E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আবার ফতোয়া, আজও গেল না আঁধার!

২০২৩ এপ্রিল ১৫ ১৬:২০:৩৩
আবার ফতোয়া, আজও গেল না আঁধার!

চৌধুরী আবদুল হান্নান


হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে গ্রাম্য সালিশে এক নারীকে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা আমাদেরমর্মাহত করেছে। অনৈতিক সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে গত ৪ এপ্রিল তাঁকে প্রাকাশ্যে ৮২টি বেত্রাঘাত ও ৮০টি পাথর নিক্ষেপ করা হয়। বর্বরতার এ ঘটনা মানবেতিহাসের সর্বনিকৃষ্ট আরবের সেই আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

যে নারী একা থাকেন, যার স্বামী বিদেশে থাকেন, তার অনেক দোষ! তাঁর চরিত্র নিয়ে কথা বলার সকলের অধিকার, বাঙালি নিজেকে নিয়ে চর্চা করে কম, পরচর্চায় তার আনন্দ বেশি। আর নারীর তো আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগই নেই।

কিছুটা স্বস্তির খবর, ওই নারীকে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত মূল হোতাদের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হাফেজ মো. নুরুল ইসলাম স্থানীয় জামে মসজিদের পেশইমাম, অন্য তিনজন এলাকার মাতবর কিসিমের লোক। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, নারীকে বেত্রাঘাতও পাথর নিক্ষেপের ফতোয়াটা মসজিদের ইমাম সাহেবই দিয়েছিলেন এবং অন্যরা তা কার্যকর করেছে।

প্রকাশ্যে জনসমক্ষে নারীকে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপের মতো বর্বর ঘটনায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিবাদ হতে হয়নি। এমনকি কোনো নারী সংগঠনকেও তেমন প্রতিবাদের ধ্বনি তুলতে দেখা যায়নি। এই ঘটনা কেবল একজন নারীকেই অপমান করা হয়নি, সমগ্র নারী সমাজকে অবমাননা করা হয়েছে।

পক্ষান্তরে ছাত্রী অবিভাবককে অপমানের প্রতিবাদে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশু কিশোরী ছাত্রীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। এক বিচারকের কন্যার সাথে সহপাঠীদের বাকবিতন্ডার জেরে দুইজন ছাত্রী অবিভাবককে বিচারকের পা ছুঁয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করায় ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাইরের লোক দ্বারা পিতা মাতার অপমান সন্তানেরা মেনে নেয়নি।

আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেয় এবং ঘটনাকালে নির্লিপ্ত থাকা ও অদক্ষতার জন্য প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওএসডি করা হয়। এভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

মসজিদের ইমাম স্থানীয় মানুষের একজন ধর্মীয় নেতা, প্রতিদিন অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান তাঁর বাণী শ্রবণ করেন। সেক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়ে স্বল্পজ্ঞান সম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে মসজিদের ইমামের দায়িত্ব দেওয়া সমীচিন নয়, তাতে ধর্মীয় উদারতা, সামজিক সম্প্রীতি প্রচারের পরিবর্তে সীমাবদ্ধ চিন্তা প্রসূত মানসিক সংকীর্ণতার প্রতিফলন ঘটার আশঙ্কা থাকে।

ইসলামের নানা বিষয়ে যারা বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের অনেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানের দীনতা, প্রজ্ঞার অপ্রতুলতা ও সর্বোত্তম পন্থায় সদুপদেশ প্রদানের যোগ্যতায় যথেষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

অনেকটা ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী জেলা-উপজেলায় পাঁচ শতাধিক মডেল মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে, অনেকগুলো ইতোমধ্যে তিনি উদ্বোধন করেছেন।

বিপুল অর্থে নির্মিত এ সকল আদর্শ ও উন্নত মসজিদ এলাকায় ইসলাম ধর্মের মূলবাণী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং কাঠ মোল্লাদের ফতোয়াসহ সমাজের নানা ব্যধি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ইসলাম ধর্মের সারমর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে, এমনটিই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা।

সেক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়ে পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে বাছাই করে মানবিক, উদার, দায়িত্বশীল ও মূল্যবোধ সম্পন্ন উপযুক্ত ব্যক্তিকে এ সকল মডেল মসজিদে ইমাম নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে সমাজে অনাচার চলতেই থাকবে এবং হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test