শারীরিক সুস্থতার চেয়ে মূল্যবান কোনো সম্পদ পৃথিবীতে নেই
মোহাম্মদ ইলিয়াছ
আমরা অনেকেই হয়তো এই প্রবাদটগুলো একাধিকবার শুনেছি- স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল,স্বাস্থ্যই সম্পদ, মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়, আর মরে গেলে পচে যায়। জন্মের পর থেকেই আমরা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকি, আর এ বড় হওয়াও একটা বদলানোর বা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্ক থেকে প্রৌঢ়- এভাবে আমরা সবাই জন্মের পর থেকে বদলাতে বদলাতে একদিন মৃত্যুর পথযাত্রী হই।
সুস্থতা আল্লাহর এক বিরাট নেয়ামত। ব্যক্তি ও জাতির উন্নতির জন্য, সুখী ও সক্রিয় জীবনযাপন করার জন্য সুস্থতা অপরিহার্য। অসুস্থ ব্যক্তির পৃথিবীর কোনো কিছুই ভালো লাগে না। এ জন্য বাংলা প্রবাদে বলা হয় ‘সুস্থতাই সকল সুখের মূল’। বিশ্বনবী সা: বলেছেন, তোমরা অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে গণিমত মনে করো। হাদিসে এসেছে, মুত্তাকি ব্যক্তির জন্য সুস্থতা ধন সম্পদের চেয়েও উত্তম। আর মনের প্রফুল্লতা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি ভোরে সুস্থতা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে, বাসায় নিরাপদ থাকে এবং সারা দিনের খাদ্যসামগ্রী তার কাছে মজুদ থাকে তাহলে পৃথিবীর সব সম্পদ তাকে দেয়া হয়েছে। (সুনানে তিরমিজি)
একবার চলে যান যে কোন সরকারি বা বেসরকারী হসপিটালে!গেলে বুঝতে পারবেন সুস্থতা যে কত বড় নেয়ামত সেখানে গেলে কঠিন হৃদয়ও নরম হয়ে যায়। কারণ, হসপিটালে এমন কিছু রুগী আছে যেগুলো দেখলে নিজের প্রতিটা অঙ্গের কথা অটোমেটিক স্মরণ হয়ে যায়! মনে হয়ে যায় আমার আল্লাহ আমাকে কত সুখে রেখেছেন কতটা সুস্থ রেখেছেন। কতো ধরণের নেয়ামত দ্বারা ভরপুর করে রেখেছেন।
মোট কথা শরীর সুস্থ থাকলে মানুষের কর্মক্ষমতা ও শক্তিমত্তা বেড়ে যায়। সে দ্বীন ও দুনিয়ার মধ্যে কল্যাণকর কাজগুলো সুুন্দরভাবে সম্পাদন করতে পারে। মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে, যা একজন অসুস্থ দুর্বল লোকের পক্ষে সম্ভব হয় না। ইসলাম তাই স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য তাকিদ দিয়েছে এবং স্বাস্থ্য রক্ষার অনুকূলে নানামুখী গাইডলাইন দিয়েছে। স্বাস্থ্য পরিচর্যার দুটো প্রধান দিক রয়েছে। যথা ১. প্রতিরোধমূলক ২. প্রতিষেধক মূলক। এ দুটো দিকেই ইসলামের মৌলিক নির্দেশনা রয়েছে। স্বাস্থ্য রক্ষা ও সুস্থতার জন্য প্রতিরোধমূলক বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ গুলোর মধ্যে রয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা।
এভাবে মানুষসহ পৃথিবীর সব প্রাণীর জীবনে অনিবার্য দুটো প্রান্ত আছে- প্রথম প্রান্তে জন্ম আর শেষ প্রান্তে মৃত্যু। আমি কোনো মৃত্যু গবেষক নই, তাই মৃত্যু নিয়ে দুই-একটির বেশি কথাও বলতে চাই না এখানে। আমাদের সমাজে মৃত্যু সম্পর্কে একটা ধরাবাঁধা ধারণা আছে যে, মৃত্যু অসুখ-বিসুখ ও জরা-ব্যাধির একমাত্র শেষ পরিণতি। মৃত্যু অসুখ-বিসুখ ও জরা-ব্যাধির শেষ পরিণতি হতে পারে; কিন্তু বার্ধক্যে সুস্থ মৃত্যুও হতে পারে অনেকের। বার্ধক্যে সুস্থ মৃত্যু বলতে আমি বোঝাতে চাচ্ছি জরা-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট না পেয়ে মরা। আর তাই প্রৌঢ়ত্বে এ সুস্থ মৃত্যুর জন্য আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে যত্নসহকারে কাজ করতে হবে। তার আগে স্বাস্থ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে একটু জানা দরকার।
