আমাদের বন্দী অর্থনীতি: বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার অদৃশ্য স্থাপত্যের ভিতর
মো: ইমদাদুল হক সোহাগ
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আজ একটি আধুনিক ডিজিটাল অবকাঠামোর চিত্র তুলে ধরে—গ্লাস টাওয়ার, বায়োমেট্রিক প্রবেশপথ, মোবাইল ড্যাশবোর্ড এবং স্বচ্ছতার ধারাবাহিক বার্তা। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পেশাজীবীদের সঙ্গে কথোপকথন ইঙ্গিত দেয় যে এই ঝকঝকে ব্যবস্থার নীচে আরেকটি স্তর রয়েছে—কম দৃশ্যমান, কম জবাবদিহিমূলক এবং খুব কম আলোচিত। এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে অভিযুক্ত করা নয়; এটি বহু পেশাজীবীর বর্ণিত পুনরাবৃত্ত প্যাটার্নের বিশ্লেষণ—যা আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতির ওপর মৌলিক প্রশ্ন তোলে।
যখন একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সতর্ক সংকেত পাঠায়
আমার অভিজ্ঞতা শুরু হয় আকস্মিকভাবে। এক সকালে দেখি আমার চলতি হিসাবে হঠাৎ ১ কোটি ৪১ লাখ ঋণাত্মক ব্যালেন্স দেখাচ্ছে—কোনো বার্তা বা ব্যাখ্যা ছাড়াই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এন্ট্রি সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়। পরে একটি পুরনো অভিযোগ দাখিল করার পর আমার অ্যাকাউন্ট যেন “সাইলেন্ট জোন”-এ ঢুকে যায়—ফোন ধরেনা, ইমেইল ফিরে আসে না, প্রক্রিয়া ধীরে যায়। এমন মুহূর্তে একজন সাধারণ গ্রাহক অনুভব করেন যেন তিনি কোনো অদৃশ্য স্তরে আটকে গেছেন।
ইনসাইডাররা যা ইঙ্গিত করেন
আইটি কর্মী, মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বহু মিল পাওয়া যায়। তারা একটি অনানুষ্ঠানিক অভ্যন্তরীণ স্তরের কথা বলেন—যাকে অনেকেই সাব বেসমেন্ট স্তর (এসবিএল) নামে উল্লেখ করেন, যেখানে সংবেদনশীল কার্যক্রম নাকি নিয়মিত প্রশাসনিক রুটিনের বাইরে সম্পন্ন হয়। কন্ট্রোল রুম জিরো ও স্যাডো অপারেশন ইউনিট (এসওইউ) সম্পর্কেও সিমিলার বর্ণনা পাওয়া যায়। এসব তথ্য যাচাই করা সম্ভব নয়, তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানুষের কাছ থেকে একই ধরনের বিবরণ পাওয়া উদ্বেগজনক।
রাত ২টার ডিজিটাল জানালা
অনেক প্রযুক্তিবিদ ব্যাংকিং সিস্টেমের এন্ড অব ডে (ইওডি) সময়কে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন—যা মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে। এই সময় লগিং সার্ভার আংশিক মেইন্টেনেন্স মোডে থাকে এবং কিছু লেনদেন ট্রেস করা কঠিন হয়। সাময়িক অভ্যন্তরীণ অ্যাকাউন্ট তৈরি ও বন্ধ করা সম্ভব হয় এবং কিছু লেনদেন পুনর্মিলনের সময় ওভাররাইট হয়ে যেতে পারে। আমার অ্যাকাউন্টের অনিয়মও এ সময়ে ঘটে।
দৃশ্যমান ব্যর্থতা ও অদৃশ্য প্রভাব
ইনসাইডারদের বর্ণনায় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি দ্বি-স্তর প্রভাব দৃশ্যমান—একটি দৃশ্যমান স্তর, যেখানে বড় ঋণখেলাপিরা থাকে; আরেকটি অদৃশ্য স্তর, যেখানে ছোট ট্রেডিং হাউস, কাগুজে প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোহীন কনসালটেন্সিগুলোর মাধ্যমে নাকি অর্থ স্থানান্তর হয়। ভেলু-২২ একটি “অফলাইন তথ্যভান্ডার”—নিয়ে বহু বর্ণনা আসে।
জিরো-কমপ্লায়েন্স মরীচিকা
কিছু কর্মী বলেন, পরিদর্শনের সময় কিছু প্রতিষ্ঠান নাকি একটি “পরিপূর্ণতার ভার্চুয়াল চিত্র” প্রদর্শন করে—যেখানে সব লগ সঠিক, সব প্রক্রিয়া নিখুঁত। আমার ক্ষেত্রে ১.৪১ কোটি ডেডুকেশন–রিভারসেল-এর কোনো রেকর্ড অফিসিয়াল স্টেটমেন্টে ছিল না—স্ক্রিনশটে থাকা সত্ত্বেও।
এটি জাতীয় অর্থনীতির জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ
ব্যাংকিং হলো বিশ্বাসভিত্তিক কাঠামো। রেকর্ড সঠিক থাকবে—এই বিশ্বাসেই গ্রাহক টাকা রাখে। নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা কার্যকর—এই বিশ্বাসে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নেন। কিন্তু যদি রেকর্ড পরিবর্তনযোগ্য, অভিযোগ উপেক্ষাযোগ্য এবং অদৃশ্য প্রক্রিয়া কার্যকর থাকে—তাহলে আস্থা ভেঙে পড়ে। ফলে বিনিয়োগ কমে, প্রবৃদ্ধি ধীর হয়, সুযোগ সংকুচিত হয়।
এখন প্রয়োজন কাঠামোগত সাহস
