E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আর্থ্রাইটিস চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি  

২০২৫ অক্টোবর ১১ ১৮:১৩:১৮
আর্থ্রাইটিস চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি  

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১২ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস (World Arthritis Day)। ১৯৯৬ সালে ইউরোপিয়ান এলায়েন্স অব অ্যাসোসিয়েশনস ফর রিউমাটোলজি (EULAR) প্রথম এই দিবস পালন শুরু করে। আজ এটি একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য-আন্দোলন।২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য — “আপনার স্বপ্ন পূরণ করুন” — আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আর্থ্রাইটিস কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং এটি সচেতনতা, চিকিৎসা ও মানসিক দৃঢ়তার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এই প্রতিপাদ্য RMDs (Rheumatic and Musculoskeletal Diseases) নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষদের স্বপ্ন পূরণের শক্তি জোগায়।

আর্থ্রাইটিস কী?

‘Arthritis’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Arthro’ অর্থাৎ অস্থিসন্ধি এবং ‘Itis’ অর্থাৎ প্রদাহ থেকে। অর্থাৎ, হাড়ের জোড় বা জয়েন্টে প্রদাহ বা ফোলা নিয়ে যেসব রোগ হয়, সেগুলোকেই একত্রে আর্থ্রাইটিস বলা হয়।এটি কোনো একক রোগ নয়— বরং রিউমাটয়েট আর্থ্রাইটিস, স্পনডাইলো আর্থ্রাইটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিসসহ ১২০টি বড় ধরনের রোগসহ প্রায় সাতশ রোগের সমন্বয় হলো আর্থ্রাইটিস। এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে।

আর্থ্রাইটিসের কারণ

১. জেনেটিক কারণ:- পারিবারিকভাবে আর্থ্রাইটিসের ইতিহাস থাকলে রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বিশেষত রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে জেনেটিক প্রবণতা বড় ভূমিকা রাখে।

২. অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া:- শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) নিজের জয়েন্ট টিস্যুকেই আক্রমণ করে। এটি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মূল কারণ।

৩. সংক্রমণ:- কিছু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জয়েন্টে সংক্রমণ ঘটিয়ে সেপটিক আর্থ্রাইটিস সৃষ্টি করে।

৪ . বয়স:- বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে কার্টিলেজ ক্ষয় হয়, ফলে জয়েন্টে ঘর্ষণ বাড়ে।

৫. ওজনাধিক্য:- অতিরিক্ত ওজন হাঁটু, কোমর ও গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ ফেলে— এতে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

৬. আঘাত বা ট্রমা:- পুরোনো জয়েন্ট ইনজুরি দীর্ঘমেয়াদে আর্থ্রাইটিসে রূপ নিতে পারে।

৭. হরমোনজনিত ও মানসিক কারণ:- বিশেষ করে নারীদের মেনোপজ পরবর্তী হরমোন পরিবর্তন ও মানসিক চাপ জয়েন্টে প্রদাহ বাড়ায়।

৮. পুষ্টিহীনতা ও জীবনধারা:- ভিটামিন D, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ এর ঘাটতি, ধূমপান ও মদ্যপান আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

আর্থ্রাইটিসের প্রকারভেদ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও আমেরিকান কলেজ অব রিউমাটোলজি (ACR) অনুসারে আর্থ্রাইটিসের প্রধান ধরনগুলো হলো— ১️. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis - RA): - এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে ইমিউন সিস্টেম জয়েন্টের আবরণ (synovial membrane) আক্রমণ করে। বৈশিষ্ট্য:- * সকালে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া * হাত ও পায়ের ছোট জয়েন্টে ব্যথা * সময়ের সঙ্গে জয়েন্ট বিকৃতি * ক্লান্তি, হালকা জ্বর ২.অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis - OA):- সবচেয়ে সাধারণ ধরন। এটি “Wear and tear” রোগ হিসেবে পরিচিত। বৈশিষ্ট্য: * হাঁটু, কোমর ও মেরুদণ্ডে ব্যথা * নড়াচড়ায় ঘর্ষণের শব্দ * দীর্ঘসময় হাঁটলে ব্যথা বৃদ্ধি ৩. গাউট (Gout):- রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গিয়ে জয়েন্টে ক্রিস্টাল জমা হয়। বৈশিষ্ট্য:- * হঠাৎ তীব্র ব্যথা, বিশেষ করে পায়ের বড় আঙুলে * জয়েন্ট লালচে, গরম ও ফুলে যায় ৪. অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (Ankylosing Spondylitis): - এটি মেরুদণ্ডের জয়েন্টকে প্রভাবিত করে।

