E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

‘গ্লডিওলাস’ ফুলের গ্রাম ঠেঙ্গামারা

২০১৬ জানুয়ারি ২৯ ১৬:২৪:৫৬
‘গ্লডিওলাস’ ফুলের গ্রাম ঠেঙ্গামারা

মামুনুর রশীদ, নাটোর : মাঠ জুড়ে সারি সারি ফুলের গাছ। লাল, হলুদ, বেগুনী আর সাদা রঙের ফুল এবং সবুজ পাতায় মোড়ানো ফুলের অজস্র গাছ। পুরো মাঠ যেন তারার মেলা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পরিচর্যায় ব্যাস্ত কৃষকরা। গাছগুলোর নিজের সন্তানের মত তারা যত্ন নিচ্ছেন। পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন গাছে। স্বপ্ন দেখছেন, নতুন জাতের এই গ্লডিওলাস ফুল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবার।

এমন প্রত্যাশা নিয়ে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ঠেঙ্গামারা গ্রামের কৃষকরা স্বাবলম্বীর পথ খুজতে এখন ফুল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বিশেষ করে গ্লডিওলাস ফুল চাষের দিকে বেশী আগ্রহ তাদের। বেশি মুনাফার আশায় এই গ্রামের চাষীরা এখন ফুল চাষে বেশী আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গ্লডিওলাস ফুল ছাড়াও রজনীগন্ধা,চেরী,গাদা,কাঠ ফুলের চাষও করছেন তারা। তবে গ্লডিওলাস ফুলেই বেশী লাভ হয় তাদের। দুর দরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে এই গ্রাম থেকে ফুল নিয়ে যায়। গ্রামে এখন ফুলের চাষ বেশী হওয়ায় গ্রামের বেকার যুবক সহ মহিলাদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মেয়েরা বেলী ফুলের মালা গেঁথে বাড়তি আয় করছে। এজন্য এই ঠেঙ্গামারা গ্রাম এখন মানুষ গ্লডিওলাস ফুলের গ্রাম বলেই সর্বাধিক পরিচিত।

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকতা বাবুল কুমার সুধির জানান, দ্বিতীয় শস্য প্রহুমুখি প্রকল্পের আওতায় দু’বছর আগে কৃষি বিভাগের পরার্মশে পরীক্ষামুলকভাবে ‘গ্লডিওলাস’ ফুল চাষ করা হয়। এই ফুল লাভজনক ও চাহিদা থাকায় চাষীরা এখন নিজ উদ্যোগে বেশী জমিতে ফুল চাষ করছে। গ্লডিওলাস ফুলের পাশাপাশি তারা এখন গাদা,রজনী গন্ধা ও বেলী সহ বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করছে। বিশেষ করে গ্লডিওলাস ফুলের জন্য এই গ্রামে দর্শনার্থীদের আগমন হয়। ভালবাসা ও মাতৃভাষা দিবসে ফুলের চাহিদা থাকায় স্থানীয় কৃষকরা এবার বেশী পরিমান জমিতে ফুলের চাষ করেছেন।

ঠেঙ্গামারা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, দু’বছর আগে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় ৫ কাঠা জমিতে প্রথম পরীক্ষামুলকভাবে গ্লডিলাস ফুল চাষ করেন। কিন্তু চাষের দু’মাসের মধ্যেই তিনি ফুল বিক্রি করা শুরু করেন। লাভও ভাল হয়। এবার তিনি আরও দুই বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে প্রতিটি ষ্টিক ৮ থেকে ৯ টাকা করে বিক্রি করছেন। এখন তিনি ‘গ্লডিওলাস’ ছাড়া গাদা,রজনী গন্ধা,চেরী ফুলের চাষ করেছেন। তার দেখাদেখি ঠেঙ্গামা গ্রামের প্রায় সকলেই ফুল চাষ শুরু করেছেন। আগে যেসব জমিতে আখ ,আলু,ধান ও গম চাষ করতেন কিন্তু বেশী মুনাফা হওয়ায় এখন ফুল চাষ করেছেন তারা। ঠেঙ্গামারা গ্রাম এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে।

রবিউল ইসলাম জানান, ৫ বিঘা জমিতে প্রথম ফুল চাষ করে এখন জমির পরিমান বেড়ে গেছে ফুল বিক্রির লাভের টাকায়। প্রতি বিঘা জমি থেকে রবি শস্যের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশী মুনাফা লাভ হয়। তাই এই গ্রামের মানুষ এখন নানা জাতের ফুল চাষ শুরু করেছেন।

ওই গ্রামের গৃহবধূ জুলেখো বেগম জানান, আগে যে সব জমিতে আখ ,ধান সহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেও খরচের টাকা তুলতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এ্খন ওই সব জমিতে গ্লডিলাস সহ বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করে বেশী লাভের মুখ দেখছেন। ফুল বিক্রির টাকায় তিনি এখন প্রায় ২০ বিঘা জমি করেছেন। ওই সব জমির কিছু অংশে নিজেদের খাওয়ার জন্য ফসল চাষ করেন। অর্ধেকের বেশী জমিতে গ্লডিলাসসহ বিভিন্ন ফুল চাষ করছেন।

একই গ্রামের শান্তা পারভিন শিউলী ও শ্যমলী খাতুন জানান,ফুল চাষ করে এখন তাদের পরিবার স্বাবলম্বি। যে জমিতে আগে ধান ও গম চাষ করেছেন,সেসব জমিতে এখন ফুল চাষ করায় লাভ বেশী হচ্ছে। এমন কি এই ফুলের মালা গেঁথে অনেকেই সালম্বী হচ্ছে। বেকার ছেলেরা জমি থেকে ফুল কিনে শহরে গিয়ে বিক্রি করে স্বলম্বি হচ্ছে। তাদের দেখা দেখি এখন গ্রামের প্রায় সকলেই ফুল চাষ শুরু করেছেন।

বাগাতিপাড়া নির্বাহী অফিসার খন্দকার ফরহাদ আহমদ জানান, ফুলের চাহিদা হওয়ায় বাগাতিপাড়ার ঠেঙ্গামারা গ্রামে এখন ফুলের চাষ বেড়ে গেছে। ফুল চাষীদের কৃষি বিভাগ থেকে সহায়তা সহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখানে ফুলের ব্যাপক চাষ হওয়ায় বাগাতিপাড়া এলাকায় নারী সহ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গোটা উপজেলার চাষীদের ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

(এমআর/এএস/জানুয়ারি ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test