‘আল-বদর’ ও ‘লাল-বদর’ এবং একজন আবু আসাদ

শিতাংশু গুহ
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ‘আল-বদর’ ও ‘লাল-বদর’ নিয়ে আমি সামাজিক মাধ্যমে একটু তুলনা করেছিলাম, এতে বাংলাদেশ থেকে একজন তরুণ আবু আসাদ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তার মন্তব্যের অনেকাংশের সাথেই আমি একমত, তবু কিছুটা ব্যাখ্যা দেয়া দরকার। তিনি বলেছেন, সাধারণ মানুষ, এমনকি অনেক আওয়ামী লীগার শেখ হাসিনা’র পদত্যাগ চেয়েছিলো। অনেকেই তাদের ফেইসবুক প্রোফাইল লাল করছিলো। আবু আসাদ-র বক্তব্য সত্য। এটিও সত্য যে, ২০২৪’র আন্দোলনকারীরা সবাই খুনি না, সবাই স্বাধীনতা বিরোধী না। তবে ওরা সবাই ভুল বুঝে সরে গেছে। অনেক মহিলা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলো, এখন নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করে তারা সরে গেছেন।
এখন যাদের লালবদর বলা হচ্ছে, এঁরা হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, যারা মেটিক্যুলাস প্ল্যান করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিলো, বুঝতে দেয়নি তাদের মূল প্ল্যান, এবং দেশের মানচিত্র, সংবিধান, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধ্বংস করে বাংলাদেশকে একটি বিপথগামী ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে এবং এরা তথাকথিত সমন্বয়কারী, তাঁদের অনুসারী, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, সমর্থনকারী পাকিস্তানী দোসর, যারা দেশটাকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এদের সর্দার ড: মোহাম্মদ ইউনুস। বঙ্গবন্ধু যেমন জাতির পিতা, ড: ইউনুস তেমনি লালবদর ও জঙ্গী-ইসলামী মৌলবাদীদের পিতা। এ লালবদর ১৯৭১ সালের আলবদরের চেয়েও ভয়ংকর?
আবু আসাদ লিখেছেন, শেখ হাসিনা রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক চর্চাকারী একজন মানুষ। বঙ্গবন্ধু’র কন্যা, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও ২১ বছর প্রধানমন্ত্রী থেকেও তিনি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উন্নয়নে বা সাম্প্রদায়িকতা দমনে কিচ্ছু করেননি। আসাদ যা বলেছেন, তা সত্য। তিনি রাজনীতিতে সঠিক ছিলেন না বলেই আজ পরাজিত, দেশান্তরী। কথায় আছে, আওয়ামী লীগ জিতলে অল্পকিছু মানুষ জেতে, আওয়ামী লীগ হারলে সবাই হারে। আমরা সবাই হেরেছি। শেখ হাসিনাকে আমি যতটা দেখেছি তাতে আমি তাকে ‘সাম্প্রদায়িক চর্চাকারী’ বলতে চাইনা, তবে তিনি সাম্প্রদায়িকতাকে জিইয়ে রেখেছেন, লালন-পালন করেছেন, বাড়তে দিয়েছেন।
এর কারণ সম্ভবত: তিনি জানতেন যে, বিএনপি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না, ইসলামী মৌলবাদী শক্তি পারবে। ২০১৩’র হেফাজতের উত্থানে তিনি ভয় পেয়েছিলেন, প্রায়ত: সৈয়দ আশরাফ সেযাত্রায় তাঁকে রক্ষা করেন। শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন করেছেন, সুযোগ পেয়েও বাহাত্তরের সংবিধান পুন্:প্রবর্তন না করে তিনি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মুলে কুঠারাঘাত করেছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আমাদের পারিবারিক বন্ধু, ঐসময় তাঁকে এনিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি আমায় বলেছিলেন, ‘আমরা তো সুযোগ করে দিয়েছিলাম, আপনার নেত্রী সেটি বাস্তবায়ন না করলে আমাদের কি করার আছে?