বাংলাদেশ ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে অগ্রগতি করেছে, কিন্তু কাঠামোগত স্বচ্ছতা একই গতিতে এগোয়নি। কেবল বাহ্যিক আধুনিকায়ন যথেষ্ট নয়। গভীরতর জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া আস্থার সংকট দীর্ঘমেয়াদে বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আমি নীতিনির্ধারকদের অনুরোধ করছি—এই বিষয়গুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কাঠামোগত সংকেত হিসেবে বিবেচনা করতে। আমার আসন্ন গ্রন্থ দ্যা ব্ল্যাক বুক—এ সমস্ত স্ক্রিনশট, টাইমলাইন ও প্রমাণ সংরক্ষিত আছে। এটি আমার বাবার আমলের অভিজ্ঞতারই ডিজিটাল পুনরাবৃত্তি। এখন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের—আমরা কি অদৃশ্য স্থাপত্যকে মোকাবিলা করব, না বাহ্যিক স্থিতির ভ্রমে চলব? এই সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আমাদের ভবিষ্যৎ আস্থার পথ।
লেখক : একজন কলামিস্ট ও উদ্যোক্তা। যিনি ডিজিটাল ব্যাংকিং স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক শাসনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন।
পাঠকের মতামত:
- কালিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা দিলেন স্ত্রী
- উপজেলা চেয়ারম্যান-পৌর মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা
- গৌরনদীতে এক নারীসহ তিন জনের লাশ উদ্ধার
- ঈশ্বরদীতে নেসকোর প্রি-পেইড মিটার বাতিলের দাবিতে গণঅনশন
- গ্রামীণ ব্যাংকের শেরপুর শাখায় আগুন দেওয়ার চেষ্টা
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শিশু পার্ক আধুনিকায়নের দাবিতে কুষ্টিয়ায় মানববন্ধন
- কবরস্থানে পার্ক নির্মাণ করে বেহায়াপনার অভিযোগ
- টুঙ্গিপাড়ায় দুই দিনে দুই যুব মহিলালীগ নেত্রী গ্রেপ্তার
- সুবর্ণচরে শ্রমিকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ
- টাঙ্গাইলে অর্ধকোটি টাকার হেরোইনসহ কারবারি গ্রেফতার
- অপরিণত নবজাতকের জীবন রক্ষায় হোমিওপ্যাথি
- খুলনা বরিশালের ৭ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক
- ঈশ্বরদীতে দুই ছেলেসহ মাকে ৬ ঘণ্টা জিম্মি করে ডাকাতি
- আমাদের বন্দী অর্থনীতি: বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার অদৃশ্য স্থাপত্যের ভিতর
- মধ্যরাতে ঈশ্বরদী–ঢাকা মহাসড়কে টায়ারে আগুন, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ
- লালপুরে দুই কমিটির দ্বন্দ্বে গোঁসাই আশ্রমের নবান্ন উৎসব নিয়ে শঙ্কা
- মানবিক দায়বোধ থেকে নীতিগত সংস্কার: সড়ক–নিরাপত্তার বৈশ্বিক পাঠ
- ‘শেখ হাসিনার রায় ঘিরে নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা রুখে দিতে হবে’
- দিনাজপুর-২ আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে উত্তাল
- সালথায় ইউপি সদস্য আবুল হাসান গ্রেপ্তার
- নড়াইলে দুর্বৃত্তের হামলায় ব্যবসায়ী জখম, অভিযুক্ত গ্রেফতার
- নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা
- ঢাকা-গোপালগঞ্জসহ চার জেলায় নিরাপত্তার দায়িত্বে বিজিবি
- ‘ভোটে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো শক্তি আ. লীগের নেই’
- যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেল ৭২ জন
- সুবর্ণচরে শ্রমিকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ
- টাঙ্গাইলে অর্ধকোটি টাকার হেরোইনসহ কারবারি গ্রেফতার
- নিমে নিরাময় হয় যে সব রোগের
- ‘ঐ চেয়ার নির্লজ্জদের জন্যই’
- অপরিণত নবজাতকের জীবন রক্ষায় হোমিওপ্যাথি
- নিরাপদ সমুদ্র পর্যটনের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- হাজারো মানুষের তারুণ্যের জাগরণ ‘অনন্যা’
- ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিন, এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবো’
- উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন
- আবারো রগ কেটে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছে : মোমিন মেহেদী
- ‘ভারত নোংরা খেলা খেলতে পারে, দ্বিমুখী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত পাকিস্তান’
- রাজশাহীতে আশুরা পালনে মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ
- ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন’
- মেক্সিকোতে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪
- আজ জালালপুর গণহত্যা দিবস
- ‘বঙ্গবন্ধু একটি সুন্দর ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন’
- ডহর রামসিদ্ধি : নৌকার গ্রাম
- সবার আমি ছাত্র
- মামদানির জয়, প্রথম মুসলিম মেয়র পেলো নিউইয়র্ক
- ভণ্ডামি আর নাটক থেকে মুক্তি চান আঁখি আলমগীর
-1.gif)








