশ চন্দ্র সান্যাল
বেলকুচি থানা অপারেশন মহান ১৯৭১ সাল। আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুুদ্ধের সাল। পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা অতর্কিত “অপারেশন সার্চলাইট” নৃশংসতার পরিকল্পনা করে বাঙালিদের ওপর আঘাত হানলো। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আন্দোলনের ধারা বাহিকতায় তদানীন্তন বাঙালিদের অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, শেষ বাণী ও বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানালেন। জাতির পিতার মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমিও জীবন পণ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলাম।
মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করার জন্য ভারত গেলাম। প্রশিক্ষণ নিলাম। ৭ নম্বর সেক্টর হেড কোয়ার্টার থেকে অস্ত্র নিলাম। বেলকুচি থানার তামাই গ্রামের সন্তান জনাব এম.এ মান্নান স্যারকে লিডার নিযুক্ত করে আমাদের কে একটি গেরিলা গ্রুপ করে দেওয়া হলো। আমরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আমাদের কার্য এলাকা সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানায় চলে এলাম। আমাদের কোন রান্নার হাড়ি পাতিল ছিলনা। আজ এ বাড়িতে কাল সে বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকি এবং খাওয়া দাওয়া করি। তখন দু’চার পিচ কমিটির লোক, রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও অন্যান্য স্বাধীনতা বিরোধীরা ছাড়া অধিকাংশ মানুষ ছিল স্বাধীণতার পক্ষে। একেক দিন একেক বাড়িতে যাই ও আশ্রয় নিয়ে থাকি। প্রতিবাতে কমান্ডার স্যার আমাদের গ্রুপের জন্য পাশওয়ার্ড নির্ধারণ করে দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন পাকিস্তানি সৈন্য ক্যাম্প, থানা বা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করার জন্য রেকি করে থাকি। দিনে রাতে আমাদের অবস্থান নিজেরা পালাক্রমে দুই ঘন্টা করে করে সেন্টি দিয়ে থাকি।
আমাদের হাতে অস্ত্র থাকলেও আমরা আতঙ্কে থাকি। কখন কোন স্বাধীনতা বিরোধী পার্শ্ববর্তী পাকিস্তানি হানাদার সৈণ্য ক্যাম্পে সংবাদ দিয়ে আমাদের ঘেড়াও করে আক্রমন করতে পারে। পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রধান টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগ নেতা/কর্মী ও এদেশের হিন্দুরা। রাজাকারেরা গ্রামে গঞ্জে পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে করে পথ চিনিয়ে নিয়ে আসতো। অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা/কর্মী, হিন্দুদের বাড়িঘর ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ কারীদের বাড়িঘর লুটতরাজ করাতো ও জ¦ালিয়ে দিত। পাকিস্তানি সৈন্যরা নির্যাতন ও অন্যান্য মানবতা বিরোধী নৃশংস কাজ করার জন্য পাকিস্তান থেকে কিছু যুবক কে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মিলেশিয়া বাহিনীতে ভর্তি করে নিয়ে এসেছিল। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় ২৫ মার্চ’৭১ কাল রাত থেকে আত্মসমর্পন এর দিন ১৬ ডিসেম্বর’৭১ পর্যন্ত সাড়া দেশ ব্যাপি জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, নিপিড়ন, ধর্ষণ, জোর করে ধর্মান্তর করণ সহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী কাজ করেছে। হানাদারেরা হিন্দুদের ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরার জন্য খুঁজতো। হানাদারেরা লোকদের কে জিজ্ঞেস করতো- “মালাউন কাহা হ্যায়, মুক্তি কাহা হ্যায়”। হানাদারেরা যুবকদের ধরলে লিঙ্গ দেখে হিন্দু মুসলমান নির্ণয় করতো। হিন্দু মুসলমান নির্ণয়ের জন্য বলতো- “কাপড়া তোল, চার কলেমা বাতাও” বেলকুচি থানা অপারেশন টি ছিল নিম্নরূপ:
