E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

কর্কশীটের ভেলায় ঝুকিঁপূর্ণ পারাপার

২০১৭ অক্টোবর ২৩ ১৭:১৫:০৮
কর্কশীটের ভেলায় ঝুকিঁপূর্ণ পারাপার

সুমন পাল : রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান-বনানী। গুলশান ও বনানীর ঠিক উল্টো দিকে লেকের অন্য পারে কড়াইল বস্তি।  যেখানে মানবেতর জীবনযাপন করে প্রায় ৩০ হাজারের অধিক পরিবার। এ যেনো আলোর নিচে অন্ধকার।  সহজে ও কম খরচে মহাখালী, গুলশান ও বনানী যাতায়াতে বস্তির লোকজন লেকের নৌপথটি ব্যবহার করেন। গত বছরের জুলাইয়ে হলি আর্টিজানের ভয়াবহ জঙ্গী হামলার পর গুলশান লেকে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে বিপাকে পড়েন রাজধানীর কড়াইল বস্তির শ্রমজীবী মানুষেরা। কিন্তু কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর ফের গুলশান লেকে নৌকার পরিবর্তে ড্রাম, ককশীটের ভেলা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন তারা। বস্তিবাসী বলছেন, পাচঁ ফুট বাই পাচঁ ফুটের ভেলায় নিরুপায় হয়েই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন তারা।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিন্ম আয়ের লোকজনই মূলত এসব ভেলার যাত্রী। বর্তমানে কড়াইল বস্তির বউ বাজার থেকে টিবি গেইট সংলগ্ন পুলিশ চেক পোস্টের সামনে দিয়ে চলাচল করছে ড্রাম, ককসিটের এইসব ভেলা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক একটি ভেলায় উঠছেন ১০-১৫ জন যাত্রী। কেউ কেউ উঠছেন শিশুবাচ্চা নিয়ে। ভেলায় উঠতেই ভারসাম্য হারিয়ে এক পাশে কাত হয়ে যাচ্ছে এসব ভেলা। বইঠা নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন দুইজন মাঝি। প্রায় প্রত্যেক ভেলায় দুইজন মাঝি যাদিও বয়স ১২-১৫ এর বেশি নয়। কড়াইল বস্তির বউ বাজার থেকে গুলশান-১ প্রধান সড়ক, মহাখালীর টিএন্ডটি কলোনি, বনানী ব্রীজ পর্যন্ত যাতায়াতে খরচ হয় ৫ টাকা। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এসব ভেলা।

স্থায়ীনরা বলছেন, গত বছরের মে মাসের দিকে কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকার এগারো বছর বয়সী বাবু কর্কশীট দিয়ে তৈরি ভেলায় চড়ে ঘুড়ি উড়াতে শুরু করে। একদিন বস্তির এক বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়লে সবার অনুরোধে বাবু তাকে ভেলায় লেক পার করে দেয়। এরপর অনেকেই বাবুর ভেলার আদলে ড্রাম ও ককসিট ব্যবহার করে কয়েকটি ভেলা তৈরি করে। শুরু হয় ভেলায় মানুষ পারাপার। বর্তমানে প্রায় ২৫টি ভেলা দিয়ে পাঁচটি ঘাটে মানুষ পারাপার করা হচ্ছে। কিন্তু কেন ঝুঁকি নিয়ে এমন পারাপার এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল নামের এক দিনমজুর জানালেন, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কিছু তো করার নাই। এই বস্তির সবাই শ্রমজীবী। ভেলা দিয়ে পার হলে সহজে ও কম খরচে কর্মস্থলে যেতে পারি। তবে এইসব ভেলায় এখন পযর্ন্ত কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি তার।

কড়াইল বস্তির বউবাজার ঘাট থেকে গুলশান-১ নৌকায় পাঁচ মিনিটের দূরত্ব। আবার বস্তি থেকে বের হওয়ার অন্য পথ থাকলেও ৩ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগে। বউবাজার থেকে বেলতলা ও টিঅ্যান্ডটি কলোনি পার হয়ে গুলশান যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টারও বেশি। রিকশা ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। কড়াইল থেকে এসব এলাকায় যেতে বাস থাকলেও বেশীরভাগ সময়েই বাসে যায়গা পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ তাদের। এছাড়া রয়েছে অত্র এলাকায় রয়েছে গণ পরিবহনের সংকট।

আবদুল মজিদ নামের এক ভেলার মালিক জানালেন, হলি আর্টিজানে হামলার পর লেক দিয়ে নৌকা বা অন্য যেকোন কিছু চলাচল নিষেধ করা হলে কর্মহীন হয়ে পড়ে প্রায় ৩০০ মাঝি। হঠাৎ করে নৌকা চালানো বন্ধ থাকায় মাঝখানে কিছু দিন বেকার থাকতে হয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে এক হাজার টাকা খরচ করে ড্রাম, কিছু কর্কশীট ও প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করে ভেলা তৈরি করে যাত্রী পরিবহন শুরু করি। তাদের প্রতি খেপে ১০-১২ জন পাড় হয়, জন প্রতি ৫ টাকা করে ৫০ থেকে ৬০ টাকা আয় হয় । প্রতিদিন ২০-২৫ খেপে যাত্রী পারাপার করে ১৫০০ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি।

মজিদ বলেন, নৌকার পরিবর্তে ককসিটের তৈরি ভেলা বানিয়ে মানুষ চলাচল করছে বলে থানায় অভিযোগ দেয়া হলে অনেক সময় পুলিশ এসে কর্কশীটের তৈরি ভেলা ছিড়ে কিংবা পুড়িয়ে দিয়ে যায়। তাই পুলিশ আসলে ভেলা বন্ধ করতে হয়।

পুলিশের সাথে এই লুকোচুরি খেলা ভালো লাগেনা জানিয়ে তিনি বলেন, নৌকা চালানোর অনুমতি দিলে সবার জন্যই ভালো। মজিদের সাথে গলা মিলিয়ে অন্যরা মাঝিরা বলেন, নৌকা না চালালে সংসার চালাবো কেমনে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে চাননা বস্তিবাসীরাও তাদের অভিযোগে বিকল্প ব্যবস্থা করা হোক।

এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার মফিজুর রহমান বলেন, গুলশান-বনানীর কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান-বনানী সোসাইটি, সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে লেকে নৌকা চালানো বন্ধ রয়েছে।। রাজউক রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছে। রাস্তা হয়ে গেলে আর ঘাট থাকবে না। তবে লেকবেষ্টিত কড়াইলের মানুষের দাবি ফের নৌকা পারাপার চালু করে কষ্ট লাঘবের।


(এসপি/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৩ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test