E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সত্য এখন জবাইখানায় : কণ্ঠ তুললেই কণ্ঠ কেটে দেওয়া হয়

২০২৫ আগস্ট ০৯ ১৭:২২:৪১
সত্য এখন জবাইখানায় : কণ্ঠ তুললেই কণ্ঠ কেটে দেওয়া হয়

মীর আব্দুল আলীম


বাংলাদেশে আজকাল ‘সত্য’ বলাটা এমন এক খেলা, যার প্রথম পুরস্কার-শবদেহ। কেউ প্রতিবাদ করবে? হ্যাঁ, করলে লাশ হবে। সাহস দেখালে শাস্তি নিশ্চিত, তবে তা আদালতের নয়- প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা গরম রক্তে রঙ্গা করে রাজ পথ। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে লাইভে গাজীপুরে সাহসী সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলায় ঐ সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।  তাঁর পিছনে ছিলেন না কোনো মিডিয়া কনগ্লোমারেট, ছিল না নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারা। ছিল কেবল সত্য বলার মনোবল। ঐদিন বিকেলে লাইভে এসে কথা বলার সেই মনোবলই তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রকাশ্যে কুপিয়ে, গলা কেটে, এমনভাবে হত্যা করা হয় যাতে ভয় ছড়িয়ে পড়ে প্রত্যেক সাংবাদিকের মনে।

এই ঘটনার পেছনে কোনো খুনির ‘হঠাৎ রাগ’ নেই, আছে কৌশল, পরিকল্পনা, বার্তা-“দেখো, আমাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পরিণতি।” এমন এক জনসমক্ষে জবাই যা কেবল একজন মানুষকে নয়, পুরো পেশাকে ভয়ে কুঁকড়ে দিল। রাষ্ট্র, প্রশাসন, আইন-সব মিলে যেন নীরব দর্শক, যারা গলা কাটার শব্দ শোনেও চায়ের কাপে চুমুক দেয়। গাজীপুরের সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডটি যেন এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই নির্যাতনের ইতিহাসে। এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি বার্তা-সাংবাদিকরা যেন আর সাহস না দেখায়। এমন কৌশলে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, যেন সবাই ভয় পায়। এই ঘটনাটি স্পষ্ট করে দেয়, অপরাধীরা কতোটা সংগঠিত এবং আত্মবিশ্বাসী যে তারা প্রকাশ্য প্রতিবাদের জবাবে সরাসরি হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। এটি আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা। আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, এমন হত্যাকাণ্ড ঘটার পরও অপরাধীরা ধরা পড়ে না, বা ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এতে শুধু সাংবাদিকরাই নয়, পুরো সমাজ আতঙ্কিত। এই ধরণের ঘটনায় কেবল একজন ব্যক্তি নিহত হন না, বরং সমাজের প্রতিবাদী কণ্ঠগুলো স্তব্ধ হয়ে যায়।গাজীপুরের ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়-এ দেশে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মুখ খুললে প্রাণ দিতে হয়।

বাংলাদেশে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৯ জন সাংবাদিক হত্যা এবং ১২০-এর অধিক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এদের অনেকেই নিহত হয়েছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক চক্র বা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর কারণে। অধিকাংশ ঘটনাতেই দেখা যায়, নিহতদের পরিবার ন্যায়বিচার পায় না। মামলা হয়, কিন্তু বিচার হয় না। অনেক সময় প্রভাবশালী মহলের চাপে তদন্ত ঝিমিয়ে পড়ে। সাংবাদিকদের হত্যা বা নির্যাতনের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে মফস্বলে, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল এবং সাংবাদিকরা প্রায়ই একা হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। সাংবাদিক হত্যা মানে সত্যের কণ্ঠরোধ করা। যখন সাংবাদিকরা নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেও রিপোর্টিং করেন, তখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব হয় তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকার এসব হত্যাকাণ্ডে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে আতঙ্ক, সংকুচিত হচ্ছে মত প্রকাশের পরিসর। আজ শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ মানুষও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ী খুন, রাজনৈতিক বিরোধে গৃহবধূ খুন, ছিনতাইয়ে পথচারী নিহত-এসব খবর এখন প্রতিদিনকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে মানুষ ভয় পায় পুলিশে যেতে, মামলা করতে বা প্রতিবাদ জানাতে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সাধারণ নাগরিক হত্যার সংখ্যা প্রায় ২৭০০ ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা শুধু পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি নামের পেছনে আছে একটি পরিবার, একটি জীবনের স্বপ্নভঙ্গ। এর পেছনে মূলত কাজ করছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সন্ত্রাস, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং বিচারহীনতা। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ নিরুপায়। তারা নিজের নিরাপত্তার জন্য নিজেই সচেষ্ট হতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে সমাজে আস্থা ও মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন হলো- তথ্য ও সত্য প্রকাশের শত্রু কারা? সত্য প্রকাশের মূল শত্রু হলো ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্তচক্র। তারা হতে পারে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক কিংবা ধর্মীয়-যাদের স্বার্থে আঘাত লাগে সত্য বললে। এই গোষ্ঠীগুলো সাংবাদিকদের ভয় পায়, কারণ তারা জানে সত্যই সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এই চক্রগুলো নিজেরা আইনকে পাশ কাটিয়ে চলে এবং যখন কেউ তাদের মুখোশ উন্মোচন করে, তখন তারা ভয়ংকর প্রতিশোধ নেয়। অনেক সময় মিডিয়া মালিকরাও এই চক্রের সঙ্গে হাত মেলান, ফলে মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিক একা হয়ে পড়েন। আর তখনই তারা হয়ে ওঠেন সহজ টার্গেট। বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় বিচারহীনতার ইতিহাস যেন এক ভয়াল কালো অধ্যায়।