সম্ভবত: অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হয়তো শেষদিকে শেখ হাসিনা’র চিন্তা-চেতনায় ছিলোনা। তিনি চেষ্টা করছিলেন মুসলিম বিশ্বের নেতা হতে? বঙ্গবন্ধু যেমন লাহোর গিয়ে বা ভুট্টোকে বাংলাদেশে ডেকে এনে নিজের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেছিলেন, শেখ হাসিনা তেমনি প্রগতিশীল শক্তিকে কোনঠাসা করে মৌলবাদী শক্তিকে দুধকলা দিয়ে পুষে নিজের পতনকে ত্বরান্বিত করেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, আজকে দেশে যে মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে সেটি শেখ হাসিনা’র আমলেই গড়ে উঠেছে। যে তরুণরা তথাকথিত আন্দোলন গড়ে তুলেছে, এঁরা আওয়ামী লীগের আমলে শিক্ষা-ব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা সন্তান। ইমরান এইচ সরকারকে আমি একান্তে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তাঁর শ্বশুড় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বামপন্থী হয়েও কেন শিক্ষা-ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন? তার উত্তর ছিলো, তিনি কিছুই করছেন না, তিনি শুধু শেখ হাসিনা’র নির্দেশ পালন করছেন।
ইমরানের কথা অবিশ্বাস করার কোন কারণ ছিলোনা, কারণ তখন শেখ হাসিনা’র কথার বাইরে ‘গাছের পাতাও’ নড়তো না? ঐসময় ইমরান আমেরিকা এসেছিলেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আওয়ামী লীগের কোন নেতা তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকার পর্যন্ত করেনি। এ প্রসঙ্গে আমার বুয়েটের সাবেক ভিসি সত্যপ্রসাদ মজুমদারের কথা মনে এলো। সত্য আমার ছোটভাই-র মত, আমাদের পাশের বাড়ীর ছেলে, ভিসি হবার পর ওকে নিয়ে আমার একটি প্রবন্ধ ভোরের কাগজে ছাপা হয়েছিলো। ভিসি সত্য নিউইয়র্ক এলো, আমি জানলাম চলে যাবার পর। যার বাসায় ছিলো, তিনি আমায় পরে জানালেন যে, সত্য চায়নি যে তার সাথে আমার দেখা হোক, কারণ আমি সরকারের সমালোচনা করি?
আবু আসাদ, আপনি যা লিখেছেন ঐসময় হলে আপনি গুম হয়ে যেতে পারতেন। এটাই বাস্তবতা। শেখ হাসিনা শুধু নিজের ক্ষতি করেননি, দলের ক্ষতি করেছেন, প্রগতিশীল শক্তির ক্ষতি করেছেন, দেশের ক্ষতি করেছেন, বঙ্গবন্ধু’র ক্ষতি করেছেন, দেশটা দেশদ্রোহীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এতকিছুর পরও বলবো, শেখ হাসিনা ভুল করেছেন, তবে তিনি দেশপ্রেমিক ছিলেন, ড: মোহাম্মদ ইউনূসের মত দেশ বিক্রী করেননি। আশা করি ২০২৪-এ তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। রাজাকারের বন্ধু ড: ইউনুস দেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন। তাই, হটাও ইউনুস, বাঁচাও দেশ।
Abu Asad, 30 May 2025: ২০২৪ সালে অগণিত সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনার পতন চেয়েছিলেন, এমনকি তাঁদের অনেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক, ভোটার। জুলাইয়ে নিহতের স্মরণে আওয়ামী লীগের শোকপালন কর্মসূচিকে ব্যঙ্গ করে ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার লাল রঙ্গে ভরাট রাখার একটা দাবী ভাইরাল হলে ঘোষিত শোকের দিনে অগণিত সাধারণ মানুষ প্রোফাইল পিকচার লাল করেন। এই লাল থেকেই পরবর্তী লালবদর কথাটা চালু হয়েছে। লালবদর বলা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। কেবল জুলাইয়ের ষড়যন্ত্রকারীদের আলাদাভাবে লালবদর বলা হলে তা ন্যায্য হবে।
সকল লাল প্রোফাইলধারী অনলাইন এক্টিভিষ্ট দেশের স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি ছিলেন না। আমি হুজুগে মাতোয়ারা হইনা বলেই প্রোফাইল লাল করিনাই, কিন্তু 'নিজেরাই হত্যা করে নিজেই শোকব্যাজ ধারণ' একটা নষ্ট রাজনৈতিক চাল বলে মনে করি। তাই, লাল প্রোফাইল পিকচারে সেদিন ফেসবুক সয়লাব হওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব খুশী হয়েছিলাম।
