আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস
চলমান মানুষের গল্প ও মানবিক পৃথিবীর দায়
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
মানুষ স্থির নয়—মানুষ চলমান। জীবনের প্রয়োজনে, স্বপ্নের টানে কিংবা বাধ্যতার ভারে মানুষ এক জায়গা ছেড়ে আরেক জায়গায় যায়। এই চলাচলই অভিবাসন। বিশ্ব ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে অভিবাসনের ছাপ রয়েছে। সেই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিতেই প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। ২০০০ সালে জাতিসংঘ এই দিবস ঘোষণা করে, যাতে অভিবাসীদের অধিকার, মর্যাদা ও অবদান বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব পায়।
আজকের পৃথিবীতে অভিবাসন কোনো ব্যতিক্রম নয়, বরং এটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। প্রযুক্তি, যোগাযোগ ও বিশ্বায়নের ফলে মানুষের চলাচল বেড়েছে। কেউ যাচ্ছেন কাজের খোঁজে, কেউ শিক্ষা বা নিরাপত্তার জন্য, আবার কেউ বাধ্য হচ্ছেন যুদ্ধ, দারিদ্র্য বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশ ছাড়তে। অভিবাসন তাই একদিকে সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়, অন্যদিকে সৃষ্টি করে গভীর মানবিক সংকট।
অভিবাসনের বাস্তবতা ও আধুনিক বিশ্ব
বর্তমান বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ নিজ দেশের বাইরে বসবাস করছে। কেউ বৈধ পথে, কেউ অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পথে। উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি অনেকাংশেই অভিবাসী শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। হাসপাতালের নার্স, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিখেতের কর্মী, প্রযুক্তিবিদ—সবখানেই অভিবাসীদের উপস্থিতি স্পষ্ট। অথচ এই মানুষগুলোর জীবন প্রায়ই থেকে যায় আড়ালে, আলোচনার বাইরে।
অভিবাসনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ অর্থনৈতিক। নিজ দেশে কাজের সুযোগ সীমিত হলে মানুষ বাধ্য হয় দূরে যেতে। তবে শুধু অর্থ নয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় নিপীড়ন, জাতিগত সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতাও মানুষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। এই বাস্তবতায় অভিবাসন অনেক সময় পছন্দ নয়, হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার কৌশল।
অভিবাসীদের অবদান: নীরব শক্তি
অভিবাসীরা যে শুধু নিজেদের পরিবার নয়, পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেয়—এ কথা আজ আর অজানা নয়। প্রবাসী আয় অনেক দেশের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর গ্রামাঞ্চলে শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনমান উন্নয়নে অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ বড় ভূমিকা রাখে।
একই সঙ্গে অভিবাসীরা নতুন সমাজে নিয়ে যায় নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষা ও মূল্যবোধ। এতে সমাজ হয় বহুমাত্রিক ও প্রাণবন্ত। খাবার, সংগীত, সাহিত্য ও চিন্তাধারার আদান-প্রদানে গড়ে ওঠে এক বৈশ্বিক সংস্কৃতি, যা মানুষকে কাছাকাছি আনে।
বৈষম্য ও ঝুঁকি: অভিবাসনের অন্ধকার দিক
অভিবাসনের এই ইতিবাচক ছবির আড়ালে রয়েছে কঠিন বাস্তবতা। অনেক অভিবাসীকে অমানবিক পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়। ন্যায্য মজুরি না পাওয়া, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন—এসব তাদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। ভাষাগত দুর্বলতা ও আইনি জ্ঞানের অভাব তাদের আরও অসহায় করে তোলে।
বিশেষ করে নারী অভিবাসীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। গৃহকর্মে নিয়োজিত অনেক নারী শ্রমিক নিগ্রহের শিকার হন, অথচ অভিযোগ করার সুযোগ পান না। আবার অবৈধ অভিবাসনের পথে যারা পাড়ি দেন, তারা মানবপাচার চক্রের হাতে পড়েন, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংকট
অভিবাসনের আরেকটি রূপ হলো শরণার্থী সংকট। যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে লাখো মানুষ প্রতিবছর দেশ ছাড়ছে। শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও নাগরিক অধিকারহীনতা তাদের বাস্তবতা। আন্তর্জাতিক সহায়তা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব। নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বহু মানুষ স্থায়ীভাবে ঘরছাড়া হচ্ছে। এই মানুষগুলো কোনো দেশের আইনে স্পষ্টভাবে ‘শরণার্থী’ হিসেবে স্বীকৃত নয়, ফলে তাদের সুরক্ষা আরও জটিল হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের গুরুত্ব
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এটি বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দেয়—অভিবাসীরা বোঝা নয়, তারা উন্নয়নের অংশীদার। এই দিবস অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রগুলোর দায়বদ্ধতা তুলে ধরে এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি জোরদার করে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন উদ্যোগ অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ, নিয়মিত ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসনের কথা বলে। তবে কাগজের নীতির সঙ্গে বাস্তবতার ব্যবধান এখনো রয়ে গেছে। সেই ব্যবধান কমানোই এই দিবসের মূল আহ্বান।
বাংলাদেশের অভিবাসন বাস্তবতা