বেলকুচি সিরাজগঞ্জ জেলার একটি উল্লেখযোগ্য থানা। অক্টোবর’৭১ মাসের শেষের দিকে আমরা এই থানা আক্রমণ করেছিলাম। এই থানা আক্রমণ যুদ্ধে নেতৃত্বে ছিলেন আমাদের গ্রুপ কমান্ডার জনাব এম.এ মান্নান স্যার। কমান্ডার স্যারের ও আরো ৩ জনের রেকিতে একযোগে বেলকুচি থানা ও বেলকুচি মুসলিমলীগ নেতা মোঃ আব্দুল মতিনের বাড়ি আক্রমন করলাম। সন্ধ্যায় বানিয়া গাতি গ্রামের এক বাড়ির শেল্টারে কমান্ডার স্যার বিস্তারিত ব্রিফ করলেন। কমান্ডার স্যার ঐ রাতের জন্য শাপলা ও গোলাপ পাসওয়াড নির্ধারণ করে দিলেন। আমাদের দুই গ্রুপে ভাগ করে দিলেন। সিদ্ধান্ত হলো কমান্ডার স্যারের নেতৃত্বে বড় গ্রুপটি থানা আক্রমন করবে। অন্য গ্রুপটি রবীন্দ্র নাথ বাগ্চীর নেতৃত্বে মতিন সাহেবের বাড়ি আক্রমন করে মতিন সাহেবকে ধরে আনবে। আমি কমান্ডার স্যারের গ্রুপে থেকে থানা আক্রমন যুদ্ধে অংশ নিলাম। রাত ৯ টায় বানিয়া গাতি থেকে যাত্রা করলাম। থানার কাছে গিয়ে দু গ্রুপ টার্গের উদ্দেশ্যে ভাগ হলাম। নির্দিষ্ট সময়ে রাত ১২টায় একযোগে আক্রমনের সিদ্ধান্ত।
পরিকল্পনা মোতাবেক রাত ১১.৫৫ মিনিট থানার পশ্চিম পাশ দিয়ে স্ক্রোলিং করে থানার সামনে যেতেই সেন্ট্রি দেখে ফেললো। হুইসেল বাঁজিয়ে থানার সবাইকে জানিয়ে দিয়ে আমাদের কে লক্ষ্য করে গুলি করলো। আমাদের কমান্ডার স্যার কমান্ড করে ফায়ার ওপেন করলেন। আমরা সবাই একযোগে গুলি করলাম। প্রায় এক ঘণ্টা ব্যাপি গুলি ও পালটা গুলি চললো। ভয়া বহ যুদ্ধ। আমার মাথায় হেল মেট। আমি থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালাচ্ছি। দুইটি গুলি এসে আমার হেলমেটে লাগলো। আমার ডান পার্শে^ আমার কমান্ডার স্যার। হয় বিজয় আর না হয় মৃত্যু ছাড়া কোন পথ নাই। বৃষ্টির মত গুলি ও পালটা গুলি চলেচ্ছে। যুদ্ধের সময়ে এক সময়ে কমান্ডার স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- “দেবেশ, মাথা তুলো না, গুলি চালিয়ে যাও”। আমাদের বৃষ্টির মতো গুলিতে থানার বিহারী পুলিশ ও রাজাকার থানার পিছনদিক দিয়ে পালিয়ে সোহাগপুর যমুনা নদীতে থাকা একটি লঞ্চে চড়ে আমাদের রেঞ্জের বাইরে যমুনার মধ্যে চলে গেল। থানার সেন্ট্রি গুলি করা বন্ধ করে উচ্চ স্বরে সারেন্ডার,সারেন্ডার বলে দুই হাত উপরে তুলে আত্মসমর্পণ করলো।
আমরা থানার ভিতরে ঢুকে পড়লাম। আমাদের গ্রুপে দৌলতপুর গ্রামের মো: শামসুল হক রাজাকার দুই জন কে পিট মোরা করে বেঁধে বসিয়ে রাখল। আমরা থানার মাল খানা থেকে সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিলাম। থানার দু’জন রাজাকারকে জ্যান্ত ধরে নিয়ে এলাম। ভোর হয়ে গেল। মতিন সাহেবের বাড়ি আক্রমন করা দলটিও এলো। মতিন সাহেব পালিয়ে গেছে। তাকে ধরা সম্ভব হয় নাই। থানার আশেপাশের লোকজন দোকান ও বাড়িতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিল। বিজয়ী হয়ে কিছু সময় বিজয় উল্লাস করলাম তারপর চলে এলাম বেড়া খারুয়া গ্রামে। রাজাকাররা যাতে আমাদের শেল্টার চিনতে না পারে সেই জন্য তাদের চোখ বেঁধে শেল্টারে ঢুকানো হলো। পরদিন সিরাজগঞ্জ থেকে শতাধিক পাকি হানাদার সৈন্য ও রাজাকার এসে থানার আশে পাশে আগুন দিয়েছিল এবং মানুষদের নির্যাতন করেছিল।বেলকুচি থানা আক্রমণ যুদ্ধে আমরা ২ জন রাজাকার কে ধরে এনেছিলাম। রাজাকার২ জন কে চোখ বেঁধে আমাদের শেল্টারে আলাদা রুমে রেখে ছিলেন।
