E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

অপরাধ অর্থ মানসিক রোগ নয়, ন্যায়বিচারের পথে সহানুভূতির ছলনা 

২০২৫ জুলাই ২৩ ১৭:১৭:৩২
অপরাধ অর্থ মানসিক রোগ নয়, ন্যায়বিচারের পথে সহানুভূতির ছলনা 

আবীর আহাদ


ইদানিং আমরা এমন এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে নৃশংস অপরাধীদের 'মানসিক রোগী' বলে চিহ্নিত করার প্রবণতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। শিশু হত্যাকারী, সিরিয়াল কিলার, ধর্ষক, দাঙ্গাবাজ বা সংঘবদ্ধ সহিংসতার উস্কানিদাতারা অনেক সময়ই ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলে চিত্রিত হন- যেন তাদের অপরাধ কোনো বিবেচনাতেই পূর্ণদায়ী নয়!

এ প্রবণতা সমাজে একটি গভীর নৈতিক সংকট ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। কারণ, যদি শয়তানকে কেবল একজন মানসিক রোগী হিসেবে দেখা হয়, তাহলে সমস্ত শয়তানি মনোভাব ও কৃতকর্মের জন্যও একই যুক্তি প্রয়োগ করতে হবে। এমন যুক্তি দাঁড় করালে, সব ধরনের হিংস্রতা, পাশবিকতা, অন্যায়, অত্যাচার ও নৃশংসতার জন্য অপরাধীর নয়, বরং চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়াটাই যথার্থ হবে। এই ‘সহানুভূতি’ তখন আর সহানুভূতি থাকে না, বরং সেটা হয়ে ওঠে অপরাধের প্রতি এক ধরনের মৌন অনুমোদন।

মানসিক রোগ একটি বাস্তব চিকিৎসাগত অবস্থা, যা সহানুভূতির দাবিদার। কিন্তু সেই সহানুভূতি তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন রোগী সচেতন নয়, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে এবং অন্যকে ক্ষতি করার মানসিকতা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অথচ বহু অপরাধী পরিকল্পিতভাবে, সচেতন অবস্থায় অপরাধ সংঘটন করে—প্রমাণ লোপাট করে, পালিয়ে বেড়ায়, এবং নিজের দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে মানসিক রোগের ছদ্মবেশ গ্রহণ করে।

এটি শুধুমাত্র ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে না, বরং সত্যিকারের মানসিক রোগীদেরও ছোট করে। কারণ অপরাধীকে মানসিক রোগী বললে প্রকৃত রোগীদের ওপরও এক ধরনের সন্দেহ ও বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়, যা তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

বিশ্বজুড়েই এমন বহু নজির রয়েছে যেখানে মানসিক রোগের দোহাই দিয়ে অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেছে। কখনো কখনো মিডিয়া, কখনো মানবাধিকার কর্মী, বা কখনো আইনজীবীর ভাষাতেই এমন 'রোগ' চিত্রায়িত হয়, যা বাস্তবে একেবারেই প্রমাণিত নয়।

তাই সমাজকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কী এমন এক ব্যবস্থা চাই, যেখানে অপরাধের বিচার হয় অপরাধের ভিত্তিতে? নাকি আমরা এমন এক সমাজ গড়ে তুলব, যেখানে সহানুভূতির নামে শয়তানকেও বেকসুর ছেড়ে দেয়া হবে?

ন্যায়বিচার তখনই টিকে থাকে, যখন তা আবেগ নয়, যুক্তি ও নৈতিক অবস্থানের ওপর দাঁড়ায়। অপরাধীদের জন্য সহানুভূতির নামে দায়মুক্তির পথ তৈরি করাটা আসলে ন্যায়বিচারের মুখে চপেটাঘাত — আর সমাজের সেই আঘাতের ক্ষত সুস্থ হতে বহু সময় লেগে যায়।

চূড়ান্ত বার্তা: অপরাধীকে ‘মানসিক রোগী’ বলার আগে দেখতে হবে, সে কি সত্যিই অসুস্থ, নাকি এটা শুধু বিচারের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একটি পরিকল্পিত কৌশল? সমাজকে শিখতে হবে- অপরাধের প্রতি সহানুভূতি নয়, বরং সচেতন প্রতিরোধই হলো প্রকৃত মানবতা।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test