বিগত তিন দশকের পরিসংখ্যান বলছে-৯০ শতাংশ মামলাই হয় বছরের পর বছর ঝুলে থাকে, না হয় গোপনে ধামাচাপা পড়ে যায়। এখানে অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার পেছনে তিনটি বড় কারণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে—তদন্তে গাফিলতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং দুর্বল সাক্ষ্যগ্রহণ ব্যবস্থা। তদন্ত সংস্থার অনীহা কিংবা অদক্ষতা অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়, আর রাজনৈতিক প্রভাব তাদেরকে ‘অস্পৃশ্য’ করে তোলে। যখন একজন খুনি বা হামলাকারী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং রাষ্ট্র তাকে ধরতে চায় না, তখন বার্তা যায়-“অপরাধ করো, কিছু হবে না।” এর ফলে কেবল সাংবাদিক নয়, পুরো সমাজে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায়। বিচারহীনতা সাংবাদিকতার সাহসকে গলাটিপে হত্যা করে এবং দেশের নৈতিক কাঠামোকে ভেতর থেকে গুঁড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এখন প্রায় ‘নিজ দায়িত্বে বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া’র সমার্থক হয়ে গেছে। অধিকাংশ সাংবাদিকের নেই কোনো বীমা সুবিধা, নেই আইনগত সহায়তা, নেই সামাজিক নিরাপত্তা। তাদের কাজের পরিবেশও ক্রমেই শত্রুভাবাপন্ন-বেতনের নিশ্চয়তা নেই, সম্মানী নামমাত্র, আর মালিকপক্ষের ব্যবসায়ী বা রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে রিপোর্টিংয়ে স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সীমিত। মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করেন, তারা প্রতিদিন হুমকি, মামলা ও শারীরিক আক্রমণের মুখোমুখি হন। অথচ যখন প্রকৃত বিপদ এসে দরজায় কড়া নাড়ে, তখন মালিকপক্ষ কিংবা কর্তৃপক্ষ অনেক সময় দায় এড়িয়ে চলে যায়- ‘আমাদের কিছু করার নেই’ বলে সাংবাদিককে একা ছেড়ে দেয়। এই একাকীত্ব শুধু তাদের মনোবল ভেঙে দেয় না, বরং তাদের সহজ টার্গেটে পরিণত করে। ফলে প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্টে তারা কাজ করেন এক ধরনের আতঙ্ক ও অবিশ্বাস নিয়ে। যখন রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তা নিছক একটি প্রশাসনিক ত্রুটি নয়-এটি সরকারের নৈতিক ও সাংবিধানিক ব্যর্থতা। বিশেষত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে, যারা জনগণের তথ্য জানার অধিকার রক্ষায় কাজ করেন, তাদের ওপর আক্রমণ হলে সরকারের প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত দ্রুত, দৃঢ় ও নিরপেক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক সময় সরকারপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গণমাধ্যম ঘটনাটি প্রচার করে না, কিংবা ক্ষুদ্র আকারে এমনভাবে তুলে ধরে যাতে জনগণের মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হয়। বিচার না করে অপরাধীদের রক্ষা করা শুধু সরকারের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং গণতন্ত্রের মেরুদণ্ডকেও চূর্ণ করে দেয়। রাষ্ট্র যদি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তবে সেই ব্যর্থতা গোটা সমাজে ভয় ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে দেয়।

আজকের বাংলাদেশে সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষের মনস্তত্ত্বে যে ভীতি বাসা বেঁধেছে, তার বড় উৎস এই বিচারহীনতা। চোখের সামনে সাংবাদিক খুন হচ্ছে, মানবাধিকারকর্মী নিখোঁজ হচ্ছে, প্রতিবাদকারীরা গুম হয়ে যাচ্ছে-এসব দৃশ্য বারবার দেখা মানে মানুষ নিজের ভেতর নিরাপত্তাহীনতার গভীর ক্ষত তৈরি করে নিচ্ছে। ফলস্বরূপ, কেউ আর সোজাসাপ্টা কথা বলতে চায় না, কেউ রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায় না। সমাজ ক্রমে চুপচাপ, নিষ্ক্রিয় ও আত্মমুখী হয়ে পড়ে। এই নীরবতা ভেতর থেকে সমাজকে দুর্বল করে এবং মানুষ যখন রাষ্ট্রের ওপর আস্থা হারায়, তখন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এর ফল—অরাজকতা, প্রতিশোধপরায়ণতা ও নৈরাজ্য, যা কেবল অপরাধীদের পক্ষে কাজ করে। গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সব গণমাধ্যম সমান নয়-এটি বাস্তবতা। কিছু মিডিয়া এখনও নিরপেক্ষতার মানদণ্ড বজায় রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু অনেকে রাজনৈতিক দল বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতিয়ার হয়ে গেছে। ফলে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলো অনেক সময় ধামাচাপা পড়ে যায় অথবা এমনভাবে উপস্থাপিত হয় যাতে আসল বার্তা বিকৃত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, হামলার খবরকে ‘অভিযোগ’ আকারে ছোট করে দেখানো, অথবা ভিকটিমের বদলে অপরাধীর পক্ষে সাফাই গাওয়া।

