E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

স্কুলজীবনে শুধু পড়াশোনা নয়, কাজ শেখাও জরুরি

২০২৫ জুলাই ১০ ১৮:০৩:৫৮
স্কুলজীবনে শুধু পড়াশোনা নয়, কাজ শেখাও জরুরি

আসিফ চৌধুরী নাঈম


আমেরিকার ছাত্ররা গ্রীষ্মে ঘণ্টায় ১৬ ডলার উপার্জন করে, আর বাংলাদেশের ছাত্ররা স্নাতক শেষে চাকরি খুঁজে — কেন এত ব্যবধান? আমেরিকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্মের ছুটিতে ঘণ্টায় প্রায় ১৬ ডলার বা তার বেশি বেতনে কাজ করে। শুধু অর্থ উপার্জন নয়, তারা নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে, কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। তারা ছোটবেলা থেকেই বুঝতে শেখে অর্থের মূল্য, সময়ের গুরুত্ব এবং জীবনের বাস্তব চাহিদা।

অপরদিকে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দিন কাটে প্রায়শই একঘেয়ে রুটিনে — সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়া, মুখস্থ পড়াশোনা করা, স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে বিকেলে ক্রিকেট খেলা, সন্ধ্যায় আবার পড়াশোনা করা। আমি নিজেও এর মধ্য দিয়েই গিয়েছি। তখন বুঝতাম শুধু পড়াশোনা করলেই হবে। কেউ শেখায়নি যে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের দক্ষতা বাড়ানো, অর্থ উপার্জন শেখা কতটা জরুরি। আমাদের মানসিকতায় ছিল “আমার সব খরচ মেটাবেন বাবা-মা” — আর আত্মনির্ভরশীলতা বা অর্থনৈতিক শিক্ষা ছিল খুবই কম।

আমেরিকায় গ্রীষ্মকালীন কাজের সুযোগ আমেরিকায় গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক খণ্ডকালীন ও মৌসুমি কাজের সুযোগ থাকে, যেমন:

ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টে কাজ, গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে কাউন্সেলর, রিটেইল দোকানে সহকারী,
পার্ক বা সুইমিং পুলে সেফটি গার্ড, বিভিন্ন কোম্পানির ইন্টার্নশিপ, এসব কাজে ঘণ্টায় ১৪-২০ ডলার পর্যন্ত বেতন পায় শিক্ষার্থীরা। এর ফলে তারা নিজের খরচ, গ্যাজেট কেনা, কলেজের টিউশন ফি সহ অনেক খরচ নিজেরাই মেটাতে পারে। এমনকি এই অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষ্যত কর্মজীবনে অনেক সাহায্য করে।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দুরবস্থা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সুযোগ খুবই সীমিত। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি কোনো কাজের সুযোগ পায় না। পড়াশোনাকে প্রধান জিনিস মনে করা হয়, আর অর্থ উপার্জন বা দক্ষতা বাড়ানো দ্বিতীয়। অভিভাবকরাও প্রায়শই সন্তানদের পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চাপ দেয়, অন্য কোনো কাজকে নেতিবাচকভাবে দেখে। ফলে স্নাতক শেষে চাকরির জন্য ঘুরতে হয়, আত্মবিশ্বাস কম থাকে এবং জীবনযুদ্ধে অনেক সময় পিছিয়ে পড়তে হয়।

কেন এই ব্যবধান?

সামাজিক মনোভাব: পড়াশোনা ছাড়া অন্য কাজে মন দেওয়া মানসিকভাবে কম গ্রহণযোগ্য।

সুযোগের অভাব: গ্রীষ্মকালীন বা খণ্ডকালীন কাজের পর্যাপ্ত সুযোগ নেই।

দক্ষতার ঘাটতি: শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক সময় শুধু পরীক্ষার জন্য শিক্ষিত করে, বাস্তব দক্ষতা শেখায় না।

অর্থনৈতিক শিক্ষা নেই: ছাত্রজীবনে টাকা পরিচালনার বা উপার্জনের শিক্ষা খুব কম।

আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা, আমার স্কুলজীবনে দিনগুলো কেটেছিল নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা রুটিনে — সকালে উঠে স্কুলে যেতাম, পড়া মুখস্থ করার চেষ্টা করতাম, বিকেলে ক্রিকেট খেলতাম, সন্ধ্যায় আবার পড়তে বসতাম। তখন ভাবতাম পড়াশোনাই জীবনের সব। এখন বুঝি, যদি তখন আমি কাজ শেখার বা অন্য কোনো স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে মন দিতাম, তবে আজ নিজেকে অনেক বেশি উন্নত করতে পারতাম। আমি বুঝতে পেরেছি, টাকা উপার্জন আর নিজের উন্নয়নের জন্য কাজ শেখা কত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কেউ শেখায়নি। আমাদের মানসিকতায় মিশে ছিল — সব খরচ বাবা-মা মেটাবেন।

কী করলে বাংলাদেশেও এগিয়ে আসা যাবে?

শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রীষ্মকালীন ও খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
অভিভাবক ও সমাজকে সচেতন করে ছাত্রদের কাজ শেখার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
স্কুল-কলেজ পর্যায়ে আর্থিক শিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্টের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রযুক্তি ও ডিজিটাল দক্ষতা শেখানো হোক, যাতে তারা ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন কাজেও পারদর্শী হয়।

জীবন শুধু পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ নয়। শৈশব থেকেই অর্থ উপার্জন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আত্মনির্ভরশীলতার শিক্ষা নিতে হবে। আমেরিকার মতো আমাদের শিক্ষার্থীরাও যেন গ্রীষ্মকালীন কাজের সুযোগ পায়, নিজেদের উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে তোলে। এতে ভবিষ্যতের প্রতিটি প্রজন্ম হবে আরও শক্তিশালী, স্বাধীন এবং সফল।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test