মুক্তিযুদ্ধের ধীতপুর যুদ্ধ কথা
দেবেশ চন্দ্র সান্যাল
১৯৭১ সাল। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সাল। ২৫ মার্চ’৭১ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের আকস্মিক নৃংশতম আক্রমণে শুরু হয় বাঙালিদের উপর জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, নিপিড়ন,ধর্ষণ ও অন্যান্য মানবতা বিরোধী নৃংশতম কার্যক্রম। বাঙালি সৈন্য, পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য বাহিনী প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। বাঙালিদের প্রতিরোধ যুদ্ধের পর ২৬ মার্চ’ ৭১ থেকে শুরু হয় হানাদার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের সকল বাঙালি সৈন্য, আনসার, অন্যান্য বাহিনী, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও অন্যান্য নারী-পুরুষ অংশ গ্রহণ করে সশস্ত্র মহান মুক্তিযুদ্ধে। আমি ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলাম। ১২ ডিসেম্বর’ ৭১ জামিরতা গ্রামের অধিবাসী বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচীর নিয়ন্ত্রনাধীন আমাদের গ্রুপটি ছিল সৈয়দপুর গ্রামে। ১৩ ডিসেম্বর’ ৭১ ছিল আমাদের গ্রুপের শেষ রণাঙ্গনের যুদ্ধ। স্থানটি ছিল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার সনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর নামক গ্রাম।
এই যুদ্ধে নেতৃত্বে ছিলেন বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগ্চী। ১৩ ডিসেম্বর’৭১ সংবাদ পেলাম পাকি হানাদারেরা কৈজুরী হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের যুদ্ধে পাকি হানাদারেরা পরাজিত হয়ে লঞ্চে যমুনা নদী পাড় হয়ে মালিপাড়া ক্যাম্পে এসেছে। মালিপাড়া ক্যাম্প থেকে রাস্তা চিনানোর জন্য দুই জন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়েছে। আমাদের শেল্টারে ২/৩ জন যুবক দৌড়ায়ে হাপিয়ে এসে বললো- “পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা পালিয়ে যাচ্ছে, আপনারা শালাদের ধরুন।” আমরা পাকি হানাদারদের অনুসরন করার জন্য ওদের পিছু নিলাম। সংবাদ পেয়ে শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান কারি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ গুলোও আক্রমন করার জন্য এগিয়ে এলো। ওয়াপদা বাধ ধরে ওরা অগ্রসর হতে লাগলো। আমরা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ওদের পিছু পিছু হাটতে থাকলাম। ওরা ভীষণ ক্রোধী। ধীতপুর নামক স্থানে গিয়ে ওরা আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করে গুলি করলো। আমরা জাম্প করে ওয়াপদা বাধের পশ্চিম দিকে পজিশন নিলাম। ওদের উপর গুলি ছুড়তে শুরু করলাম। ওরা ওয়াপদা বাধের পূর্ব পার্শ্বে পজিশন নিল। প্রায় এক ঘণ্টার গুলিপাল্টা গুলি চলতে থাকলো।
গুলির শব্দে শাহজাদপুর উপজেলার মো: সিরাজুল ইসলাম এর গ্রুপ ও বেড়া উপজেলার এস আমির হোসেনের গ্রুপ ও অন্যান্য গ্রুপ আমাদের সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে এলো। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। অন্ধকার হয়ে এলো হানাদারেরা গুলি করা বন্ধ করলো। আমরা ও অন্ধকারে প্রায় গুলি করা বন্ধ করলাম। সারা রাত আমরা না খেয়ে পজিশন অবস্থায় ছিলাম। আমাদের গ্রুপটি ছিল বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচীর কমান্ডানাধীন।যুদ্ধটি ছিল ভীষন ভয়াবহ সম্মূখ যুদ্ধ। তথা কথিত হিংস্র পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ। হয় যুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে অন্যথায় সবার জীবন যাবে। আমাদের গ্রুপের ডান দিকেই ছিল বেড়ার এস এম আমির হোসেনের গ্রুপ। তুমুলযুদ্ধ। দুটি গুলি এসে আমার হেলমেটে লাগলো। এস এম আমির হোসেন সাহেবের গ্রুপে মো: আব্দুল খালেক ও মোঃ আমজাদ হোসেন গুলি বিদ্ধ হলেন। আমাদের পাশেই দুই জনই যন্ত্রনায় কাতারা ছিলেন।
আমাদের সবার মন খারাপ। পাশের কয়েক জন তাঁদের সেবা করছেন। আমাদের কোন অবস্থাতেই গুলি করা বন্ধ করা যাবেনা। আমরা সবাই গুলি চালিয়ে যাচ্ছি। আমি থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে গুলি চালাচ্ছি। দুইটি হ্যান্ড গ্রেনেড চার্জ করলাম। এর মধ্যে সন্ধ্যা ও অন্ধকার নেমে এলো। রাতে ধীতপুর বিশ্রাম গারের কাছ থেকে মাঝে মাঝে ২/১ টা করে গুলি আসছিল। ওদের গুলির প্রেক্ষিতে আমরাও ২/১ টা করে গুলি করছিলাম। ভোরে ফর্সা হলে আমাদের কমান্ডার রবীন্দ্র নাথ বাগ্চী ও বেড়ার কমান্ডার জনাব এস.এম আমির হোসেন ও অন্যান্যরা ক্রোলিং করে ধীতপুর রেষ্ট হাউসে এগিয়ে গেলেন। রেষ্ট হাইসে গিয়ে দেখা গেল। দুজন রাজাকার সারা রাত কভারিং ফায়ার করেছে। কমান্ড করে রাজাকার দু জন কে স্যারেন্ডার করালেন। তারা দুই জন আত্মসমর্পণ করলো। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে নেওয়া হলো। তাদের কাছ থেকে জানা গেল রাত ১১ টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্যেরা ক্রোলিং করে নিরাপদ দুরত্বে এসে হেঁটে বেড়া নদী পার হয়ে ঢাকা যাবার উদ্দেশ্যে পালিয়েছে।