এই বিভাজন সাংবাদিকদের জন্য শুধু একটি নিরাপত্তা সংকট তৈরি করে না, বরং পাঠকের মধ্যেও চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যখন মানুষ আর সংবাদমাধ্যমের ওপর আস্থা রাখতে পারে না, তখন সত্য ও মিথ্যার সীমারেখা ঘোলাটে হয়ে যায়, আর এর সুযোগ নেয় ক্ষমতাবানরা। একজন সাংবাদিক খুন হলে বা হামলার শিকার হলে আমাদের নাগরিক সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা কতটা সোচ্চার হন? এই প্রশ্নের উত্তর ভয়াবহভাবে হতাশাজনক। যাঁরা একসময় গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আজ তাঁদের অনেকেই হয় রাজনৈতিক সুবিধাভোগী হয়ে গেছেন, নয়তো ভয়ভীতির কারণে চুপ করে আছেন। এই নীরবতা কেবল একটি অবস্থানহীনতার পরিচায়ক নয়-এটি কার্যত অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সমান। নাগরিক সমাজ যদি সাহসী প্রতিবাদ না করে, তবে অপরাধীরা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং রাষ্ট্রের দমননীতি আরও নির্মম হয়। নীরবতা এখানে শুধু নৈতিক অপরাধ নয়, বরং অপরাধকে উৎসাহিত করার একটি হাতিয়ার।

বাংলাদেশের রাজপথে এখন প্রতিবাদ শব্দটি ‘ঝুঁকি’ আর সাংবাদিকতা শব্দটি ‘জরুরি অবস্থা’। আর যারা শুধু সাধারণ মানুষ, তারা তো প্রহর গুনছে—কখন, কোথায়, কোন অপরাধীর হাতে শেষ হবে তাদের দৈনন্দিন জীবন? এই বাস্তবতায় চোখ বন্ধ করলে লাভ নেই। রাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে-তারা কি সত্যের পক্ষে থাকবে, নাকি রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে একটি আপোসের সমাজ গড়বে? আজকের প্রশ্ন একটিই-একটি সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে যদি জীবন দিতে হয়, তাহলে আগামীকাল কে লিখবে এই সমাজের ইতিহাস? এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পৃথক আইন প্রণয়ন; সাংবাদিকদের বিশেষ পেশাগত ঝুঁকি বিবেচনায় আলাদা আইন তৈরি করতে হবে, যা হামলা বা হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করবে।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চালু করা: মামলা বছরের পর বছর না ঝুলে থাকে, সে জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করতে হবে। এই আইন বর্তমানে সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধে ব্যবহৃত হচ্ছে; বরং এটিকে তাদের সুরক্ষার হাতিয়ার বানাতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য ইনস্যুরেন্স ও আইনি সহায়তা ফান্ড গঠন করতে হবে। প্রতিটি সাংবাদিক যেন বিপদের সময় চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা পান, তা রাষ্ট্র ও মালিকপক্ষের যৌথ উদ্যোগে নিশ্চিত করতে হবে। মিডিয়া হাউজগুলোকে রাজনৈতিক বা ব্যবসায়ী প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো আন্দোলন টেকসই হয় না; তাই সমাজের প্রতিটি স্তরে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

সবাই বাঁচতে চায়। সাংবাদিকও। সাধারণ মানুষও। কিন্তু এই দেশে বেঁচে থাকার শর্ত কী? চুপ থাকা? অন্যায়ের সঙ্গে আপস করা? সাংবাদিক খুন হচ্ছে, কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। বিচার হয় না। অপরাধীরা হাসছে, যাদের কণ্ঠ থেমে গেছে তারা শুয়ে আছে মাটির নিচে। রাষ্ট্র যদি চায় মানুষ চুপ থাকুক, তবে সেটা বলুক। অন্তত আমরা জানবো আমাদের জন্য কোথাও কোনও নিরাপত্তা নেই। গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট নয়, মানুষ কথা বলবে-এটাই তো মৌলিক অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারাও এখন যেন নির্বাক। আমরা কি তবে এক নীরব গণকবরে দাঁড়িয়ে আছি-যেখানে শুধু মৃত কণ্ঠগুলোর প্রতিধ্বনি শোনা যায়? এখনই সময় সাহস নিয়ে, একযোগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।

লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত:

০৯ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test