ভারতের কাছে বাংলাদেশ পানির অধিকার চায়, দয়া নয়
-1.jpg)
মীর আব্দুল আলীম
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এর ভূপ্রকৃতি, কৃষি, পরিবেশ এবং জনজীবন বহুলাংশে নির্ভর করে নদীগুলোর উপর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশের পানি আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, অভিন্ন নদীগুলোর পানি যৌক্তিক ও ন্যায্য ভিত্তিতে বণ্টনের কথা থাকলেও বাস্তবে তা ঘটছে না। ভারত তার কূটনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটে ঠেলে দিচ্ছে।
পানির জন্য লড়াই: বাংলাদেশের বাস্তবতা
বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত। কিন্তু এসব নদীর পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারত তার প্রভাব খাটিয়ে অধিকাংশ সময় একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে। ফলে বর্ষাকালে যখন অতিরিক্ত পানি আসে, তখন বাংলাদেশে বন্যা হয়, আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ভয়াবহ খরা দেখা দেয়। এতে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্যসম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও জনজীবন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
ফারাক্কা ব্যারাজ এর অন্যতম বড় উদাহরণ। গঙ্গা নদীর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে ভারত ১৯৭৫ সালে এই ব্যারাজ চালু করে, যার ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানির প্রবাহ কমে যায়। এর ফলে পদ্মা নদী সংকুচিত হয়েছে, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে এবং পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে তিস্তা, ধরলা, মহানন্দা, দুধকুমারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নদীর পানিও ভারত একতরফাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
তিস্তা চুক্তির প্রতীক্ষা: কবে পাবে বাংলাদেশ ন্যায্যতা?
তিস্তা নদী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য জীবনরেখা। কিন্তু ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে এই অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ পানিসঙ্কট দেখা দেয়। ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছিল, কিন্তু ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ চুক্তির বিরোধিতা করায় কেন্দ্রীয় সরকার এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
বাংলাদেশ বারবার কূটনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে, কিন্তু প্রতিবারই আশ্বাসের বাণী ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। প্রশ্ন হলো, আমরা আর কতদিন আশ্বাসের রাজনীতি সহ্য করব? তিস্তা চুক্তি না হওয়ার পেছনে ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনাই কি দায়ী?
আন্তর্জাতিক আইন ও বাংলাদেশের দাবি
আন্তর্জাতিকভাবে পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট আইন ও চুক্তি রয়েছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ আইন অনুযায়ী, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা নিশ্চিত করা জরুরি। তাছাড়া ১৯৯৭ সালের UN Convention on the Law of the Non-Navigational Uses of International Watercourses অনুযায়ী, কোনো দেশ অভিন্ন নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করতে পারে না।
কিন্তু ভারত এই নীতিমালা অনুসরণ করছে না। ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত পানি সংকটে ভুগছে। আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা দরকার। বাংলাদেশ যদি আন্তর্জাতিক ফোরামে আরও সোচ্চার হয় এবং কূটনৈতিক চাপে ভারতকে বাধ্য করতে পারে, তবে হয়তো সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
পানির অভাবে বাংলাদেশের ভয়াবহ ক্ষতি
বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা মূলত নদীর পানির উপর নির্ভরশীল। দেশের প্রধান খাদ্য উৎপাদনকারী অঞ্চলসমূহে যখন পানির অভাব হয়, তখন কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে আসে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে সেচের জন্য তিস্তা ও অন্যান্য নদীর পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ভারত যখন একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে, তখন বাংলাদেশের কৃষকরা বিকল্প পানির উৎসের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে বাধ্য হয়।
শুধু কৃষিই নয়, পরিবেশের ওপরও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো প্রধান নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ার ফলে নদীভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। এতে হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হচ্ছে এবং জীবিকা হারাচ্ছে।
ভারতের প্রতি বাংলাদেশের কূটনৈতিক বার্তা
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কিন্তু প্রকৃত বন্ধু কখনো একতরফাভাবে অন্যের ক্ষতি করতে পারে না। ভারত যদি প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের বন্ধু হতে চায়, তাহলে ন্যায্যতার ভিত্তিতে পানি বণ্টন করতে হবে।
বাংলাদেশ চায় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান। বাংলাদেশের সরকার সবসময় কূটনৈতিক পথে এগিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ভারতের উচিত হবে এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা।
সম্ভাব্য সমাধান কী?
১. তিস্তা চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন: ভারতকে অবশ্যই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
২. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা: জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশকে এর ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য আরও সক্রিয় হতে হবে।
৩. দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পর্যালোচনা: ফারাক্কা চুক্তিসহ অন্যান্য পানি চুক্তিগুলোর পুনঃমূল্যায়ন করা জরুরি।
৪. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, যাতে সরকার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখে।
পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া বাংলাদেশের অধিকার। ভারতকে অবশ্যই বন্ধুত্বের স্বার্থে এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালার ভিত্তিতে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা ফিরিয়ে দিতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে এই সংকট আরও তীব্রতর হবে, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। সময় এসেছে বাংলাদেশের দাবি আরও জোরালোভাবে উপস্থাপনের। ভারতকে বোঝাতে হবে যে, পানি কোনো রাজনৈতিক হাতিয়ার নয়, বরং এটি মানবতার মৌলিক অধিকার।
লেখক :সাংবাদিক সমাজ গবেষক, মহাসচিব, কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।
পাঠকের মতামত:
- দুই দফা বেড়ে কমল স্বর্ণের দাম
- সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের ৪ জনকে দেয়া হবে পাশাপাশি কবর
- খালের পানিতে গোসলে নেমে লাশ হয়ে ফিরলেন আবদুর রহমান
- লংগদু নানিয়ারচর সড়ক নির্মাণে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত
- কাপ্তাইয়ে ইটবোঝাই ট্রাক উল্টে ৩ জন যাত্রী গুরুতর আহত
- কক্সবাজারে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়
- সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়ল
- ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে’
- ‘জোড়াতালি দিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সম্ভব নয়’
- ববি ভিসির অপসারণ আন্দোলনে শিক্ষকরা
- জাল টাকা ও ছাপানোর সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক
- বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ববি কর্মকর্তার মৃত্যু
- সালথায় পুলিশের বিশেষ অভিযান, ঢাল-কাতরাসহ আটক ৪
- কানাইপুরে ইন্টারনেট কর্মীকে কোপানো রাজিবের গ্রেফতারে প্রতিবেশীদের স্বস্তি
- বোয়ালমারীতে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
- গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সাবেক আরএমও’র বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
- ‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে পদত্যাগ করবো’
- ওয়ালটনের এআই, আইওটিসহ অত্যাধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ নতুন মডেলের স্মার্ট ফ্রিজ উন্মোচন
- বাগেরহাটে বাণিজ্য মেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন বিক্ষোভ
- সাতক্ষীরায় সাতনদী পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুর রহমান জেল হাজতে
- চরভদ্রাসনে গণহত্যা দিবস পালিত
- গোপালগঞ্জে গাছের সাথে পিকআপের ধাক্কা, নিহত ৩
- ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ ও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি কামনায় যশোরে মানববন্ধন
- রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, কাজের অগ্রগতি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
- পাকিস্তানে ফের হামলার আশঙ্কা, মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদে থাকার নির্দেশ
- মাতৃ ও শিশু মৃত্যু রোধে প্রশিক্ষিত ধাত্রীর দরকার
- ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ১২
- ফরিদপুরে সেনা বাহিনীর হাতে এক ভুয়া মেজর আটক
- টুঙ্গিপাড়া কলেজের ভবন সংস্কার কাজে দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে দুদক
- নাটোরে শিশু জুঁই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জেলা জুড়ে প্রতিবাদের ঝড়
- এসএসসি পরীক্ষায় বসেছে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী
- ‘মানবিক করিডোরের সিদ্ধান্ত সব দলের সঙ্গে বসে নেওয়া উচিত ছিল’
- ‘মুজিব’ সিনেমায় তিশার অভিনয় নিয়ে যা বললেন ফারুকী
- ব্রি হাইব্রিড ধানে খাদ্য নিরাপত্তার হাতছানি
- মা পদক পাচ্ছেন ডলি জহুর
- দিনাজপুরে সাবেক এমপির বাড়ি থেকে ইয়াবাসহ ১০ জন আটক
- বাড়িয়াহাটে ৬ মিষ্টি বিক্রেতার কাছ থেকে দের লাখ টাকা খাজনা আদায়
- তারা মিয়া ফকির হত্যার ঘটনায় তিনজন গ্রেফতার
- ‘বাংলাদেশ এখন আইএমএফের ওপর নির্ভরশীল নয়’
- ‘সবাই সচেতন হলেই শিশুদের জন্ম সুরক্ষিত হবে’
- রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
- চালের মোকামে ভরপুর জোগান, তবু বেড়েছে দাম
- ‘লুট করা টাকায় নাশকতার পরিকল্পনা করছে আ.লীগ’
- গাছপালাঘেরা পরিবেশে জন্ম নেওয়া শিশু স্বাস্থ্যবান হয়
- একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম ভরিতে বাড়লো ৫৩৪২ টাকা