E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ছাঁটাই আতঙ্ক, ব‍্যাংক খাতে নতুন অস্থিরতা

২০২৫ অক্টোবর ০৬ ১৮:০৩:১৫
ছাঁটাই আতঙ্ক, ব‍্যাংক খাতে নতুন অস্থিরতা

চৌধুরী আবদুল হান্নান


ডুবে যাওয়া ব‍্যাংক ও আর্থিক খাত টেনে তুলতে চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার, এতদিনে তা অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব‍্যাংক খাত কেন ডুবে গেল, অর্থ লুটের হাট বসলো তা কারও অজানা নয়।

এখানে ব‍্যাংক কর্মচারীদের অপরাধ কতটুকু? তারা তো কেবল নির্দেশ পালন করেছেন, তাদের চাকরিচ‍্যুত করা হবে কেন?

বাংলাদেশ ব‍্যাংক সূত্রে জানা যায়, এ বছরের প্রথম ৬ মাসে ব‍্যাংকগুলোতে চাকরি হারিয়েছেন ৯৭৮ জন, বেসরকারি ব‍্যাংকে কতজন আর সরকারি ব‍্যাংকে কতজন তা অবশ‍্য জানা যায়নি। সরকারি ব‍্যাংকেও অর্থ লোপাটের ঘটনা কম ঘটেনি।

সরকারি ব‍্যাংকে কর্মকর্তা নিয়োগ হয় কেন্দ্রীয় ব‍্যাংকের তত্ত্বাবধানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ‍্যমে এবং সেক্ষেত্রে মেধাবীরাই সুযোগ পায়। আর বেসরকারি ব‍্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা যাচাইয়ের বালাই নেই। ব‍্যাংকের মালিক বা পরিচালনা পরিষদের সদস‍্যদের ইচ্ছাই যথেষ্ট।

সরকারি ও বেসরকারি ব‍্যাংকের কাজের প্রকৃতিও কিছুটা আলাদা, বেসরকারি ব‍্যাংক সেলেক্টিভ সার্ভিস দিয়ে থাকে, গ্রাহক সংখ‍্যাও কম কিন্ত চাকরি মালিকের হাতে, মালিকের ইচ্ছায়। অন‍্যদিকে সরকারি ব‍্যাংকের শাখাগুলোতে মানুষ গিজগিজ করে, সকলের জন‍্য দ্বার খোলা কিন্ত সহজে চাকরি যায় না।ভাবতে অবাক লাগে, ব‍্যাংক ব‍্যবস্হা তছনছ করার জন‍্য যারা প্রকৃত দায়ী তাদের বিচার না করে নিরাপরাধ নিরীহ কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে।

কর্মরত একজন চাকরিজীবীকে বিনা অপরাধে ছাঁটাই করা কতটা অমানবিক তা ভেবে দেখতে হবে।ছাঁটাই করার অজুহাত খোঁজা হচ্ছে, বলা হচ্ছে, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে নীতিমালা না মেনে ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অবৈধভাবে অনেককে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। এখানে অপরাধ কার? যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের নাকি যারা চাকরি দিয়েছেন তাদের? এতদিন চাকরি করে যারা সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন, তাদের পথে বসানো হলে ব‍্যাংক ব‍্যবস্থায় নতুন করে সংকট সৃষ্টি হবে। বর্তমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির সময়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ইসলামী ব‍্যাংকের কর্মকর্তাদের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা যায়, ব‍্যাংকটির প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা চলছে। “বিশেষ দক্ষতা মূল‍্যায়ন” পরীক্ষার মাধ‍্যমে কর্মচারী ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্ষুব্ধ কর্মচারিদের।

অন‍্যদিকে আর্থিকভাবে দুর্বল দেশের ৫টি ব‍্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব‍্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে, একই সাথে কর্মচারীদের চাকরি হারানোর শঙ্কা বাড়ছে। যদিও অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব‍্যাংকের গভর্নর বলেছেন, আমানতকারীদের এবং কর্মচারীদের ভয়ের কিছু নেই।

তাদের যখন নিয়োগ হয়, ব‍্যাংক ব‍্যবস্থা তখন এক প্রকার “লাইফ সাপোর্টে” ছিল, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নিস্ক্রিয় ছিল। বেশির ভাগ নিয়োগ হয়েছে অর্থ লুটপাটকারী আর পাচারকারীদের প্রভাবে এবং তাদের উদ্দেশ‍্য সফল করার সহযোগিতার জন‍্য।

কথা সত‍্য যে, তাদের অনেকেই দুষ্টচক্রের সহযোগী ছিলেন, অপরাধ করেছেন কিন্ত মূল অপরাধী ব‍্যাংকের ব‍্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম‍্যানসহ অন‍্যান‍্য পরিচালকদের বিচারের আওতায় না এনে “ঘরের মুরগি” জবাই করা কি যুক্তি সঙ্গত হয়।

একই ঘটনায় বড় অপরাধেীকে ছেড়ে দিয়ে ছোট অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া আইনের শাসন হতে পারে না। কর্মচারী ছাঁটাই করে ব‍্যাংকিং খাতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি না করে বিকল্প ব‍্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কিনা ভাবতে হবে।

ওই সময়ে ব‍্যাংকে কোনো কাজই তো নিয়ম মেনে হয়নি, নিয়োগ প্রক্রিয়াও এর ব‍্যতিক্রম নয়। তাদের রুটি-রুজিতে হাত না দিয়ে প্রশিক্ষিত করে নেওয়া কঠিন কাজ নয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢালাওভাবে অভিজ্ঞ কর্মচারী ছাঁটাই করা শুভ কাজ নয়, সিনিয়র অফিসার, জুনিয়র অফিসার লেবেলের কর্মীদের নির্বিচারে চাকরিচ‍্যুত করা গ্রহণযোগ‍্য হতে পারে না। তবে যারা অযোগ‍্য, দলবাজ এবং নানাভাবে অগ্রহণযোগ‍্য তাদের ব‍্যাংকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বার্ষিক কর্ম মূল‍্যায়নের মাধ‍্যমে বাদ দেওয়া অধিক যুক্তিসঙ্গত হবে।

ব‍্যাংক সার্ভিসের জন‍্য শিক্ষাগত যোগ‍্যতার চেয়ে আচারণগত শিক্ষা বেশি প্রয়োজন, ভদ্র-মার্জিত স্বভাবের কর্মীবাহিনী গ্রাহকবান্ধব হয়ে থাকে। নানামুখী সমস‍্যায় থাকা ব‍্যাংক খাতের পরিস্থিতি ইতোমধ‍্যে উন্নতির দিকে, সেক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো নেতিবাচক পদক্ষেপের পরিবর্তে ইতিবাচক ভাবনা জরুরি।

ব‍্যাংক ব‍্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগে যে বিপুল অঙ্কের টাকা অপাত্রে চলে গেছে, তা ফিরিয়ে আনতে ব‍্যাংকের সকল শক্তি প্রয়োগ করার সময় এখন।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব‍্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০৬ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test