নদীতে কুড়িয়ে পাওয়া পাতায় হাড়ি জ্বলে তরী বালার

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের সত্তরের বেশী বয়সী তরী বলাকে দেখা যায় বনের পাতা কুড়াতে। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমাগো এছাড়া উপায় নেই। এই বনের পাতা জ্বলালি আমাগো হাড়ি জ্বলে।
ছয় জনের সংসারে মালঞ্চ নদীর থেকে পাতা কুড়িয়ে চলে সারা বছরের জ্বালানী। জীবন স্বায়েন্বে অসতী পর বৃদ্ধ বয়সে জ্বালানি কুড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে প্রায় ৩০ বছর চলছে তার জীবন।উপকূল জুড়ে জ্বালানি সংকট।বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে সুন্দরবন নির্ভরশীল এলাকাতে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।
উপকূলের আরেক বৃদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, বনে গিলি ফরেষ্টাররা ধরে মামলা দেয়, আইলা’র পর থেকে গোটা এলাকা যেন বিরাভূমি। একটু জ্বালানীর জন্যি তাই আমরা পানিতে ভেসে আসা পাতা কুড়াচ্ছি’। কথাগুলো শেষ হতেই গলুইঠেলা হাতে নিয়ে আবারও পানিতে নেমে পড়েন হিরা বেগম।পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী চার সন্তানেরর জননী এ নারী পানির মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে আরও বলেন, আমাগা কোন আয় নি। এলাকায় এটটা বড় লোকের বাড়ি নি, টাউন বন্দর নি, আমারা খাবো কি, চলবো কেমবায় (কিভাবে)’। ‘জোয়ারে ভেসে আসা কুড়ানো পাতা দে চুলতেছে (চলছে) আমাগা জীবন’।‘খুব কষ্ট ভাই জ্বালানীর- উল্লেখ করে অনতিদুূর থাকা রফিকুল ইসলাম জানায়, কুড়ানো পাতা মুলত তারা জ্বালানীর কাজে ব্যবহার করে। আবার অসংখ্য মানুষ নদীতে ভেসে আসা এসব পাতা কুড়িয়ে নিয়ে শুকিয়ে বিক্রি করে সংসারের খরচ যোগাচ্ছে। পশ্চিম কৈখালী গ্রামের বাসিন্দা রফিকুলের দাবি এলাকায় কাজকর্ম নেই। বাধ্য হয়ে হাঙর ও কামোটের ভয়ডর উপেক্ষা করে দিনরাত নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে তারা।
রফিকুল আরও বলেন, ‘একার আয়ে বৃদ্ধ মা-বাপসহ সাত মুখের যোগান দিতি হয়। মাঝেমধ্যে চাল-ডালির ব্যবস্থা হলিও জ্বালানি জোটে না। তাই প্রতিদিন নদীতে জোয়ার শুরু হলি গলুইঠেলা নিয়ে নদীতে আমাগো নামতি হয়’।তবে শুধুমাত্র হিরা বেগম,তরী বালা, আর রফিকুল ইসলাম না। বরং জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা পাতা কুড়িয়ে জ্বালানীর চাহিদা পুরণের পাশাপাশি সংসার চালানো পরিবারের সংখ্যা অসংখ্য। কৈখালী থেকে শুরু করে মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালীনি হয়ে গাবুরা পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল এ জনপদের হাজারও পরিবারের অন্যতম পেশায় পরিনত হয়েছে পানিতে ভেসে আসা সুন্দরবনের পাতা কুড়ানো।
পাতা কুড়ানোর কাজে জড়িতরা জানায় পাতার সাথে সুন্দরবনের নানান প্রজাতির গাছের ফুল ও ফল থাকে। যে কারনে বনবিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে এমন কাজ করতে হয় তাদের। তবে সমগ্র এলাকাজুড়ে জ্বলানী সংকটে প্রকট হওয়ার দরুন তারা এমনটা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
খলিশাবুনিয়া গ্রামের রাশিদুল ইসলাম বলেন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। এলাকায় চিংড়িঘের থাকায় কাজকর্ম নেই। বাধ্য হয়ে স্ত্রীসহ নিজে নদীতে মাছের রেণু ধরে সংসার চালাতেন। তবে জুন মাসের শুরু থেকে নদীতে নামা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন জোয়ারে ভেসে আসা পাতা কুড়িয়ে নিয়ে গৃহস্থদের কাছে বিক্রি করছেন।