পরে জানা গেল। পাকি হানাদারেরা বেড়া ঘাটে গিয়ে ভেড়া কোলা গ্রামের হলদারদের নৌকায় নদী পাড় হয়ে নগর বাড়ি ঘাট হয়ে ঢাকা যাবার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ধীতপুরের যুদ্ধে বেড়ার এস. এম.আমির হোসেনের গ্রæপের বৃশালিকা গ্রামের অধিবাসী বেড়া বিবি হাই স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র জনাব মোঃ আব্দুল খালেক ও ছেচানিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেন গুলি বিদ্ধ হন এবং পরে শহীদ হয়েছেন। আমাদের অন্যান্য গ্রæপের ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। স্থানীয় দুজন পথচারী গোলা গুলির সময়ে গুলি লেগে ওয়াপদা বাধের উপর মারা গিয়েছেন। ধীতপুর যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমরা জামিরতা হাই স্কুলে ক্যাম্প করে অবস্থান নিয়ে ছিলাম। ১৪ ডিসেম্বর’ ৭১ শাহজাদপুর থানাহানাদার মুক্ত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর’ ৭১ তিরানব্বই হাজারাধিক পাকিস্তানি সৈন্যের পক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে) পাকিস্তানি সৈন্য প্রধান মাথা নিচু করে আত্মসমর্পন করে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন হয়।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ব্যাংকার।
পাঠকের মতামত:
- ‘শেখ হাসিনার রায় ঘিরে নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা রুখে দিতে হবে’
- দিনাজপুর-২ আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে উত্তাল
- সালথায় ইউপি সদস্য আবুল হাসান গ্রেপ্তার
- নড়াইলে দুর্বৃত্তের হামলায় ব্যবসায়ী জখম, অভিযুক্ত গ্রেফতার
- নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা
- ঢাকা-গোপালগঞ্জসহ চার জেলায় নিরাপত্তার দায়িত্বে বিজিবি
- ‘ভোটে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো শক্তি আ. লীগের নেই’
- যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেল ৭২ জন
- ‘কোনো গোষ্ঠী বিশেষের কাছে যেন আমাদের অর্থনীতি জিম্মি না থাকে’
- কোক স্টুডিও বাংলায় গাইবেন রুনা লায়লা
- কাশিয়ানীতে গভীর রাতে গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা
- নতুন অধ্যায়ে ফারিণ, চাইলেন দোয়া
- গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চার মামলায় আসামি ৯১০
- চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে বিএনপি নেতার সংবাদ সম্মেলন
- ‘গোল খাওয়া কোচিংয়ের সমস্যা না’
- আরও ১৫ ফিলিস্তিনির মরদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল
- লিবিয়ার উপকূলে নৌকা ডুবে ৪ বাংলাদেশির মৃত্যু
- ‘শেখ হাসিনার মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে’
- ‘জামায়াতকে মানুষ আর বিশ্বাস করে না, ভোটও দেবে না’
- কমলো সোনার দাম ভরি ২ লাখ ৮ হাজার ২৭২ টাকা
- চাটমোহরে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিল
- প্রকৃতির উপহার বেতফল সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যবর্ধক
- ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ জাবিতে রাত ১০টার পর যেকোনো অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ
- পাকবাহিনীর সঙ্গে আজমিরীগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়
- খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৫৬০ মেঃটন খাদ্যশস্য কালোবাজারে, দুই কোটি টাকা খাদ্য কর্মকর্তার পেটে
- নিমে নিরাময় হয় যে সব রোগের
- ‘ঐ চেয়ার নির্লজ্জদের জন্যই’
- নিরাপদ সমুদ্র পর্যটনের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- হাজারো মানুষের তারুণ্যের জাগরণ ‘অনন্যা’
- ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিন, এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবো’
- উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন
- আবারো রগ কেটে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছে : মোমিন মেহেদী
- ‘ভারত নোংরা খেলা খেলতে পারে, দ্বিমুখী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত পাকিস্তান’
- রাজশাহীতে আশুরা পালনে মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ
- ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন’
- মেক্সিকোতে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪
- আজ জালালপুর গণহত্যা দিবস
- ‘বঙ্গবন্ধু একটি সুন্দর ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন’
- ডহর রামসিদ্ধি : নৌকার গ্রাম
- সবার আমি ছাত্র
- মামদানির জয়, প্রথম মুসলিম মেয়র পেলো নিউইয়র্ক
- দিনাজপুর-২ আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে উত্তাল
- ভণ্ডামি আর নাটক থেকে মুক্তি চান আঁখি আলমগীর
- গাজীপুরে ৩৯ দফা দাবিতে সাংবাদিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ
- একদিনে ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু
-1.gif)








