E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বাগেরহাটের লবণাক্ত মাটিতে সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন

২০২৫ জুলাই ০৮ ১৭:৪৫:৫৩
বাগেরহাটের লবণাক্ত মাটিতে সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন

সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকার চারিদিকে লবণাক্ত অথৈ পানির চিংড়ি ঘেরের মধ্যেই করা হয়েছে সৌদি খেজুরের বাগান। লবণাক্ত জমির এই বাগানে মরুভূমি এলাকার মরিয়ম, সুকারি, আম্বারসহ বাহারি জাতের গাছের ছড়ায়-ছড়ায় ঝুলছে খেজুর। বাম্পার ফলন হওয়া লম্বা ও গোলাকৃতির এসব রসালো সব সৌদি খেজুরের কোন ছড়া পেকে লাল রং ধারন করেছে, কোনটি পাকার অপেক্ষায় হলুদ রং ধারন করেছে। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের সন্নাসী গ্রামের হাজিপাড়ায় এই সৌদি খেজুর বাগানের ছোট মাঝারি ৪০০টি মধ্যে ৮০টি গাছের ছড়ায়-ছড়ায় ঝুলে রয়েছে খেজুর। কাছে থেকে দেখলে মনে হবে এযেন সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের কোন খেজুর বাগান। এমন দৃশ্য দেখাসহ ফলন হওয়া গাছ থেকে বের হওয়া অপস্যুট চারা গাছ কিনতে এখন প্রতিদিনই ভীড় করছে দূর-দূরন্তের সাধারন মানুষসহ খামারিরা। 

বাগেরহাট শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা কৃষি উদ্যোক্তা এ্যাডভোকেট দিহিদার জাকির হোসেন ২০১৮ সালে নিজের মালিকাধিন ১৫ একর চিংড়ি খামারের জমির মাটি কেটে উচু করে গড়ে তোলেন ‘রামপাল সৌদি খেজুর বাগান’। প্রথম বছর পরিক্ষামুলক ভাবে মরিয়ম, সুকারি, আম্বার খেজুর ফলন হওয়া গাছ থেকে বের হওয়া দুই বছর বয়সের কয়েকটি করে অপস্যুট চারা কিনে তিনি খামারে রোপন করেন। নিবিড় পরিচর্যায় লবণাক্ত মাটিতেই বড় হতে থাকে সৌদি খেজুরের এসব গাছ। কয়েক বছরের মধ্যে এসব গাছ ও গাছের গোড়া চিরে জন্য নেয় অপস্যুট চারা। মাত্র তিন বছরের মধ্যে এসব মরিয়ম, সুকারি, আম্বার গাছে কয়েক ছড়া করে খেজুর জন্মে। পাশাপাশি এই খামারি ফলন হওয়া এসব গাছ থেকে বের হওয়া অপস্যুট চারাগুলো বিশেষ পদ্বতিতে আলাদা করে বাগানে লাগাতে থাকেন। প্রতি বছরই বাগানে বাড়তে থাকে গাছ ও খেজুর ধরা গাছের সংখ্যা। এখন তার বাগানে মরিয়ম, সুকারি, আম্বারসহ বাহারি জাতের ৪০০টি গাছ লাগানে হয়েছে। এরমধ্যে চলতি উৎপাদন মৌসুমে তার ৮০টি গাছের ছড়ায়-ছড়ায় ঝুলে রয়েছে খেজুর। রসালো সব সৌদি খেজুরের কোন ছড়া পেকে লাল রং ধারন করেছে, কোনটি পাকার অপেক্ষায় হলুদ রং ধারন করেছে। এসব গাছের প্রতিটিতে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত খেজুর জন্মেছে। পেকে যাওয়া খেজুর দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাড়রা কেজি প্রুিত ৫ থেকে ৭ টাকায় কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন। আর এক একটি অপস্যুট চারা খামারিদের কাছে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায়।

সৌদি খেজুরের বাগানটির মালিক এ্যাডভোকেট দিহিদার জাকির হোসেন জানান, আমার খেজুর বাগান শুস্ক মৌসুমে পানি দেয়াসহ পরিচর্যার জন্য সারা বছরই তিনজন শ্রমিক কাজ করছে। এখন প্রতি বছরই খেজুর ধরা গাছের সংখ্যা বাড়ছে। খেজুর ও অপস্যুট চারা বিক্রির পাশাপাশি ড্রামে গাছ লাগিয়ে খেজুর ধারা অবস্থায় তা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ড্রামে লাগানো এমন এক একটি খেজুর ধরা গাছ দুই লাগ টাকায় অনায়াসেই বিক্রি করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে বর্ষা কালে খেজুর পাকে। খেজুরের গায়ে বৃষ্টির পানি লাগলে খেজুর নষ্ট হয়ে যায়। পাখিতেও খেুর নষ্ঠ করে।

সে কারণে এক প্রকার বিশেষ পলিথিন নিয়ে খেজুর ঢেকে রাখতে হয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বর্তমানে উগান্ডা নামের এক ধরনের পোকা খেজুর গাছ আক্রান্ত করছে। দেশে এই পোকা দমনের কোন ওসুধ নেই। ওমান থেকে ওষুধ এনে ওই পোকা দমন করছি। সরকারের কাছে ন্যায্য মূলে বিশেষ পলিথিন ও উগান্ডা পোকা দমনের ওষুধের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে এই খামারী বলেন, সরকারে পক্ষ থেকে এই দাবি মানা হলে দেশের খামারিরা তাদের উৎপাদিত খেজুর দিয়েই দেশের চাহিদার অনেকটাই পুরন করতে পারবে। নতুন বাগান করতে খামারিরা সরকারি প্রণোদনা পেলে আগামি ১০ বছরের মধ্যে দেশকে সৌদি খেজুর উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপাতরের উপ পরিচালক মোতাহার হোসেন জানান, কৃষি উদ্যোক্তা এ্যাডভোকেট দিহিদার জাকির হোসেন মরু এলাকার রসালো ফল খেজুর খোদ লবণাক্ত জমিতে জন্মিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তাই এই সফলতা দেখে বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা নতুন নতুন সৌদী খেজুর বাগান গতে তুলছেন। কৃষি বিভাগ এসব খেজুর খামারিদের প্রয়োজনিয় সহয়তা দিয়ে যাচ্ছে। গাছে খেজুর রক্ষায় বিশেষ পলিথিন ও উগান্ডা পোকা দমনের ওষুধর সরকারি ভাবে ন্যায্য মূল্যে খামারিদের সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে প্রতি বছই দেশে সৌদি খেজুর উৎপাদন বাড়বে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

(এস/এসপি/জুলাই ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test