আমাদের স্বাস্থ্যের দুটি মাত্রা আছে- মানসিক ও শারীরিক। মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য একে অপরের ওপর ওতপ্রোতভাবে নির্ভরশীল। তাই আমরা সচরাচর বলে থাকি, সুস্থ শরীরে সুস্থ মন থাকে এবং সুস্থ মনই নিশ্চিত করতে পারে একটা সুস্থ শরীর। আমরা কেউই মৃত্যুঞ্জয়ী নই, তবে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্নের মাধ্যমে বার্ধক্যেও আমরা জরা-ব্যাধিমুক্ত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারি। আপনার স্বাস্থ্য আপনার সম্পদ- প্রতিদিন এর যত্ন নিন। সুস্থ থাকা কিন্তু একটা ভীষণ নিয়ামতের ব্যাপার। আপনার বয়স যা-ই হোক না কেন, আজ থেকেই শারীরিক ও মানসিক যত্নের মাধ্যমে আপনি নিজ শরীর ও মনের গুণগত উন্নয়ন করতে পারেন। অধিকন্তু আপনার দেখাদেখি আরও অনেকে আপনাকে অনুসরণ করে শরীর ও মনের যত্ন নেয়া শুরু করতে পারে।
কখন বুঝবেন আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী? সুস্বাস্থ্যের অনেক মাপকাঠি আছে, তবে মোদ্দাকথায় বলা যায়, আপনি নিজেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ভাবতে পারেন অন্তত আপনার যদি- ১. প্রতি রাতে ভালো ঘুম হয়; ২. খাবারের প্রতি অনীহা না থাকে; ৩. শরীরে ব্যথা না থাকে; ৪. চাপ ও হতাশায় না ভোগেন এবং ৫. কাজকর্মে উদ্যম পান। আপনার এ সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য নিয়মিত কিছু স্বাস্থ্য-যত্নের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং একই সঙ্গে কিছু অভ্যাস পরিত্যাগও করতে হবে। মানুষমাত্রই আমরা অভ্যাসের দাস। একটা নতুন অভ্যাস গঠন করা যেমন কঠিন, তেমনিভাবে একটা পুরনো অভ্যাস পরিত্যাগ করাও বেশ কঠিন।
কীভাবে শরীরের যত্ন নেয়া শুরু করবেন? প্রথমেই আপনার শরীরের অবস্থা জানার জন্য কোনো ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন এবং ডাক্তারের সঙ্গে বা কোনো ব্যায়াম প্রশিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার একটা ব্যবস্থাপত্র তৈরি করতে পারেন। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী শরীরের যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন। অথবা নিজে থেকেই স্বাস্থ্যের যত্নের কিছু পরিকল্পনা করতে পারেন যেমন- ১. সকালে ওঠে প্রথমেই খালি পেটে কিছু পানি পান করুন; ২. এর কিছুক্ষণ পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট খালি হাতে কিছু ব্যায়াম করুন; ৩. এরপর গোসল ও নাশতা করে দিনের কাজ শুরু করুন; ৪. মনে রাখবেন কর্মক্ষেত্রে একাধারে বেশিক্ষণ চেয়ারে বসে থাকবেন না, প্রতি ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বসার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট একটু হাঁটাহাঁটি করুন; ৫. মধ্যাহ্নের খাবার বেলা ২টার আগেই শেষ করে নিন, আর নৈশভোজ যেন কখনই রাত ৯টার পরে না হয়; ৬. খাবারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যে খাদ্য যত প্রক্রিয়াজাত হবে, তা ততই শরীরের জন্য খারাপ হবে।
তাই সাদামাটা হাতে তৈরি টাটকা খাবার খান এবং সুস্থ থাকুন; ৭. দিনে অন্তত ২ থেকে ৩টা দেশি ফল খান; ৮. প্রতি ৩০ মিনিট পর একটু পানি পান করুন যাতে সারা দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা হয়; ৯. অফিস থেকে ফিরে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন; ১০. ঘুমাতে যান রাত ১১টার মধ্যে আর ঘুম থেকে উঠুন সকাল ৭টার আগে। আর মনে রাখবেন ছোটবেলার স্কুলে শেখা সেই প্রবাদটি- ‘Early to bed and early to rise makes a man healthy, wealthy and wise’; ১১. প্রতি সপ্তাহে অন্তত একজন অভাবী ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সাধ্যমতো সাহায্য করুন- এতে মানসিক প্রশান্তি পাবেন এবং ১২. মাসে অন্তত দু’বার আপনার চারপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্যবর্ধনে একটু সময় দিন, এতে আপনি থাকবেন প্রকৃতির পাশে এবং মানসিকভাবে শক্ত।
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল- এটা ভেবে আমরা প্রতিদিন স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া শুরু করি। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী একজন ব্যক্তি পরিবারের আনন্দের উৎস এবং সমাজ ও দেশের সম্পদ। আমাদের প্রচেষ্টা হোক- পরিবার, সমাজ ও দেশকে জরা ও ব্যাধি থেকে মুক্ত করা।
লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
পাঠকের মতামত:
- দুই দফা বেড়ে কমল স্বর্ণের দাম
- সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের ৪ জনকে দেয়া হবে পাশাপাশি কবর
- খালের পানিতে গোসলে নেমে লাশ হয়ে ফিরলেন আবদুর রহমান
- লংগদু নানিয়ারচর সড়ক নির্মাণে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত
- কাপ্তাইয়ে ইটবোঝাই ট্রাক উল্টে ৩ জন যাত্রী গুরুতর আহত
- কক্সবাজারে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়
- সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়ল
- ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে’
- ‘জোড়াতালি দিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সম্ভব নয়’
- ববি ভিসির অপসারণ আন্দোলনে শিক্ষকরা
- জাল টাকা ও ছাপানোর সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক
- বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ববি কর্মকর্তার মৃত্যু
- সালথায় পুলিশের বিশেষ অভিযান, ঢাল-কাতরাসহ আটক ৪
- কানাইপুরে ইন্টারনেট কর্মীকে কোপানো রাজিবের গ্রেফতারে প্রতিবেশীদের স্বস্তি
- বোয়ালমারীতে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
- গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সাবেক আরএমও’র বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
- ‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে পদত্যাগ করবো’
- ওয়ালটনের এআই, আইওটিসহ অত্যাধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ নতুন মডেলের স্মার্ট ফ্রিজ উন্মোচন
- বাগেরহাটে বাণিজ্য মেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন বিক্ষোভ
- সাতক্ষীরায় সাতনদী পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুর রহমান জেল হাজতে
- চরভদ্রাসনে গণহত্যা দিবস পালিত
- গোপালগঞ্জে গাছের সাথে পিকআপের ধাক্কা, নিহত ৩
- ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ ও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি কামনায় যশোরে মানববন্ধন
- রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, কাজের অগ্রগতি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
- পাকিস্তানে ফের হামলার আশঙ্কা, মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদে থাকার নির্দেশ
- মাতৃ ও শিশু মৃত্যু রোধে প্রশিক্ষিত ধাত্রীর দরকার
- ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ১২
- ফরিদপুরে সেনা বাহিনীর হাতে এক ভুয়া মেজর আটক
- টুঙ্গিপাড়া কলেজের ভবন সংস্কার কাজে দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে দুদক
- নাটোরে শিশু জুঁই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জেলা জুড়ে প্রতিবাদের ঝড়
- এসএসসি পরীক্ষায় বসেছে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী
- ‘মানবিক করিডোরের সিদ্ধান্ত সব দলের সঙ্গে বসে নেওয়া উচিত ছিল’
- ‘মুজিব’ সিনেমায় তিশার অভিনয় নিয়ে যা বললেন ফারুকী
- ব্রি হাইব্রিড ধানে খাদ্য নিরাপত্তার হাতছানি
- মা পদক পাচ্ছেন ডলি জহুর
- দিনাজপুরে সাবেক এমপির বাড়ি থেকে ইয়াবাসহ ১০ জন আটক
- বাড়িয়াহাটে ৬ মিষ্টি বিক্রেতার কাছ থেকে দের লাখ টাকা খাজনা আদায়
- তারা মিয়া ফকির হত্যার ঘটনায় তিনজন গ্রেফতার
- ‘বাংলাদেশ এখন আইএমএফের ওপর নির্ভরশীল নয়’
- ‘সবাই সচেতন হলেই শিশুদের জন্ম সুরক্ষিত হবে’
- রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
- চালের মোকামে ভরপুর জোগান, তবু বেড়েছে দাম
- ‘লুট করা টাকায় নাশকতার পরিকল্পনা করছে আ.লীগ’
- গাছপালাঘেরা পরিবেশে জন্ম নেওয়া শিশু স্বাস্থ্যবান হয়
- একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম ভরিতে বাড়লো ৫৩৪২ টাকা