বৈশিষ্ট্য: * পিঠ ও কোমরে ব্যথা * সকালে ঘুম থেকে উঠলে কড়াকড়ি * ধীরে ধীরে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যাওয়া ৫️. জুভেনাইল আইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস (Juvenile Idiopathic Arthritis - JIA):- ১৮ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। কারণ স্পষ্ট নয়, তবে জেনেটিক ও অটোইমিউন প্রভাব থাকে।

লক্ষণসমূহ

আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ প্রকারভেদে ভিন্ন হলেও সাধারণ উপসর্গগুলো হলো— * জয়েন্টে ব্যথা ও ফোলা * জয়েন্টের চারপাশে লালচে ভাব * সকালে শক্ত হয়ে যাওয়া * শরীর ক্লান্ত ও অবসন্ন অনুভব * তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বা হালকা জ্বর * জয়েন্টের আকার বিকৃত হয়ে যাওয়া * দৈনন্দিন কাজে অক্ষমতা

রোগ নির্ণয়

* রক্ত পরীক্ষা: ESR, CRP, Rheumatoid Factor (RF), Anti-CCP, ANA ইত্যাদি। * ইউরিক অ্যাসিড টেস্ট: গাউট শনাক্তে। * ইমেজিং: এক্স-রে, MRI, আল্ট্রাসাউন্ডে জয়েন্ট ক্ষয় ও প্রদাহ বোঝা যায়। * জয়েন্ট ফ্লুইড অ্যানালাইসিস: সংক্রমণ বা ক্রিস্টাল শনাক্তে।

আর্থ্রাইটিসের জটিলতা

১. চিকিৎসা না করলে আর্থ্রাইটিস ধীরে ধীরে জীবনমানের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

২. স্থায়ী জয়েন্ট বিকৃতি ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা ঘটতে পারে।

৩. হাড় ক্ষয় ও নড়াচড়া সীমিত হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

৪. দীর্ঘমেয়াদি রোগে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

৫. দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা ও উপার্জনক্ষমতা হ্রাস পায়।

৬. মানসিক চাপ, হতাশা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা হতে পারে।

৭. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA) এর ক্ষেত্রে কিডনি ও ফুসফুসে প্রদাহজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৮. দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ এবং কিছু ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি সামান্য বেড়ে যেতে পারে।

৯. প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন রোগের অগ্রগতি ধীর করতে সাহায্য করে।

১০. নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা জীবনযাত্রার মান রক্ষা করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ব ও বাংলাদেশের পরিসংখ্যান

বিশ্ব পরিসংখ্যান:- * বিশ্বে আনুমানিক ৩৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। * অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ২৫ কোটি মানুষ আক্রান্ত, যা বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ১৫%-এর বেশি। * রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত প্রায় ২ কোটি মানুষ, যার মধ্যে ৭৫% নারী। * বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ২ কোটি মানুষ আর্থ্রাইটিসজনিত কর্মহীনতায় ভোগেন।

বাংলাদেশে পরিস্থিতি: * দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০-১২% আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। * ৪০ বছরের পর প্রতি ৫ জনে ১ জনের জয়েন্ট সমস্যা দেখা যায়। * নারীদের মধ্যে রোগের হার পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ। * নগরায়ণ, স্থূলতা ও পুষ্টিহীনতা— এ তিন কারণেই রোগের হার দ্রুত বাড়ছে।

শিশুদের আর্থ্রাইটিস

জুভেনাইল আইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস হলো দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ, যা ১৬ বছরের নিচের শিশুদের জয়েন্টকে প্রভাবিত করে। এতে আক্রান্ত শিশুর জয়েন্টে ব্যথা, ফোলা, শক্ত হয়ে যাওয়া এবং চলাফেরায় অসুবিধা দেখা দেয়।

বাংলাদেশে পরিসংখ্যান :- বাংলাদেশে শিশুদের JIA-এর প্রকোপ সম্পর্কিত গবেষণা সীমিত। তবে বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতি ১০০,০০০ শিশুর মধ্যে প্রায় ৬০ জনের JIA থাকতে পারে। মেয়েদের মধ্যে এটি ছেলেদের তুলনায় প্রায় ২.৩ গুণ বেশি দেখা যায়। অধিকাংশ শিশুতে অলিগোআর্থ্রাইটিস (এক বা দুইটি জয়েন্ট প্রভাবিত) ধরা পড়েছে।

রোগের ধরন

-১. অলিগোআর্থ্রাইটিস – এক বা দুটি বড় জয়েন্টে প্রদাহ। ২. পলিআরথ্রাইটিস – পাঁচটি বা তার বেশি জয়েন্টে প্রদাহ।৩. সিস্টেমিক JIA – জয়েন্টের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অংশেও প্রদাহ এবং জ্বর, চামড়ার র‍্যাশের মতো উপসর্গ।

* চিকিৎসা ও চ্যালেঞ্জ:- উন্নত চিকিৎসা সুবিধার অভাব, ঔষধের উচ্চমূল্য এবং রোগ সম্পর্কে সচেতনতার কম থাকায় বাংলাদেশে রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জিং। * সময়মতো চিকিৎসার গুরুত্ব:- যদি শিশুদের JIA সময়মতো শনাক্ত ও সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়, তাহলে আক্রান্ত শিশুরা সুস্থ, সক্রিয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। নিয়মিত ফলোআপ ও চিকিৎসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আর্থ্রাইটিস ও সমাজ

আর্থ্রাইটিস শুধু শারীরিক ব্যথা নয়, এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বোঝা। একজন কর্মক্ষম মানুষ যখন জয়েন্ট ব্যথায় অচল হয়ে পড়েন, তখন শুধু তার জীবনই নয়, তার পরিবারের আর্থিক ভারসাম্যও নষ্ট হয়।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে— দক্ষিণ এশিয়ায় আর্থ্রাইটিসজনিত কারণে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ তাদের কাজ হারায়। উৎপাদনশীলতা কমে যায়, চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে সমাজে অদৃশ্য প্রতিবন্ধিতা তৈরি হয়।

মানসিক ও সামাজিক প্রভাব

* দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ও শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে রোগীরা হতাশা, নিঃসঙ্গতা ও উদ্বেগে ভোগেন। * নারী রোগীরা গৃহকর্মে অসুবিধার কারণে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

* অনেক সময় পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে বোঝাপড়ার অভাবে রোগীরা একা হয়ে যান। এই কারণে আর্থ্রাইটিসের মোকাবিলায় চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক সহায়তা, পরিবার ও সমাজের সমবেদনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিরোধই সর্বোত্তম পথ

১. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম:-দৈনন্দিন হাঁটা, সাঁতার বা হালকা স্ট্রেচিং জয়েন্টের স্থিতিশীলতা বাড়ায় এবং পেশী ও স্নায়ুকে সচল রাখে।

২. যোগব্যায়াম ও মাইন্ডফুলনেস:-যোগ বা ধ্যান মানসিক প্রশান্তি এবং শারীরিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ:-অতিরিক্ত ওজন হাঁটু, কোমর ও গোড়ালিতে চাপ সৃষ্টি করে এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস:-পর্যাপ্ত ভিটামিন D, ক্যালসিয়াম ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাদ্য হাড়কে শক্ত রাখে এবং জয়েন্টের ক্ষয় কমায়।