প্রায় অভিন্ন দাবি মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহড়তলী গ্রামের রেনুকা মন্ডলসহ আরও অনেকের। সুন্দরবন তীরবর্তী অংশে বসবাসরত এসব গ্রামবাসী জানায় আইলার পর থেকে প্রায় গাছ-গাছালি শুন্য হওয়ায় এলাকায় তীব্র জ্বলানী সংকট। মাঝেমধ্যে জেলেরা মাছ-কাঁকড়া ধরার সুযোগে সুন্দরবন থেকে কিছু জ্বালানী সংগ্রহ করে। ধনী পরিবারগুলো শহরাঞ্চল কিংবা বরিশাল এলাকা থেকে নৌ-পথে আসা জ্বালানী ক্রয় করে প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। তবে উপকুলপাড়ে বসবাসরত হাজারও পরিবারের অন্যতম প্রধান জ্বালানী জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা সুন্দরবনের পাতা, ফুল ও ফল। তবে এসব উপকুলবাসীর ভয় পাতা সংগ্রহের কাজ বন্ধ হলে জীবন চালানো তাদের আরও কঠিন হয়ে যাবে। ক্রয় ক্ষমতা না থাকার পাশাপাশি তীব্র জ্বালানী সংকটের মধ্যে পড়ে রীতিমত বাস্তচ্যুত হওয়ার মত পরিস্থিতির শংকায় তারা। নদীতে ভেসে আসা পাতা নির্বিঘ্নে সংগ্রহে প্রশাসনিক অনুমতির দাবি তাদের।
এসব বিষয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান বলেন, সুন্দরবনের পাতা ফুল ও ফল সাধারনত সেখান প্রাণী ও মাছদের খাদ্য। তাছাড়া অনেক সময় জোয়ারের পানিতে ভেসে সেগুলো বিভিন্ন চরে যেয়ে প্রাকৃতিকভাবে বনভুমির সৃষ্টি করে। জ্বালানীর জন্য অবশ্যই উপকুলবাসীকে বিকল্প ব্যবস্থার চিন্তা করতে হবে।
(আরকে/এএস/জুন ২২, ২০২৫)
পাঠকের মতামত:
- ‘আ.লীগ দেশের জন্য রাজনীতি না করে ভারতের তাবেদারি করেছে’
- শ্যামনগর বিএনপি’র একাংশের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
- কুষ্টিয়ায় জিকে খালে মিলল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ
- প্লট জালিয়াতি, শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু
- ‘আমরা এমন জাতি নিজেদের সন্তানদেরও পুড়িয়ে মারি’
- ‘শেখ হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না’
- ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৪ জন
- নিজেকে বাঁচাতে মাকে দিয়ে বাদির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা সন্ধিগ্ধ আসামী রফিকুলের!
- জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- আরবি লেখা শেখার ছলে ঘরে নিয়ে শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, ধর্ষক গ্রেফতার
- সাত উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম ব্যাচের 'শিক্ষা সমাপনী
- হৃদরোগে আক্রান্ত জামায়াত আমির, বাইপাস সার্জারির পরামর্শ
- ‘৫ আগস্ট ঘিরে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই’
- ‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে ফ্যাসিস্ট মাথাচাড়া দিতে পারে’
- শ্রীনগরে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে চলছে স্বাস্থ্য সেবা
- হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা
- ‘গাজীপুরে আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে’
- ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৮৬ জন
- ১০২ এসিল্যান্ড প্রত্যাহার
- জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি ঐক্য পরিষদের
- ‘তিন মাসে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন হয়েছে, এক বছরেও না হওয়ার কারণ দেখছিনা’
- পাংশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শাহীন গ্রেপ্তার
- জামালপুরে দুই টিকিট কালোবাজারি আটক
- গোপালগঞ্জে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
- রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে
- মহুয়া বনে
- সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রতিবাদে শেরপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- রামগঞ্জে ইমতিয়াজ ও রায়পুরে অধ্যক্ষ মামুন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত
- ‘শেখ হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না’