মৃত্যুর মিছিল শেষ হবে কবে?
দিলীপ কুমার চন্দ
“আজও খুন, আজও ধর্ষণ, আজও লুটপাট”—এ যেন এখন আমাদের প্রাত্যহিক বাস্তবতা। বাংলাদেশের জনজীবন আজ এমন এক চরম অনিশ্চয়তা ও ভয়ের মধ্যে বন্দী, যেখানে প্রতিদিন পত্রিকার শিরোনাম হয় হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক দমন, নারী নির্যাতন, বা সন্ত্রাসী তাণ্ডবের খবর। মানুষ যেন একটি মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে, যার শেষ কোথায় কেউ জানে না।
এই পরিস্থিতি শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, এটি একটি সমাজের ভেতরে বসবাস করা কোটি মানুষের নিরাপত্তাহীনতার প্রতিচ্ছবি। প্রশ্ন এখন একটাই—এ মৃত্যুর মিছিল কবে থামবে?
প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু, কমছে মানবতা
জাতীয় দৈনিকগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১১ মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৫ জনের বেশি মানুষ খুন হয়েছে (রাজনৈতিক, পারিবারিক ও সন্ত্রাসজনিত কারণে)। প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন ৯-১০ জন নারী ও শিশু, যার অনেকগুলো ঘটনায় বিচার হয়নি। প্রতিমাসে ২০০টির বেশি লুটপাট ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে, অনেকসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত শতাধিক, ধ্বংস হয়েছে বাড়িঘর, দোকান, উপাসনালয়।
এই মৃত্যুর পেছনে দায়ী কে বা কারা?
১. দায়মুক্তির সংস্কৃতি: বিচারহীনতা এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি। খুন বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বিচার হয় না, বা হয় অনেক দেরিতে। অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে রক্ষা পায়।
২. রাজনীতির সহিংস রূপ: ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আজ রাজনীতি সাধারণ মানুষের জীবনে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করতে রাস্তায়, সভায়, এমনকি বাসা বাড়িতে হামলা চালানো হচ্ছে।
৩. দুর্বল প্রশাসন ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: পুলিশ, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থায় দলীয়করণ, ঘুষ, ভয় বা রাজনৈতিক চাপে অনেকেই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। ফলে অপরাধীর সাহস বাড়ছে।
৪. সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক শূন্যতা: পরিবারে, স্কুলে, সমাজে মানবিক মূল্যবোধ, সহনশীলতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করছে।
গত এক বছরে কিছু ভয়ংকর ঘটনার সংক্ষিপ্ত চিত্র
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, চট্টগ্রামে রাজনৈতিক সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। ৫ নভেম্বর ২০২৪, নোয়াখালীতে গণধর্ষণের পর কিশোরীর আত্মহত্যা শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশের সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ২ জন নিহত হন। ২৬ মার্চ ২০২৫, রংপুরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ১৫ জুন ২০২৫, ফরিদপুর বাজারে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জনমনে কী প্রভাব ফেলছে এই পরিস্থিতি?
নিরাপত্তাহীনতা: নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা এখন রাতে একা ঘরে থাকতে ভয় পান।
মানসিক চাপ: আতঙ্ক, বিষণ্নতা ও অনিশ্চয়তায় মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
আস্থা হারানো: রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার ওপর মানুষের বিশ্বাস দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: প্রতিবেশী–স্বজনদের ওপরও সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে।
কীভাবে থামানো যাবে এই মৃত্যুর মিছিল?
১. নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচার: সব রাজনৈতিক, সামাজিক, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। "জিরো টলারেন্স" নীতিকে কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।
২. রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও শুদ্ধি অভিযান: দলীয় স্বার্থে অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। শুদ্ধি অভিযানে দলীয় দোষীদেরও বাদ দেওয়া যাবে না।
৩. প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া: পুলিশ ও প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সুশিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা ও মানবিকতা ভিত্তিক শিক্ষা দিতে হবে। সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়তে হবে শৈশব থেকেই।
৫. গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে শক্তিশালী করা: সত্য প্রকাশে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও নাগরিক আন্দোলনকে প্রাধান্য দিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা শক্তিশালী করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রতিটি খবরে এখন রক্ত, কান্না ও শোক। যে মৃত্যু প্রতিদিন আমাদের চারপাশে ঘটছে—তা যেন আর কেবল সংখ্যার হিসাব নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের বিবেকহীনতার প্রতিচ্ছবি।
এ মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে দরকার সাহসী সিদ্ধান্ত, স্বচ্ছ নেতৃত্ব এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। নইলে আমাদের সন্তানরাও এই রক্তাক্ত অভিশাপের ভার বয়ে বেড়াবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।
পাঠকের মতামত:
- স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সভা
- গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল
- বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদের বাসা থেকে সোয়া ২ কোটি টাকার চেক উদ্ধার
- ইসরায়েল পদক্ষেপ না নিলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য
- রাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প, দেশে দেশে সুনামি সতর্কতা
- গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় মামলা
- ফরিদপুরে রাতের অন্ধকারে একটি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ভাঙচুর
- ‘শুল্ক কমানোর সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ’
- বৃহস্পতিবার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
- ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জরুরি সংস্কার চায় বিএনপি’
- ‘জুলাই সনদের খসড়া বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক’
- ‘সরকার অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে’
- লংগদুতে সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত
- সাতক্ষীরা সদরের ডিবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু
- সাতক্ষীরায় শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি সভা অনুষ্ঠিত
- ফরিদপুরে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার, ইয়াবা উদ্ধার
- সিলেটে ডঃ আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের সভা অনুষ্ঠিত হয়
- কুড়িগ্রামে জুলাই সংগঠক জোবায়ের হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
- এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের কঠিন প্রতিপক্ষ
- নতুন ভোটার হচ্ছেন ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার
- আগস্টের শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা
- শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট, র্যাংকিংয়ে টানা উন্নতি
- বোয়ালমারীতে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- পাংশায় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
- সালথায় ৬০টি চায়না দুয়ারী জাল জব্দ, এক জেলের জরিমানা
- শীত আসতেই মুখ-হাত-পায়ে চামড়া উঠছে, কী করবেন?
- বেলকুচিতে জনমত জরিপে এগিয়ে বদিউজ্জামানের মোটরসাইকেল
- কমলনগরে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আটক
- হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় মামলা
- রাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প, দেশে দেশে সুনামি সতর্কতা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা