E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ধর্ম অবমাননা, হিংসা-বিদ্বেষ চরিতার্থ করার এক মোক্ষম অস্ত্র

২০২৫ ডিসেম্বর ৩১ ১৭:২৬:২৪
ধর্ম অবমাননা, হিংসা-বিদ্বেষ চরিতার্থ করার এক মোক্ষম অস্ত্র

চৌধুরী আবদুল হান্নান


ধর্ম তো মানব কল‍্যানের জন‍্য, বিশ্ব মানবতার জন‍্য কিন্ত আজ তা ব‍্যবহার হচ্ছে মানুষ হত‍্যা আর নির্যাতনের কাজে। প্রতিটি ঘটনায় কীভাবে ধর্ম অবমাননা হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না, এমন কি কোনো ব‍্যাখ‍্যাও থাকে না। স্বার্থান্বেষী ধর্মান্ধ দুই একজন অমানুষের উসকানিতে শুরু হয়ে যায় হিন্দু বাড়ি লুটপাট, আগুন। বিচার হয় না। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা সকল মানুষকে আতংকিত করেছে। মানুষ হত‍্যা করে ধর্ম রক্ষা — এটা কেমন বিশ্বাস! এমন টার্গেটেড সহিংশতা শুধু ইসলামের কলঙ্ক নয়; মানবতা ও মানব সভ‍্যতার কলঙ্ক। সাম্প্রদায়িক সংঘাত, বিদ্বেষ আগেও ছিল কিন্ত বর্তমানে তা ব‍্যাপক হারে বেড়ে গেল কেন?

সম্প্রতি রাউজান পৌরসভার বনিকপাড়া এলাকার সুরন্জন শীলের বাড়ির বাইরে থেকে দরজার হুক লাগিয়ে চারদিক কেরোসিন ও পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকদের ১৮টি বসতঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। ফরিদপুরের কানাইপুর ইউনিয়নের খাসকান্দি এলাকায় ৬০ বছরের পুরানো মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এমন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নজির প্রায় নিত‍্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে হিন্দুরা অসহায়, সব সময় ভয়ের মধ‍্যে বাঁচতে হয়, প্রতিটি নিষ্পাপ শিশু আতংক নিয়ে বেড়ে ওঠে। এ পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে যারা প্রাণান্ত, তারা ধর্ম অবমাননার মতো স্পর্শকাতর কাজ করবে তা বিশ্বাসযোগ‍্য নয়। আমেরিকা প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী শিতাংশু গুহ দুঃখ করে বলেন- “বেচারা দিপু, জন্মই তোমার আজন্ম পাপ। হিন্দু মরলে কি আসে যায়!”

বাংলাদেশে একতরফা মার খাওয়া হিন্দুদের পাশে কেউ নেই, বিশ্বের যে কোনো নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অথবা জাতিসংঘ। এ দুটি সংস্থাই এখানে চুপ, আর বলতে গেলে আন্তর্জাতিক কনফ্লিক্ট মোকাবিলায় জাতিসংঘ নখদন্তহীন।

প্রতিবেশী দেশ ভারত বরাবরই বিপন্ন সংখ‍্যলঘু হিন্দুদের আশ্রয় দিয়ে আসছে, অন‍্যথায় তাদের অবস্থা হতো মিয়ানমার থেকে তাড়া খাওয়া দেশহীন ভাসমান রোহিঙ্গাদের মতো। অনেকেই মনে করেন, এই মূহুর্তে ভারতের সহযোগিতা ছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের এদেশে টিকে থাকা ধীরে ধীরে আরও অসম্ভব হয়ে পড়বে।

ভারত একটি ভিন্ন দেশ, কীভাবে তারা অন‍্য দেশের একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করবে? দুই দেশের মধ‍্যে দক্ষ কৌশলগত কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ‍্যমে তা সম্ভব এবং তাতে উভয় দেশের স্বার্থই রক্ষিত থাকবে। কিন্ত নানা বিষয় নিয়ে গত ৫৪ বছরের মধ‍্যে দুই দেশের সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। বর্তমানে ব‍্যাপক ভারত বিদ্বেষী প্রচার চলছে, ভারত মানেই হিন্দু রাষ্ট্র, শত্রু রাষ্ট্র। বংলাদেশের কিছু তরুণ নেতা ভারত বিরোধী উসকানিমূলক বক্তব‍্য দিয়ে পরিস্হিতি আরও সংকটময় করে তুলছেন।

দুই দেশ একে অপরের হাইকমিশনারকে তলব করে সতর্ক করা হচ্ছে, কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতির মাঝে সাধারণ মানুষের মধ‍্যেও অকল্পনীয় বিদ্বেষ লক্ষ‍্য করা যাচ্ছে। পাশাপাশি দুটি বৈরী রাষ্ট্রের মধ‍্যে এমন তিক্ত সম্পর্ক যে কোনো সময় উভয় দেশের জন‍্য ভয়ংকর পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এ দেশে হিন্দুদের প্রতি নানা অছিলায় নৃশংসতা চলতে থাকলে ভারতের সংখ‍্যালঘু মুসলমানরাও প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আশংকা থাকবে। ভারতে মুসলিম জনসংখ‍্যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ‍্যার চেয়ে বেশি, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ‍্যার দেশ ভারত।

ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক গভীর সংকটের দিকে অগ্রসরমান, তা থেকে উত্তোরণের জন‍্য ভারত বিরোধী উসকানিমূলক প্রচারণা থামাতে হবে।

আসলে এ বিভাজনটা ‘৭১ এ শুরু। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মূল ঘটনা দুটি, পাকিস্তান ভেঙে যাওয়া এবং বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম। পরাজিত শত্রুরা কেবল পাকিস্তান ভেঙে যাওয়াটা দেখে, স্বাধীন বাংলাদেশটা দেখে না। এতদিন তারা ঘুমিয়ে ছিল, অনুকূল পরিবেশ পেয়ে জেগে উঠেছে, তারা এখন বেশি সরব, উচ্চকন্ঠ।

ভারত তো বাংলাদেশের সাথে ভালো সম্পর্কই চায় এবং আমরাও চাই; তবু কেন বৈরিতা বৃদ্ধি পাবে?দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন, এ বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব‍্যাংক।

পাঠকের মতামত:

৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test