ফার্মাসিস্টদের হাতে স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যত

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস প্রতি বছর ২৫ সেপ্টেম্বর পালিত হয়। এই দিনটি ফার্মাসিস্টদের পেশাগত অবদান, দায়িত্ব ও সমাজে তাদের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেয়। ২০২৫ সালে দিবসটি বাংলাদেশের ফার্মেসি পেশার জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি ফার্মাসিস্টদের পেশাগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে কাজ করছে।
ফার্মাসিস্টরা শুধু ওষুধ বিক্রেতা নয়; তারা রোগীর নিরাপদ চিকিৎসা, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, গবেষণা, উন্নয়ন, এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ফেডারেশন (FIP) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বারবার ফার্মাসিস্টদের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশার বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩টি সরকারি ও ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি শিক্ষা প্রদান করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রতি বছর আনুমানিক ১,৪৫০–১,৫০০ জন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট স্নাতক হন। তবে, কর্মসংস্থান সীমিত হওয়ায় প্রায় ৯৮০ জন ফার্মাসিস্ট স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিয়োজিত হন, বাকিরা বেকার থাকেন বা অন্যান্য পেশায় চলে যান।
ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ (PCB) ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ২ লাখের বেশি ফার্মাসিস্টকে নিবন্ধিত করেছে। যদিও নিবন্ধন সংখ্যা অনেক, কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ ফার্মাসিস্ট হাসপাতাল বা ক্লিনিক্যাল ফার্মেসিতে কর্মরত নন। এর ফলে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
ফার্মাসিস্টদের একটি বড় অংশ কমিউনিটি ফার্মেসি, বেসরকারি হাসপাতাল, ওষুধ উৎপাদন শিল্প এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত। তাদের পেশাগত দক্ষতা, সততা ও গবেষণামূলক অবদান বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছে।
বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের উন্নয়ন
বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প গত দশকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। ২০২৪ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল বাজারের আকার ৩.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা ১৭.৭% প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। দেশের ৯৮% ওষুধ চাহিদা স্থানীয়ভাবে পূরণ হয় এবং ১৮২টি দেশে রপ্তানি করা হয়। ২০২৪ সালের প্রথম দশ মাসে ফার্মাসিউটিক্যাল রপ্তানি ৩.৪৬% বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৭.৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।
ফার্মাসিস্টরা এই শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, বিশেষ করে: * ওষুধ উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ * গবেষণা ও উন্নয়ন * উৎপাদন পরিকল্পনা এবং বিপণন * ডিসপেন্সিং ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ারস * বিজনেজ ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক রপ্তানিফার্মাসিস্টদের দক্ষতা ও নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বৈশ্বিক মানে প্রতিযোগিতামূলক। এই শিল্পের উন্নয়নে বিশেষভাবে A-গ্রেড ফার্মাসিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
ফার্মাসিস্টদের পেশাগত ভূমিকা ও চ্যালেঞ্জ
ফার্মাসিস্টরা রোগীর নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে:
* ওষুধের সঠিক ব্যবহার নির্ধারণ * পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ডোজ নির্ধারণ * রোগীকে ওষুধ সম্পর্কিত পরামর্শ ও শিক্ষা প্রদান।
এছাড়া তারা হাসপাতাল, ক্লিনিক, কমিউনিটি ফার্মেসি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তবে, বাংলাদেশে অধিকাংশ ফার্মাসিস্ট ফ্যাক্টরি বা উৎপাদন ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসির উন্নয়নে এদের অংশগ্রহণ খুব কম।
উন্নত দেশগুলোতে A-গ্রেড ফার্মাসিস্টরা ডাক্তারদের পাশাপাশি রোগীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, ওষুধ ব্যবস্থাপনা ও রোগ নিরাময়ে সরাসরি অংশ নেন। WHO এবং FIP বারবার নির্দেশ করে যে, ফার্মাসিস্টরা স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রোগীদের নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিস্টরা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ২০২৫ সালে FIP-এর থিম হলো “Pharmacy: Advancing Access, Care and Health”, যা ফার্মাসিস্টদের শিক্ষা, দক্ষতা ও পেশাগত অবদানকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেয়।
ফার্মাসিস্টরা নতুন ওষুধ আবিষ্কার, মান উন্নয়ন, জনসচেতনতা এবং রেগুলেটরি নিয়মাবলী নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আন্তর্জাতিক উদাহরণে দেখা যায়, উন্নত দেশগুলোতে ফার্মাসিস্টরা হাসপাতাল ও ক্লিনিক্যাল সেটিংয়ে রোগীর চিকিৎসা পরিকল্পনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে থাকেন।
ফার্মাসিস্টদের দক্ষতা শুধুমাত্র রোগী সেবা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়; তারা গবেষণা, নতুন ওষুধ উদ্ভাবন, এবং স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুপারিশ
বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা বৃদ্ধির জন্য সুপারিশসমূহ:
১. হাসপাতাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসিতে নিয়োগ বৃদ্ধি: রোগীর নিরাপদ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।
২. ফার্মেসি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন: আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদান করে দক্ষতা বৃদ্ধি।
৩. পেশাগত স্বীকৃতি ও মর্যাদা বৃদ্ধি: ফার্মাসিস্টদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া ও কর্মপ্রেরণা বৃদ্ধি।
৪. গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ: নতুন ওষুধ আবিষ্কার ও উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা।
৫. কমিউনিটি ফার্মেসি ও পাবলিক হেলথে ভূমিকা বৃদ্ধি: জনগণের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন।
পরিশেষে বলতে চাই, বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস ২০২৫ শুধু একটি সাধারণ উদযাপন নয়; এটি ফার্মাসিস্টদের পেশাগত অবদান এবং স্বাস্থ্যসেবায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধির একটি অনন্য সুযোগ। বাংলাদেশের ফার্মাসিস্টরা শুধুমাত্র ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং তারা রোগীর নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিত করা, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, গবেষণা ও উন্নয়ন, এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
ফার্মাসিস্টদের দক্ষতা, শিক্ষা এবং নিষ্ঠা দেশের ওষুধ শিল্প ও স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আরও সমৃদ্ধ করছে। দেশের ফার্মাসিস্টরা বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, কমিউনিটি ফার্মেসি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তবে, তাদের কর্মসংস্থান এবং পেশাগত স্বীকৃতির সুযোগ সীমিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই পূর্ণ মাত্রায় অবদান রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
যদি ফার্মাসিস্টদের মর্যাদা, কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়, তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত আরও উন্নত ও কার্যকর হবে। বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সর্বজনীন করা এবং ফার্মাসিস্টদের পেশাগত গুরুত্বকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেওয়া। এটি একটি আহ্বান যে, ফার্মাসিস্টদের কার্যকর অংশগ্রহণ ছাড়া সুস্থ সমাজ ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
পাঠকের মতামত:
- ঝিনাইদহে সংবাদ সংগ্রহে বাধা, ৩ সাংবাদিককে হুমকি-লাঞ্ছিত করলেন আওয়ামী লীগ নেতা
- বাগেরহাটে নির্বাচন অফিসে অবস্থান ধর্মঘট, চলছে জেলাব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ
- সালথায় গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
- বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ডে আবারো বর্ষসেরা প্রতিষ্ঠানের সম্মাননা পেলো ওয়ালটন
- জিটি ৩০ ৫জি উন্মোচন করলো ইনফিনিক্স
- পদ্মার এক পাঙ্গাশ সাড়ে ৬২ হাজার টাকায় বিক্রি
- গৌরনদীতে বিরোধপূর্ণ জমিতে ফিলিং স্টেশন নির্মাণ, স্থগিতের নির্দেশ আদালতের
- পরিবেশ ও স্বাস্থ্য: বাংলাদেশের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন
- ৫ মাসে গৌরনদীর দুই ইউএনও’র বদলী
- শ্যামনগরে জলবায়ু ধর্মঘট
- ব্যস্ত কুমোরটলির প্রতিমাশিল্পীরা, চলছে পূজার আয়োজন
- সুপার অ্যাপ ক্যাটাগরিতে সুপারব্র্যান্ডস অ্যাওয়ার্ড জিতলো পাঠাও
- জুতার গণতন্ত্র বনাম ডিমতন্ত্র: প্রতিবাদের নতুন ইতিহাস
- সত্য ও মিথ্যা: প্রকৃতির বৈপরীত্য
- মহম্মদপুরে বন্ধুত্বের টানে বিবাহহীন জীবন দুই বন্ধুর
- দুর্গাপূজা: কেউ মূর্তি ভাঙ্গে, কেউ চুপ থাকে!
- সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারতীয় নাগরিকসহ ১০ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর
- প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের সাধারণ সভা সম্পন্ন
- সাতক্ষীরায় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
- ‘নির্বাচিত হলে কাপাসিয়ার সাধারণ মানুষের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবো’
- কুড়িগ্রামে ঐতিহ্যবাহী বউ-শাশুড়ি মেলা
- জাতিসংঘ মিশন রাজনীতি: ইউনুসের বগলতলে বিএনপি জামায়াত এনসিপি
- ফার্মাসিস্টদের হাতে স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যত
- ফিরিঙ্গিবাজারে সড়ক দখল করে ‘ওরশ বিরিয়ানি’র দোকান
- সালথা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
- এবার 'আন্ধার'-এ আফসানা মিমি
- সালথায় সাদা শাপলার সৌন্দর্যে মন কেড়েছে সবার
- শ্যামনগরে জলবায়ু ধর্মঘট
- ব্যস্ত কুমোরটলির প্রতিমাশিল্পীরা, চলছে পূজার আয়োজন
- সর্বধর্ম সমন্বয় ও ধর্মনিরপেক্ষতা
- একাত্তরের কথা
- বুধবার সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিক্ষোভ
- মহম্মদপুরে বন্ধুত্বের টানে বিবাহহীন জীবন দুই বন্ধুর
- রাহুল রাজের প্রেমের কবিতা
- আটলান্টায় ফোবানা সম্মেলন পরিণত হলো পারিবারিক অনুষ্ঠানে
- মজাদার তালের বড়া বানাবেন যেভাবে
- সুপার অ্যাপ ক্যাটাগরিতে সুপারব্র্যান্ডস অ্যাওয়ার্ড জিতলো পাঠাও
- মে দিবসের কবিতা
- বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস : লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়
- ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিন, এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবো’
- গৌরনদীতে বিরোধপূর্ণ জমিতে ফিলিং স্টেশন নির্মাণ, স্থগিতের নির্দেশ আদালতের
- গোলমরিচ ও তেজপাতার গল্প
- বাংলাদেশের এশিয়া কাপ মিশন শুরু আজ
- পদ্মার এক পাঙ্গাশ সাড়ে ৬২ হাজার টাকায় বিক্রি
- আগুনে পুড়ে গেলে তাৎক্ষণিক যা করবেন