E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মহম্মদপুরে সরিষার অধিক ফলনের আশা করছেন কৃষকরা 

২০২৩ জানুয়ারি ১০ ১৬:২০:৪৬
মহম্মদপুরে সরিষার অধিক ফলনের আশা করছেন কৃষকরা 

বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, মহম্মদপুর : মাগুরার মহম্মদপুরে সরিষা চাষে  অধিক ফলনের আশা করছে চাষীরা। এ বছরে মহম্মদপুরে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত সরিষা চাষ করেছে কৃষকের। চাহিদা মত মোতাবেক জমি চাষ ও বীজ বপন এবং উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকরা অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা তারা মনে করছেন। দেশকে খাদ্য সংকটমুক্ত ও কৃষিতে সমৃদ্ধি আনার লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত ছুটে চলছেন কৃষকের কাছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও প্রনোদনার বীজ সার তুলে দেওয়া হয়েছে প্রান্তিক কৃষকের হাতে। নতুন স্বপ্নে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কৃষি, সমৃদ্ধি হচ্ছে খাদ্যের।

ষড়ঋতুর দেশে শীত ঋতু যেন অপরূপে সাজিয়েছে প্রকৃতিকে। মাঠে মাঠে মৌমাছির গুনগুন গুঞ্জন, আর চারিদিকে হলুদের সমারহ। এ যেন শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা কোনও চিত্র। চারিদিকে হলুদ আর হলুদ। মাঠে মাঠে বইছে হীমেল হওয়া শীতল বাতাস।

হাওয়ার তালে তালে হলুদের আভায় শোভা বর্ধন হওয়া মাঠে ছুটে আসছেন প্রকৃতি প্রেমিরা। কাক ডাকা ভোরে কুয়াশা ভেদ করে পূর্বাকাশে সোনালী রোদের ঝিলিকে শরিষার মাঠ যেন সোনায় মোড়ানো গালিচা। কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। আবহাওয়া অনুকুল ও রোগবালাই কম হওয়ায় লাভও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই ঘরে উঠবে শরিষা, যার কারণে বাজার দরও ভাল পাবেন বলে ধারনা করছেন অনেকে। অধিকাংশ কৃষকেরা প্রনোদনার সার বীজে শরিষার চাষ করায় খরচও অনেক কম হয়েছে বলে জানান তারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, এবছর মহম্মদপুর উপজেলায় শরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ২০৬৭ হেক্টর। আবাদ হয়েছে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি। উপজেলায় শরিষার আবাদ হয়েছে ২২৭৫ হেক্টর জমিতে। ধারণা করা হচ্ছে এবছর উপজেলায় ৩ হাজার ৭ শত ৫০ মেট্রিক টন শরিষা উৎপাদন হবে। গত বছর উপজেলায় শরিষা উৎপাদন হয়েছিল ৩ হাজার ২ শত ৫০ মেট্রিক টন। ধারণা করা হচ্ছে নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি শরিষা বাজারে বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা আয় করবেন কৃষকেরা।

এ মৌসুমে মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি অফিস অন্তত ৭ হাজার কৃষকের মাঝে প্রনোদনা ও রাজস্ব খাতের প্রদর্শণী প্রদান করেছে। কৃষি বিভাগ জানায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৪ টি ব্লকে ১৫শত ২৫টি কৃষি পরিবারের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪, বারি-১৫, বারি- ১৭, বারি-১৮ বিনা-৪, বিনা-৯ সহ বিভিন্ন প্রজাতির বীজ প্রনোদনা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১শত কৃষক পরিবারকে প্রনোদনার শরিষা বীজের পাশাপাশি প্রতিটি কৃষককে ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও উপজেলার কৃষকদের কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১ বিঘা করে ৩০০টি, ২ একর করে ২টি, ৩ একর করে ৬টি, ৫০ শতাংশের ৬০টি। এর মধ্যে বীনা-১৪, বারি-১৮ ও বীনা- ৯ কৃষকের মাঝে জনপ্রীয়তা পেয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের নহাটা ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ইমলাচুর রহমান বলেন, নহাটার ইছমামতী বিলের মোবারেকপুরের, পানিঘাটা, নহাটা অঞ্চলের মাঠে ২শত ৫০ বিঘা শরিষার চাষ হয়েছে। শরিষার জমিতে রোগ-বালাই আক্রমনের খবরে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষনিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছি। তাছাড়া রোগের আক্রমনের পূর্বেই কৃষকদের বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

পানিঘাটা গ্রামের চাষী মুজিবর রহমান, মাহামুদ মোল্যা, স্বপন সরকার, রাজাপুর ইউনিয়নের বনগ্রামের শ্যামল মন্ডল, বিনোদপুর ইউনিয়নের পিকুল মোল্যা সহ অনেক কৃষকেরা বলেন, এবছর শরিষা ভাল হয়েছে। আশা করছি ফলনও বেশি হবে। মশাখালী গ্রামের কৃষক মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর শরিষার চাষ করি। আমন ধান কাটার পরে সাড়ে ৪ একর জমিতে শরিষার বীজ বপন করেছি। কৃষি অফিসের লোকজন এসে আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন। যার কারণে ফসলে কোনও পোকা মাকড় লাগতে পারেনি। এবছর জমিতে অন্তত ১শত মন শরিষা হবে বলে বলেও জানান তিনি। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত শরিষা বাজারে বিক্রি করবো বলে আশা করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সোবহান হোসেন বলেন, আমন চাষের পর উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ সার সহায়তা দিয়ে শরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। অফিসের সকলকে নিয়ে সবসময় কৃষকের পাশে থেকে শরিষা চাষে পরামর্শ দিয়েছি। আশা করছি প্রত্যেক কৃষকই শরিষা চাষ করে লাভবান হবেন।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মোঃ রফিকুজ্জামান বলেন, সরিষা চাষের খবর পেয়ে মহম্মদপুরের বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন করেছি অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে সরিষার চাষ কৃষকদের এ সকল চাষাবাদ যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামীতে কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে।

(বিএস/এসপি/জানুয়ারি ১০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test