আমি ২০২৪ আন্দোলনের সবাইকে খুনী ভাবি না, স্বাধীনতার বিরোধীও ভাবিনা। যে গভীর এবং গোপন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দেশের মেজরিটি সাধারণ মানুষ ব্লাকমেইল্ড এবং বিভ্রান্ত হয়েছিল তার দায়িত্বের বড় একটা দায় তদানীন্তন সরকারের, ব্যর্থ রাজনীতির, নীতি নির্ধারকদের।
হাসিনা রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার চর্চাকারী একজন মানুষ। তার পতন যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেও বিপন্ন করে তবু্ও তার পতন চাওয়া মানুষদের স্বাধীনতার বিরোধী বলা যৌক্তিক হয়না।
বঙ্গবন্ধুর কণ্যা হয়েও, আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও, ২১ বছর প্রধানমন্ত্রীত্ব করেও শেখ হাসিনা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উন্নয়নে কিম্বা সাম্প্রদায়িকতা দমনে কী এমন ভূমিকা পালন করেছেন তা আমার প্রশ্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হলে তিনি ইসলাম প্রমোটের রাজনীতি কেন করেছেন? তিনি ত্যাগী নেতাদের কথা না শুনে স্বজনপ্রীতি করেছেন, হাইব্রিডদের উচ্চতর পদ পদবী দিয়েছেন। তিনি ইচ্ছা করলে গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক রাস্ট্র গড়ার কাজকে এগিয়েও নিতে পারতেন। দুঃখের বিষয়, তা তিনি করেন নাই।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।
পাঠকের মতামত:
- ‘৫ আগস্ট ঘিরে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই’
- ‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে ফ্যাসিস্ট মাথাচাড়া দিতে পারে’
- শ্রীনগরে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে চলছে স্বাস্থ্য সেবা
- হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা
- ‘গাজীপুরে আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে’
- ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৮৬ জন
- ১০২ এসিল্যান্ড প্রত্যাহার
- জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি ঐক্য পরিষদের
- ‘তিন মাসে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন হয়েছে, এক বছরেও না হওয়ার কারণ দেখছিনা’
- পাংশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শাহীন গ্রেপ্তার
- জামালপুরে দুই টিকিট কালোবাজারি আটক
- গোপালগঞ্জে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
- সোনাতলায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
- ফুলপুরে পরিষ্কার পরিছন্নতার বিশেষ অভিযান
- স্বাধীনতা ও জাতিসত্তা রক্ষার লড়াইয়ে চাই জাতীয় ঐক্য
- নিউ ইয়র্কে বন্দুক হামলার সময় কর্মরত ছিলেন না নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল
- সেরা দূরপাল্লার এয়ারলাইনের স্বীকৃতি পেলো এমিরেটস
- ডিসকভারির সাথে পার্টনারশিপে উদ্বোধন হলো অপো রেনো ১৪ সিরিজ ৫জি স্মার্টফোন
- কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে ডুবে গেছে রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু
- কালা জাহাঙ্গীরের চরিত্রে অভিনয় করবেন না শাকিব
- ৪২ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরছেন টেইলর
- ‘বিচার নিয়ে আমাদের আন্তরিকতায় সন্দেহ রাখবেন না’
- ‘তাবলিগের দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে কমিটি হচ্ছে’
- ঝিনাইদহের জাকির হোসেনের ম্যাজিক তেল! পোড়া ক্ষতে কাজ করে জাদুর মতো
- শীত আসতেই মুখ-হাত-পায়ে চামড়া উঠছে, কী করবেন?
- কমলনগরে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আটক
- হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
- মহুয়া বনে
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে