E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কম মাটিতে ১০ গুণ বেশি ফসল

কৃষিবিদ ইবাদ আলীর ‘শেকড় প্রযুক্তি’তে ছাদ বাগানে বিপ্লব

২০২৫ অক্টোবর ১৪ ১৯:১২:৪৭
কৃষিবিদ ইবাদ আলীর ‘শেকড় প্রযুক্তি’তে ছাদ বাগানে বিপ্লব

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : যশোরের কৃষিবিদ ইবাদ আলীর ছাদ বাগান এখন আর কেবল শখের চাষাবাদ নয়, এটি এক ধরনের কৃষি 'গবেষণাগার'। দীর্ঘ চার বছরের গবেষণার পর তিনি উদ্ভাবন করেছেন এক যুগান্তকারী চাষাবাদ পদ্ধতি 'শেকড় প্রযুক্তি'। যা প্রচলিত ছাদ বাগানের ধারণাকে পুরোপুরি পাল্টে দিচ্ছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সাধারণ ছাদ বাগানের জন্য ব্যবহৃত সমপরিমাণ মাটিতে প্রায় দশগুণ বেশি সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

সরেজমিনে আজ মঙ্গলবার সকালে ইবাদ আলীর বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, এক ভিন্ন রকম ছাদ বাগান।
যশোর সদর উপজেলার হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ইবাদ আলী পেশায় স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা হলেও কৃষি গবেষণা ও উদ্ভাবনই তার ধ্যান-জ্ঞান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খাদ্য প্রকৌশলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।

কৃষিবিদ ইবাদ আলীর মতে, এই প্রযুক্তি শেকড়ের গঠন ও বিন্যাস অনুযায়ী মাটি, পানি, বায়ু, আলো এবং সারের সঠিক ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। এই পদ্ধতিতে গাছ মাটির অগভীর অংশ থেকে খাবার গ্রহণ করে এবং গাছের মূল রোমের সংখ্যা বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা সরাসরি ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

শেকড় প্রযুক্তিতে সবজি চাষের জন্য মাটির গভীরতা মাত্র ৪ ইঞ্চি এবং ফলের জন্য ১০ ইঞ্চি ব্যবহার করা হয়। টব বা ড্রামের পরিবর্তে বেড বা চ্যানেল সিস্টেমে চারা রোপণ করা হয়। এতে কম মাটি ব্যবহার করেও গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির ব্যবস্থা করা যায়।

নিজের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিতে ইবাদ আলী তার বাড়ির ছাদে বর্তমানে ২২ প্রকারের সবজি ও ফল চাষ করছেন, যার মধ্যে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, বরবটি, পেঁয়াজ, রসুন, শিম, লেবু, ড্রাগন ফল, আমড়া এবং কাঁচামরিচ অন্যতম। উৎপাদিত এসব সবজি পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তিনি বাজারে বিক্রিও করছেন। তার দাবি, এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে ছাদ কৃষি লাভজনক।

ইবাদ আলীর এই 'শেকড় প্রযুক্তি' শুধু ছাদ বাগানের জন্যই নয়, ভবদহ জলাবদ্ধতার মতো অঞ্চলেও বিপুল সবজি উৎপাদনে সহায়ক হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী। তার এই গবেষণা ছাদ কৃষিকে শখের গণ্ডি পেরিয়ে এক নতুন সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে পরিণত করেছে।

ইবাদ আলীর স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী পাপিয়া সুলতানা জানান, আগে তার স্বামীর ছাদ বাগানের এই চাষাবাদ নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করত। যারা সমালোচনা করত এখন তারা ইবাদ আলীর প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, আমার সংসারের জন্য এখন সবজি কেনা লাগে না। ছাদ বাগান থেকে উৎপাদিত সবজি ব্যবহার করি। ছাদ বাগানের সবজি আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশিদের দিয়ে থাকে। পাশাপাশি বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করি।

কৃষিবিদ ইবাদ আলী বলেন, পাঁচ বছর আগে শখের বশে ছাদ বাগান করি। এখন নিজের অভিঙ্গতা কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করছি। বাড়ির ছাদে সবজির পাশাপাশি ফল, মাছ ও মুরগি পালন করছি।

তিনি আরও বলেন, নতুন উদ্যোক্তারা তার শেকড় পদ্ধতি ব্যবহার করে বাড়তি ফসল উদপাদন করতে পারেন। মানুষের সমালোচনা উপেক্ষা করে নিজের মেধা ও মনন কাজে লাগিয়ে পরিত্যক্ত ছাদ সবজি উদপাদন করতে পারেন।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন কৃষিবিদ ইবাদ আলীর এই উদ্ভাবনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, ইবাদ আলীর শেকড় প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে এবং এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে ছাদ কৃষিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে বাড়ির পরিবেশ ঠান্ডা থাকবে এবং নিরাপদ, মানসম্মত পুষ্টিকর সবজির জোগান মিলবে।

(এসএ/এসপি/অক্টোবর ১৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test