বাংলাদেশ অভিবাসননির্ভর একটি দেশ। লাখো মানুষ বিদেশে কাজ করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। তাদের ঘামে গড়া অর্থ জাতীয় উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এই শ্রমিকরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হন—দালালচক্র, দক্ষতার অভাব, আইনি জটিলতা ও প্রবাসে সুরক্ষাহীনতা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রবাসী কর্মীদের শুধু রেমিট্যান্সের উৎস হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা জরুরি। তাদের প্রশিক্ষণ, সঠিক তথ্য ও কূটনৈতিক সহায়তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
করণীয় ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি
একটি ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব গড়তে হলে অভিবাসন ব্যবস্থাকে মানবিক করতে হবে। নিরাপদ অভিবাসন পথ তৈরি, মানবপাচার দমন, অভিবাসীদের আইনি সহায়তা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে গণমাধ্যম ও সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে অভিবাসীদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন না করা হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস আমাদের সামনে একটি প্রশ্ন রাখে—আমরা কি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখছি, নাকি কেবল সংখ্যায় পরিণত করছি? অভিবাসনের পেছনে থাকে আশা, ভয় ও সংগ্রামের গল্প। সেই গল্পকে সম্মান জানানোই মানবিক সভ্যতার পরিচয়।
মানুষের চলাচল থামবে না। কিন্তু যদি সেই চলাচল নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত হয়, তবেই বিশ্ব হবে আরও মানবিক। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস সেই মানবিক অঙ্গীকারকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে।
লেখক : কলাম লেখক ও প্রবন্ধকার, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
পাঠকের মতামত:
- ‘আইএমএফের ঋণ নিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো দরকার নেই’
- গুম প্রতিরোধ ও হাওর সংরক্ষণ অধ্যাদেশ অনুমোদন
- মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি
- টুঙ্গিপাড়ায় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সহ ৪ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
- সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সাবেক পিপি লতিফের ৪ দিন ও তার ছেলে রাসেলের তিনদিনের রিমাণ্ড
- বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন সোসাইটির অধীনে সোনাতলায় বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
- পাবনা- ৪ আসনে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ
- টঙ্গীর এরশাদ নগরে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘিরে রহস্য
- টাঙ্গাইলে ৪৮ ঘণ্টায় গ্রেফতার ৩৬
- খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বারুইপাড়া সেতুর কাজ
- তালায় আম বাগান থেকে আলাউদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার
- কোটালীপাড়ায় প্রণোদনার সার-বীজ পেল ৬ হাজার ৭৫০ কৃষক
- ১৯ ডিসেম্বর কাশিয়ানী মুক্ত দিবস
- টুঙ্গিপাড়ায় শতাধিক দরিদ্র গ্রাহকের মাঝে কম্বল বিতরণ
- একজন ভক্ত সাহা’র কথা
- গোপালগঞ্জে ১০ লাখ টাকাসহ সড়ক বিভাগের পিওন আটক
- সালথায় সারের দাম বেশি রাখায় সাব ডিলারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা
- চলমান মানুষের গল্প ও মানবিক পৃথিবীর দায়
- সীমান্ত পেরিয়ে মানুষের মর্যাদা ও মানবিক অধিকার
- নগরকান্দায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন
- নড়াইলের দুটি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
- ‘আগামী নির্বাচন বড় চ্যালেঞ্জ, ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে’
- টুঙ্গিপাড়ায় উম্মুক্ত বই পাঠ প্রতিযেগিতা
- স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম.এইচ খান মঞ্জু
- গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার কেআইএসটি’র গবেষণা চুক্তি স্বাক্ষর
- ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিন, এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবো’
- উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে জবাই করে হত্যা
- মহম্মদপুরে শহীদ আবীর পাঠাগারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্থাপনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি
- অমলকান্তি
- সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নাই
- পাবনা- ৪ আসনে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
- নবীনগরে একই পরিবারের চারজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
- 'নির্লজ্জ বেহায়া হতেই কী আমরা তোমাকে খুন করেছি কিংবা তোমাকে রক্ষা করিনি?'
- নবীনগরে তৃতীয়বারের মতো ইংরেজী বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
- তৃতীয় দিনের মতো খাগড়াছড়িতে চলছে অবরোধ
- সিলেটের জনপ্রিয় সংঙ্গীত শিল্পী হতে চান শর্মিলা বড়ুয়া
- সিরাজগঞ্জে প্রাইভেটকারে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ৪
- চা শ্রমিকদের কেউ হামলার শিকার হয়নি, জানালেন বাগান পঞ্চায়েত
- রংপুরে সেপটিক ট্যাংকে পড়ে মা-ছেলেসহ নিহত ৩
- নবীনগরের বাঙ্গরা বাজারে সওজের আচমকা উচ্ছেদ অভিযানে সর্বশান্ত শতশত ব্যবসায়ী
- ‘আয়নাঘরসহ সব গোপন বন্দিশালা বন্ধ করতে হবে’
- ‘বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো পুনর্গঠন করতে চাই’
- ‘সোনা’ ফলছে মধুপুর শাল-গজারির লাল মাটিতে
- এলপি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ
-1.gif)








