E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কুড়িগ্রামে মাছ দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুরি-সিংগারা

২০২৫ মে ০৫ ১৭:০২:৩১
কুড়িগ্রামে মাছ দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুরি-সিংগারা

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো মাছ দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুরি, সিংগারা, চপ, পাকোরাসহ কয়েক প্রকার মুখরোচক খাবার। ব্যতিক্রমী এই খাবার পেয়ে খুশি ক্রেতারা, আর বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।

মাছে ভাতে বাঙ্গালী বলা হলেও ফাস্টফুডের ভীড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এই তকমা। শহরের কর্মময় ব্যস্ততায় মাছ কাটা, ধোয়া আর রান্নার অলসতায় নির্ভর হয়ে পড়েছন অনেকেই ফাাস্টফুডের উপর। এতে করে মানুষের শরীরে ঘাটতি হচ্ছে আমিষের। মাছ আমিষ জাতীয় খাবার। শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাবার। আর মাছকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে মাছের তৈরি মুখরোচক ফাস্টফুড খাবার। আর এসব খাবার পাওয়া যাচ্ছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের দাশেরহাট বাজারে সিরাজুলের চায়ের দোকানে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজুলের চায়ের দোকানে মাছের আঁইশ ও কাটা ছাড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ফিস ফিল, ফিস পাকোরা, ফিস ফিঙ্গার, সিঙ্গারা, পুরি, ফিস সমুচা, ফ্রাইফিস বলসহ হরেক রকমের মুখরোচক খাবার। তেলামিয়া, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, রুইসহ স্বল্প মূল্যের মাছ এবং ফিস পাউডার আর মাসল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মাছের তৈরি এসব ফাস্টফুড খাবার। এই দোকানে ছোট বড় অনেকে এসেছেন মাছের তৈরি ফাস্টফুড খেতে। শিশুসহ নানা বয়সীদের শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণে স্বল্প মূল্যে এসব মুখরোচক ফাস্টফুড খাবার পেয়ে খুশি ক্রেতারা। ব্যতিক্রমী এই ফাস্টফুড খাবার ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে।

শিক্ষার্থী নুসরাত বলেন, চায়ের দোকান বা হোটেল থেকে আমরা সাধারণত রুটি বা আলুর তৈরি সিংগারা, সমুচা, চিপ এগুলো নিয়ে টিফিন বেলা খাই। কিন্তু আমাদের দাশেরহাট বাজারে মাছের তৈরি ফিস ফিঙ্গার, চপ পাওয়ায় সেগুলো টিফিন হিসেবে নিয়ে খাই।

শিক্ষার্থী রেশমা খাতুন বলেন, আমি বাসায় তরকারি হিসেবে খাই না কাটার ভয়ে। কিন্তু মাছের এই ফাস্টফুডে কোন আইশ বা কাটা নেই। খেতেও বেশ সুস্বাদু।

অভিভাবক বুলবুলি আকতার বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত নয় এমন খাবারগুলোর প্রতি আগ্রহী শিশুরা। তাদের জন্য এই মাছের ফাস্টফুড খাবারটি প্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই বাড়িতে পরিবারের জন্য আবার অনেকেই টিফিন হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে এই ফাস্টফুড। স্থানীয়ভাবে মাছের এই ফাস্টফুডগুলো আরও বেশি করে অন্যান্য দোকানেও যেন পাওয়া যায় সেই উদ্যোগ নেয়া দরকার।

ক্রেতা মজিবর রহমান বলেন, আগে তো ১০টাকা দিয়ে নাস্তা খেতাম আলুর সিঙ্গারা বা সমুচা। আর এখন ১৫টাকা দিয়ে সিঙ্গারা ও সমুচা খাই। দাম বেশি হলেও এটা খেতে বেশ স্বাদ পাওয়া যায়।
উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি আরডিআরএস বাংলাদেশের তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এরপর কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথম মাছের তৈরি ফাস্টফুড বানাচ্ছি। এতে বেশ সাড়া ফেলেছে এলাকায়। প্রতিদিন মানুষজন মাছের ফাস্টফুড খেতে আসছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম রয়েছে ১৫ হতে ৩০টাকা। এতে করে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে এবং লাভও ভালো হচ্ছে।

উদ্যোক্তা জোবায়দুল হক বলেন, আমি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাছের তৈরি ফাস্টফুড মুখরোচক খাবার তৈরি করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্যানে করে ভ্রাম্যমানভাবে বিক্রি করি। দোকানের অন্যান্য ফাস্টফুডের খাবারের তুলনায় মাছের তৈরি ফাস্টফুডের বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে।

আরডিআরএস বাংলাদেশের টেকনিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, সারা বিশ্বে মাছ একটি জনপ্রিয় খাবার। মৎস্য ভ্যালু এডেড পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থয়ানে আরডিআরএস বাংলাদেশের সহযোগিতায় জেলায় তিনজন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাছের ফাস্টফুড খাবারটি জেলায় বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় আগামীতে আরও উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুক্তাদির খান বলেন, ছোট মেধা বিকাশের জন্য মাছ অপরিহার্য খাবার। বাজারের সাধারণ মুখরোচক খাবারের পরিবর্তে মাছের তৈরি এসব খাবার খেলে সব বয়সের মানুষের শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণে বেশ ভূমিকা রাখবে। জেলায় মাছের ফাস্টফুড খাবার ছড়িয়ে দিতে জেলা মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। এতে করে জেলায় আরও মাছের উৎপাদন বাড়বে, চাষীরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

(পিএস/এসপি/মে ০৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test