আমি কমান্ডার স্যারের অনুমতি নিয়ে ওদের সাথে কথা বার্তা বললাম। তাদেরকে রাজাকার হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম ও শুনলাম। ওদের সাথে জিজ্ঞাসা বাদে মনে হলো ওরা সহজ সরল ও অভাবী মানুষ। ওদের বাড়িতে স্ত্রী ও পুত্র কন্যা আছে। পীচ কমিটির লোকদের কথায় বিশ্বাস করে ওরা রাজাকার হয়েছে। ওরা মনে করে ছিল এটা একটা চাকুরী। উপার্জন করে সংসার পরিচালনার জন্য ওরা রাজাকার হয়েছে। তারা বলল- “আমরা কাউকে কোনো অত্যাচার করি নাই। কোনো বাড়িঘর লুটতরাজ করি নাই। পাকিস্তানি হানাদের নিয়ে গিয়ে কোনো গন হত্যা করি নাই। কোনো বাড়িতে আগুন দেই নাই...”। তাদের কথায় আমার মায়া হলো। আমি তাদের চোখ বাঁধা খুলে দিলাম। তাদের কে বিভিন্ন ভাবে বুঝালাম। প্রতিজ্ঞা করালাম তারা আর রাজাকারে যাবে না। কলা বললাম-আমাদের কমান্ডার স্যারের সাথে। আমাদের কমান্ডার স্যার খুব ভালো মানুষ। আমি ছোট মানুষ হওয়াতে স্যার আমাকে সবচেয়ে ভালোবাসতেন। রাত্রিতে শেল্টার পরিবর্তনের সময় কমান্ডার স্যারে কে অনুরোধ করে রাজাকার দুই জনকে ছেড়ে দিয়ে ছিলাম।
লেখক:বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ব্যাংকার।
পাঠকের মতামত:
- ‘নারীকে কামনার বস্তু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে’
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
- ‘হাসিনার নির্দেশেই আন্দোলনে মারণাস্ত্রের ব্যবহার হয়’
- ‘আ.লীগ দেশের জন্য রাজনীতি না করে ভারতের তাবেদারি করেছে’
- শ্যামনগর বিএনপি’র একাংশের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
- কুষ্টিয়ায় জিকে খালে মিলল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ
- প্লট জালিয়াতি, শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু
- ‘আমরা এমন জাতি নিজেদের সন্তানদেরও পুড়িয়ে মারি’
- ‘শেখ হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না’
- ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৪ জন
- নিজেকে বাঁচাতে মাকে দিয়ে বাদির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা সন্ধিগ্ধ আসামী রফিকুলের!
- জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- আরবি লেখা শেখার ছলে ঘরে নিয়ে শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, ধর্ষক গ্রেফতার
- সাত উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম ব্যাচের 'শিক্ষা সমাপনী
- হৃদরোগে আক্রান্ত জামায়াত আমির, বাইপাস সার্জারির পরামর্শ
- ‘৫ আগস্ট ঘিরে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই’
- ‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে ফ্যাসিস্ট মাথাচাড়া দিতে পারে’
- শ্রীনগরে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে চলছে স্বাস্থ্য সেবা
- হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা
- ‘গাজীপুরে আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে’
- ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৮৬ জন
- ১০২ এসিল্যান্ড প্রত্যাহার
- জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি ঐক্য পরিষদের
- ‘তিন মাসে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন হয়েছে, এক বছরেও না হওয়ার কারণ দেখছিনা’
- পাংশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- শ্যামনগর বিএনপি’র একাংশের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
- রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে
- মহুয়া বনে
- সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রতিবাদে শেরপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- রামগঞ্জে ইমতিয়াজ ও রায়পুরে অধ্যক্ষ মামুন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত