মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন ধীতপুর
নিভা রানী সান্যাল
মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর ২০২৪ চলছে। বিজয়ের মাস উপলক্ষে মহান মুক্তি যুদ্ধের কথা জানতে চাই কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যালের কাছে। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নাধীন রতন কান্দি গ্রামে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ৪টি ভয়াবহ গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। তাঁদের গ্রুপের শেষ যুদ্ধটিছিল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার (তদানীন্তন থানার) সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর নামক গ্রাম দিয়ে যাওয়া ওয়াপদা বাঁধের যুদ্ধ। এই যুদ্ধটি ধীতপুর যুদ্ধ নামে ইতিহাসে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ধীতপুর যুদ্ধের অদম্য সাহসী কিশোর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যাল।
তাঁর এই যুদ্ধের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন -“১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য, মিলিশিয়া ও রাজাকারদের বিরুদ্ধের এই যুদ্ধটি হয়েছিল। তখন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দাড়প্রান্তে। আমরা প্রতি ক্ষনে ভাবছি পরবর্তী সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। ২১ নভেম্বর মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী গঠন করা হলো। ৪ ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন রণাঙ্গনে যৌথ বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ৬ ডিসেম্বর প্রথমে ভূটান ও পরে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সারাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশ ও বিদেশে পালিয়ে যাওয়া শুরু করেছে। রাজাকারেরা বিভিন্ন ক্যাম্প ছেড়ে অস্ত্র সহ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পন করছে। যারা হিন্দুদের মালামাল লুট করে নিয়েছিল তারা লুটের মাল মালিক কে ফেরত দিয়ে মিল করছে। স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ মানুষ পরস্পর মিল করছে।
আমাদের গ্রামের একমাত্র রাজাকার ছিল বাইনা রাজাকার। সে করশালিকা রাজাকার ক্যাম্পে ভর্তি হয়েছিল। সে আমার খোঁজ পেয়ে তার সাথী আর কয়েক জন রাজাকার কে সাথে নিয়ে এসেছে আত্মসর্মপ করার পরামর্শ নিতে। ১২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যমুনা নদী পাড় হয়ে এক প্লাটুন পাকিস্তানি সৈন্য ও মিলেশিয়ার মালিপাড়া রাজাকার ক্যাম্পে এসেছে। মালিপাড়া ক্যাম্প থেকে পথ চিনানোর জন্য দুইজন রাজাকার কে সাথে নিয়েছে। ওয়াপদা বাঁধ ধরে পালিয়ে যাচ্ছে। ১২ ডিসেম্বর আমাদের গ্রুপটি ছিল সৈয়দপুর নামক গ্রামে। ১৩ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানি সৈন্যদের পালানোর খবর পেলাম। কৈজুরী গ্রাম থেকে আমরা পাকিস্তানি সৈন্যদের পিছু নিলাম। তখন আমাদের কমান্ডার ছিলেন রবীন্দ্র নাথ বাগর্চী। কমান্ডারের নির্দেশ ছিল, পাকিস্তানি সৈন্যরা পালিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাদের লোকজনদের কোন ক্ষতি না করলে। আমরা ওদের কে আক্রমণ করবো না। পাকিস্তানি সৈন্যরা ওয়াপদা বাঁধ ধরে চলেছে। আমরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে গোপন পথে ওদেরকে ফলো করে চলেছি। পাকিস্তানি সৈন্যরা ছিল ক্ষুধার্ত। ওরা ভীষন ক্রোধি। ধীতপুর গ্রামের কাছে গিয়ে ওরা আমাদের কে দেখে ফেললো। ওরা আমাদের দিকে অস্ত্র উচিয়ে ধরলো।
আমরা জাম্প করে ওয়াপদা বাঁধের পশ্চিম পাশে পজিশন নিলাম। ওরাও জাম্প করে বাঁধের পূর্ব পাশে পজিশন নিল। শুরু হলো গুলি ও পাল্টা গুলি। পাকিস্তানি সৈন্যরা ছিল পেশাদার, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত। ওরা বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকলো। কি ভয়াবহ যুদ্ধ। মাথার ওপর দিয়ে চো-চো করে গুলি যাচ্ছে। এ যুদ্ধে পরাজিত হলে সবাইকে ওরা নৃশংস ভাবে হত্যা করবে। আমাদের গ্রুপ কমান্ডার রবীন্দ্র নাথ বাগচী। তিনি এল.এম.জি চালাচ্ছিলেন। তাঁর ডান পাশে ছিল আমার অবস্থান। আমি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল চালাচ্ছিলাম। আমাদের যুদ্ধের সংবাদ শুনে শাহজাদপুরের কাদাই বাদলা গ্রামের মো: সিরাজুল ইসলাম এর গ্রুপ, উল্টাভাব গ্রামের জনাব মো: আব্দুল হাই এর গ্রুপ ও অন্যান্য গ্রুপ। বেড়া থানার এস.এম. আমির হোসেন এর গ্রুপ, ঘাটাবাড়ির জনাব মো: বজলুল করিম দুলাল এর গ্রুপ।
বেলকুচি ও চৌহালী থানার অন্যান্য গ্রুপ এসে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। গোলা গুলির এক পর্যায়ে আমাদের পক্ষের বেড়ার এস.এম. আমির হোসেনের গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা বৃশালিকা গ্রামের অধিবাসী জনাব মো: আব্দুল খালেক ও ছেচানিয়া গ্রামের অধিবাসী মো: আমজাদ হোসেন গুলি বৃদ্ধি হলেন। দুইটা গুলি এসে আমার হেলমেটে লাগলো। আমার পাশেই গুরুতর আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা দুইজন যন্ত্রনায় চিৎকার করছেন। আমাদের অন্যান্যরা কেহ কেহ তাদের যন্ত্রনা লাঘবের চেষ্টা করছেন। যুদ্ধও বন্ধ করা যাবে না। যুদ্ধ বন্ধ করলে পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের ধরে ফেলবে। আমি ও অন্যান্যরা সবাই গুলি চালিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে অন্ধকার হয়ে এলো। পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি করা প্রায় বন্ধ করলো। আমরাও গুলি করা বন্ধ করলাম। সারারাত আমরা না খেয়ে পজিশন অবস্থায় থাকলাম। রাতে রাজাকার দুজন মাঝে মাঝে দুই একটা কভারিং ফায়ার করছে। তাদের গুলির কারণে আমরাও ২/১ টা করে গুলি করছি। ভোরে আমাদের কমান্ডার ও অন্যরা রাজাকার দুজন কে সারেন্ডার করালেন। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে নেওয়া হলো। রাজাকার দুই জনের কাছ থেকে জানা গেল।
রাত ১২ টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্রোলিং করে পিছিয়ে এসে রাজাকার দুই জন কে কভারিং ফায়ারের নির্দেশ দিয়ে ওয়াপদা বাঁধ ধরে পালিয়ে গেছে। পরে জানা গেল পাকিস্তানি সৈন্যরা নৌকায় বেড়া নদী পার হয়ে নগর বাড়ি হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালিয়ে গেছে। সকালে দেখা গেল ওয়াপদা বাঁধের উপর দুই জন সাধারণ মানুষ যুদ্ধের সময়ে গুলি লেগে মারা গেছেন। আমাদের পক্ষের বেশ কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। এস.এম আমির হোসেন ভাইয়ের গ্রুপের গুরুতর আহত দুই জন কে বেড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। পরে জানা গেছে এস.এম. আমির হোসেন ভাইয়ের গ্রুপের জনাব মো: আব্দুল খালেক ও মো: আমজাদ হোসেন দুই জনই শহিদ হয়েছেন। ধীতপুর যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমাদের গ্রুপ জামিরতা হাই স্কুলে ক্যাম্প করে আশ্রয় নিলাম। ঐ দিনই অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর শাহজাদপুর থানা হানাদার মুক্ত হলো।
লেখক : সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার রতন কান্দি গ্রামের অধিবাসী।
পাঠকের মতামত:
- স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সভা
- গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল
- বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদের বাসা থেকে সোয়া ২ কোটি টাকার চেক উদ্ধার
- ইসরায়েল পদক্ষেপ না নিলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য
- রাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প, দেশে দেশে সুনামি সতর্কতা
- গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় মামলা
- ফরিদপুরে রাতের অন্ধকারে একটি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ভাঙচুর
- ‘শুল্ক কমানোর সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ’
- বৃহস্পতিবার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
- ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জরুরি সংস্কার চায় বিএনপি’
- ‘জুলাই সনদের খসড়া বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক’
- ‘সরকার অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে’
- লংগদুতে সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত
- সাতক্ষীরা সদরের ডিবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু
- সাতক্ষীরায় শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি সভা অনুষ্ঠিত
- ফরিদপুরে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার, ইয়াবা উদ্ধার
- সিলেটে ডঃ আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের সভা অনুষ্ঠিত হয়
- কুড়িগ্রামে জুলাই সংগঠক জোবায়ের হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
- এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের কঠিন প্রতিপক্ষ
- নতুন ভোটার হচ্ছেন ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার
- আগস্টের শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা
- শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট, র্যাংকিংয়ে টানা উন্নতি
- বোয়ালমারীতে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- পাংশায় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
- সালথায় ৬০টি চায়না দুয়ারী জাল জব্দ, এক জেলের জরিমানা
- শীত আসতেই মুখ-হাত-পায়ে চামড়া উঠছে, কী করবেন?
- বেলকুচিতে জনমত জরিপে এগিয়ে বদিউজ্জামানের মোটরসাইকেল
- কমলনগরে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আটক
- হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় মামলা
- রাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প, দেশে দেশে সুনামি সতর্কতা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা