গরমে ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি, রোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
শীতে তেমন আনাগোনো না থাকলেও গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশার দাপটে অতিষ্ট হয়ে ওঠে স্বাভাবিক জনজীবন। ক্ষতিকারক মশাদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক মশার নাম ডেঙ্গু। আর বৃষ্টি ও গরমের এই ভ্যাপসা পরিবেশেই জন্মায় এডিস মশা। কেবল ঢাকাই নয়। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, বরিশাল, বরগুণাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা আছে ডেঙ্গু ঝুঁকিতে।গবেষণা অনুযায়ী মশার ঘনত্ব বেড়েছে। সে অনুযায়ী এ বছর অনেক বেশি এডিস মশা দ্বারা আক্রান্ত হবে মানুষ, যদি এখনি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। এবার ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগী হবে। সিটি করপোরেশনের মতো পৌরসভায় কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো কাঠামো নেই। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে মশা নিয়ন্ত্রণে আরও উদ্যোগী হতে হবে।আর ডেঙ্গু মূলত মশাবাহিত একটি সংক্রমণ, যা কোনো কোনো সময় মানুষের জন্য প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। শিশু থেকে বয়স্ক যে কারোরই যেকোনো সময় ডেঙ্গু সংক্রমণ হতে পারে।
ডেঙ্গু উপসর্গ
জ্বরই প্রধান উপসর্গ। চামড়ায় দানা (র্যাশ), রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে কারও কারও।
* জ্বর : অন্য ভাইরাস জ্বরের মতো ডেঙ্গুজ্বর সাতদিনের বেশি থাকে না। প্রথমদিকে একটানা উচ্চ তাপমাত্রায় থেকে ছয়দিনের পর জ্বর চলে যেতে পারে। দুদিন পর একদিন জ্বর না থেকে আবার দুদিনের জ্বর থাকল তারপর জ্বর চলে গেল তাও হতে পারে।
* অন্যান্য উপসর্গ : সব জ্বরে, বিশেষত ভাইরাস জ্বরে গা ম্যাজ ম্যাজ করে ব্যথা হয়। ডেঙ্গুতে ব্যথা বেশি হয়। অনেকের এত বেশি ব্যথা হয় যে, তারা হাড় ভাঙার সঙ্গে তুলনা করেন। এ ছাড়া রোগীর চোখের পেছনেও ব্যথা অনুভূত হয়।
* রক্তক্ষরণ : চামড়ায়, মুখে, খাদ্যনালিতে, চোখে হতে পারে। তবে বেশি যা হয় তা হলো মেয়েদের মাসিক একবার হয়ে গেলেও একই মাসে আবার মাসিক হয়।
* দানা (র্যাশ) : ডেঙ্গুর টিপিক্যাল র্যাশ বেরোয় জ্বরের ষষ্ঠ দিনে। তখন জ্বর থাকে না। দেখলেই চেনা যায়, খুঁজতে হয় না। এ ছাড়া জ্বরের প্রথমে গায়ে চাপ দিলে আঙ্গুলে ছাপ পড়ে। এটাকে তিনটা ফেইজে বলা হয়।
১. ফেব্রাইল ফেইজে জ্বর ও জ্বরের উপসর্গ থাকে।
২. এফেব্রাইল ফেইজে জ্বর চলে যায়। তবে এটাকে ক্রিটিক্যাল ফেসও বলে। ডেঙ্গু হিমোরেজিক জ্বরের স্টেজটা মারাত্মক জটিল হয়। এটা দুইদিন থাকে। জ্বর না থাকলেও এ সময় সতর্ক থাকতে হয়।
৩. কনভালেসেন্ট ফেইজে অধিকংশ সেরে উঠলেও কেউ কেউ ভীষণ দুর্বল হয়। বিষণ্নতায় ভোগেন।
ডেঙ্গু দুই ধরনের
ক. ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার : আর দশটা ভাইরাল ফিভারের মতো ভয় না পেলে কোনো সমস্যা নেই।
খ. ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার : ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুর সবকিছুই থাকে। রক্তনালির লিকিং হয় বলে বাড়তি কিছু সমস্যা হয়। জ্বরের সঙ্গে যদি প্লাটিলেট কাউন্ট এক লাখের কম হয় এবং হিমাটক্রিট ২০% ভেরিয়েশন হয় তবে সেটা ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার। ডেঙ্গু হিমোরেজিক জ্বরের চারটি গ্রেড রয়েছে।
গ্রেড-১ : টুনিকেট টেস্ট পজিটিভ হওয়া ছাড়া রক্তক্ষরণের আর কোনো আলামত থাকে না।
গ্রেড-২ : দৃশ্যত, রক্তক্ষরণ থাকে।
গ্রেড-৩ : ১ বা ২ এর সঙ্গে যদি ব্লাড প্রেশার কমে, পালস বাড়ে।
গ্রেড-৪ : ১ বা ২ এর সাথে যদি ব্লাড প্রেশার, পালস রেকর্ড না করা যায় গ্রেড ৩ ও ৪-কে একসঙ্গে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে।
* ল্যাবরেটরি পরীক্ষা : খুব টক্সিক না হলে কোনো জ্বরেরই তিনদিন আগে কোনো পরীক্ষার দরকার নেই। টিসি ডিসি হিমোগ্লোবিন ইএসআর, এসজিপিটি : ভাইরাল ফিভারে কাউন্ট বাড়ে না। যদি কাউন্ট কমে, বিশেষ করে টিসি তিন হাজারের নিচে নামে তাহলে ডেঙ্গু নিশ্চিত।
এনএস ১ জ্যান্টিজেন : এটাই জ্বরের প্রথম সপ্তাহের পরীক্ষা। জ্বর থাকাকালীন পজিটিভ হয়।
* অ্যান্টিবডি পরীক্ষা : সাত দিন পর পজিটিভ হয় বলে এটা কার্যকরী নয়। এনএস ১ অ্যান্টিজেন করা গেলে এটার দরকার ও নেই।
* প্লাটিলেট কাউন্ট ও হিমাটোক্রিট : প্লাটিলেট আতঙ্ক না থাকলে অত্যাবশ্যকীয় নয়। হিমোরেজক ফিভার ডায়াগনোসিস ও ফলোআপের জন্য করা লাগে। হিমোরেজিক ফিভার হলে পেটে ও ফুসফুসে পানি নিশ্চিত করার জন্য পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও বুকের এক্স-রে করা লাগে।
* নিউট্রিশন : জ্বরের সময় ক্ষুধামন্দা হয়, বমি লাগে। এ সময় ফলের রস উপকারী। স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যাবে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু এবং গ্রেড-১ হিমোরিজিকে এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না। গ্রেড-২ এ অতিরিক্ত সমস্যা হলো প্রথমে ধরতে না পারলে চিকিৎসা না দিলে গ্রেড-৩ বা গ্রেড-৪ অর্থাৎ শক সিনড্রোমে চলে যেতে পারে। পরিমিত পানি দিতে হবে জ্বর নামিয়ে রাখতে।
গ্রেড-২ তে যদি পেটের ব্যথা কমছে না, বমি হচ্ছে অথবা প্রেশার ঠিক থাকছে না তাহলে হাসপাতালে নিতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়।
* রক্ত দেওয়া (ব্লাড ট্রান্সফিউশন) : রক্তক্ষরণ হলে নিয়ম হলো রক্তবদল করতে হয়। সিস্টলিক ব্লাড প্রেশার ১০০-এর নিচে নামলে, পালস ১০০-এর বেশি হলে। হিমোগ্লোবিন ১০-এর নিচে নামলে ও হিমাটোক্রিট কমে গেলে রক্ত দিতে হবে।
প্রতিরোধ
মশা মারতে ঘরে স্প্রে ব্যবহার করুন। দিনে মশারি দিয়ে ঘুমান। মশার ডিম থেকে লারভা হয়ে থাকে। তাই এই পাত্র মশার বংশ বিস্তার রোধ করতে জলকান্দায়, নির্মাণ সামগ্রীর পানি, বৃষ্টিতে জমে থাকা রাস্তার এবং পাত্রের পানিতে স্প্রে করুন।
পরিশেষে বলতে চাই, এই গরমে ডেঙ্গুর উপদ্রব। তাই বছরের অন্য সময়ে চেয়ে এ সময়ে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়ে থাকে।আর অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেক ধরনের রোগবালাইও মোকাবিলাও করতে হয়। তবে সঠিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিলেই অধিকাংশ রোগই সেরে যায়। আবার, কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে সহজেই এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়। শুধুমাত্র বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের ব্যাবস্থা করলে এবং আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখলেই শীতকালে বেশিরভাগ রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
লেখক: কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
পাঠকের মতামত:
- 'মিত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা পুরো পাকবাহিনীকে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেন'
- এলজিইডির উন্নয়ন কাজে বদলে গেছে গ্রামীণ জনপদ
- যশোরে ২৫ কোটি টাকার শীতকালীন সবজির চারা বিক্রির লক্ষ্য
- হিলি বন্দর দিয়ে ফের পেঁয়াজ আমদানি শুরু, কমেছে দাম
- বালিয়াকান্দিতে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে চা-দোকানী গ্রেফতার
- মুক্তিপণের দাবিতে সুন্দরবনে কর্মরত থেকে ৭ জেলেকে অপহরণ
- তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বাগেরহাটে ভিক্ষক পরিবারকে টিনসেড ঘর উপহার
- দিনাজপুরে হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সেই শিশুটি স্থান পেলো এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে
- রাজবাড়ীতে আমন ধানের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশ কৃষক
- দরপত্র ছাড়া বিদ্যালয়ের টিনসেড ঘর বিক্রি, তদন্তে কমিটি
- যথাযোগ্য মর্যাদায় সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস পালিত
- সুন্দরবন থেকে ট্রলারসহ ৭ জেলে আটক
- সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময়
- কমিটি গঠনের ৬ দিনের মাথায় কোটালীপাড়ায় জামায়তের হিন্দু শাখার ৯ নেতাকর্মীর পদত্যাগ
- শীতের তীব্রতায় ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোশক কারিগরদের
- নগরকান্দায় ধর্মীয় অনুভূতি অবমাননার অভিযোগে প্রতিবাদ সমাবেশ
- ফরিদপুরে ডিবি পুলিশের হাতে ১ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ১
- ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল কানাডা-আলাস্কা সীমান্ত এলাকা
- কবিরহাটে রোহান দিবা-রাত্রি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত
- পাংশায় মুক্তিযোদ্ধাদের কববের জন্য নির্ধারিত স্থানের আগুন
- চলচ্চিত্র উৎসবের নারী নির্মাতা বিভাগে বিচারক আফসানা মিমি
- আমিরাতের লিগে অভিষেকে উজ্জ্বল মোস্তাফিজ
- ‘বিএনপি সবসময়ই প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী’
- নড়াইলে পুকুর পাড় থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার
- শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ
- বিবস্ত্র করে মারপিট, লজ্জায় কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা
- ভণ্ডামি আর নাটক থেকে মুক্তি চান আঁখি আলমগীর
- নরসিংদীতে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৫
- ভোলায় ১৩ জেলে নিয়ে ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ৮
- ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিন, এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবো’
- কক্সবাজারে পাহাড় ধসে শিশুসহ ৪ মৃত্যু
- বরাদ্দ সংকটে বরগুনার ৪৭৭ কি.মি. সড়ক, চরম দুর্ভোগে স্থানীয়রা
- আবদুল হামিদ মাহবুব'র একগুচ্ছ লিমেরিক
- বরগুনায় আওয়ামীলীগের ২৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা
- সিলেটে কমছে বন্যার পানি, দেখা মিলেছে রোদের
- শেখ হাসিনার সাথে মুঠোফোনে কথা বলায় গ্রেফতার আ.নেতা জাহাঙ্গীর
- পঞ্চগড়ে ভাষা সৈনিক সুলতান বইমেলায় নতুন তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
- মহম্মদপুরে শহীদ আবীর পাঠাগারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্থাপনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি
- বই পড়ার অভ্যাসে তলানিতে বাংলাদেশ, বছরে পড়ে ৩টিরও কম
- সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নাই
- একদিনে ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু
- 'নির্লজ্জ বেহায়া হতেই কী আমরা তোমাকে খুন করেছি কিংবা তোমাকে রক্ষা করিনি?'
- 'তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে'
- নোয়াখালীর বানভাসিদের পাশে শরীয়তপুরের শিক্ষার্থীরা
- চুয়াডাঙ্গায় দুই আলমসাধুর মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক নিহত
-1.gif)








