E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নতুন জাতের ফল ও ফসল

‘সোনা’ ফলছে মধুপুর শাল-গজারির লাল মাটিতে 

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৬ ১৮:৫০:৩৫
‘সোনা’ ফলছে মধুপুর শাল-গজারির লাল মাটিতে 

সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার লাল মাটিতে শাল গজারি বনের ফাঁকফোকরে এক সময় আনারস, কলা, হলুদ কচু চাষ করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দিন দিন বন উজাড়ের কারণে এই বনাঞ্চল সংকুচিত হয়ে গেছে। একসময় পাতা ঝরা শাল গজারি, সেগুণ, আজুলি, বহেড়া, হরিতকি, নিম, নিশিগন্ধা, সর্পগন্ধা, শিমুল, জারুল, খাড়াঝরা, অর্জুন, সিদা, মেহগুনি, বানর নড়ি, আনাইগোটা, তিতিজাম, ঢাকি জাম, আমলকীর রাজ্য ক্ষীণ হতে শুরু করেছে। বনাঞ্চলের সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক কৃষি চাষাবাদ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখন শাল গজারি এ মধুপুর বনের কৃষিকেন্দ্রিক পরিচিতি ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলের মধ্যে মধুপুর গড়কে তার বৈচিত্র্যপূর্ণ মাটি ও উর্বর ভূমির কারণে আলাদা ভাবছে কৃষি বিভাগ। মধুপুরের মাটি একদিকে উর্বর, অম্লত্ব কম এবং উচ্চভূমি হওয়ায় বন্যা মুক্ত। পাশাপাশি মাটির রস-ধারণ ক্ষমতা এবং বিভিন্ন ধরনের জমিতে বৈচিত্র্যময় ফসল চাষের সুবিধা রয়েছে। এলাকায় কোথাও উঁচু, কোথাও নিম্নভূমি; কোথাও বাইদ, কোথাও চালা—এই বৈচিত্র্য মধুপুরকে কৃষি নৈসর্গিকতার এক অনন্য ভূমিতে পরিণত করেছে।

বর্তমানে মধুপুরের লাল মাটির চারপাশে কৃষির বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে আনারস, কলা, হলুদ কচু, কফি, কাজু, বাদাম, কাসাভা, ড্রাগন ফ্রুটসহ নানা ফসল। হাট বাজারে আনারস ও কলার মৌমৌ গন্ধ বিরাজ করছে। সারা বছরই স্থানীয় বাজারে নানা ধরনের শাক-সবজি ও ফলমূল সরবরাহ করা হয়, যা দেশের বিভিন্ন জেলা পর্যন্ত পৌঁছে।

ছানোয়ার হোসেন নামের এক কৃষক এ লাল মাটিতে কফি চাষ করে সফল হয়েছেন। বেশ কিছু এলাকায় চাষিরা কফির পাশাপাশি কাজু বাদামের বাণিজ্যিক চাষ করছেন। এছাড়া মাল্টা, ড্রাগন, পেয়ারা, আনারস, কফি, বাতাবি লেবু (জাম্বুরা) ও লেবুসহ বিভিন্ন ফসলে সমৃদ্ধ হচ্ছে এ শাল গজারির বন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, মধুপুরে দিন দিন নতুন ফসলের প্রবর্তন হচ্ছে। সুদূর ফিলিপাইনের উন্নত জাতের আনারস (MD-2) চাষ শুরু হয়েছে, যা এলাকার কৃষি উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মধুপুরে বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল বাণিজ্যিক ফসলের বাগান গড়ে উঠেছে। উপজেলার ৩৭০.৮৪ বর্গমাইল আয়তনের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নে প্রায় ৫৪,৯৫০ কৃষক পরিবার বসবাস করছে। এই অঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি, যা কৃষকদের জীবনযাত্রা এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুষিবিদ রকিব আল রানা জানান, মধুপুরের মাটি, আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতি সব ধরনের ফসলের জন্য উপযোগী। স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা মনে করেন, যদি মধুপুরের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা যায়, তবে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, মধুপুরের সমৃদ্ধ কৃষি ও ফসল বৈচিত্র্য দেশের কৃষি মানচিত্রে একটি বিশেষ স্থান নিশ্চিত করবে।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test