৫. ফল ও সবজি গ্রহণ:-প্রচুর সবজি ও ফল শরীরকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

৬. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার:- ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান কার্টিলেজ ও হাড়ের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৭. যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া:- পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম শরীর ও জয়েন্ট পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।

৮. মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা:- স্ট্রেস কমানো ও ইতিবাচক মনোভাব জয়েন্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ।

৯. দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ও ফোলা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ:-যেকোনো লক্ষণ অবহেলা না করে দ্রুত পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

১০. নিয়মিত জীবনধারার পরিবর্তন ও সচেতনতা:- এই অভ্যাসগুলো নিয়মিত মেনে চললে আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন সম্ভব।

হোমিও প্রতিকার

রোগ জনিত আর্থ্রাইটিস সর্বাধিক কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করছে হোমিওপ্যাথি। পৃথিবীতে হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্য সকল চিকিৎসা শাস্ত্র উপরি উপরি চিন্তা করে চিকিৎসা কার্য্য সম্পাদন করে থাকে যার কারণে মূল থেকে রোগ নির্মূলে ব্যর্থ হয় তারা। তাছাড়া হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা শাস্ত্রে বহু দুরারোগ্য বা ক্রনিক রোগের চিকিৎসাই নেই। একমাত্র হোমিওপ্যাথি রোগের বাস্তব কারণ অনুসন্ধান করে মূল থেকে যেকোন দুরারোগ্য রোগ নির্মূলের চিকিৎসা দিয়ে থাকে। আর এই কারণেই মারাত্মক রোগ ব্যাধির সবচেয়ে কার্যকর এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করছে হোমিওপ্যাথি। তবে এর জন্য অবশ্যই এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া জরুরী। রোগীর লক্ষণের উপর নির্ভর করে আর্থ্রাইটিস রোগ নিরাময় করতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক প্রাথমিক ভাবে যেই সব মেডিসিন নির্বাচন করে থাকে,ব্রায়োনিয়া, লিডাম, রাস টক্স,কলচিকাম,ক্যালমিয়া ল্যাট,গুয়েকাম,ক্যালকেরিয়া কার্ব,বেনজয়িক এসিড, হাইপেরিকাম সহ আরো অনেক মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে তবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধই গ্রহণ করা উচিত নয়।

পরিশেষে বলতে চাই, বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস ২০২৫ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবন চলতে থাকে, স্বপ্ন থেমে থাকে না। আর্থ্রাইটিস থাকলেও এটি কোনো বাধা নয়; বরং এটি একটি চ্যালেঞ্জ, যা সচেতনতা, ধৈর্য এবং আশাবাদের মাধ্যমে জয় করা সম্ভব। রোগের কারণে শারীরিক সীমাবদ্ধতা অনুভব করা স্বাভাবিক, কিন্তু সঠিক জ্ঞান এবং নিজের জীবনধারায় সচেতন পরিবর্তন আনা হলে ব্যক্তি সহজেই নিজের দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হতে পারে।আমরা যদি নিয়মিত ব্যায়াম করি, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখি, সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করি এবং জয়েন্টে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিই— তবে অনেকাংশেই আর্থ্রাইটিসের প্রভাব কমানো সম্ভব। এ ছাড়া মানসিক দৃঢ়তা ও আশাবাদী মনোভাব বজায় রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন বজায় রাখতে সাহায্য করে।

বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস আমাদের আহ্বান জানায়— রোগকে ভয় পাওয়ার নয়, স্বপ্নকে এগিয়ে নেওয়ার। চলুন, সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি— আর্থ্রাইটিস নয়, স্বপ্নই হবে আমাদের চালিকা শক্তি। আমরা সচেতন হই, নিজেদের যত্ন নিই, এবং প্রতিটি দিনকে নতুন সম্ভাবনার সঙ্গে এগিয়ে নিই। জীবন থেমে থাকেনা, স্বপ্নও থেমে থাকে না।

লেখক : চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

১১ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test