E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা কমছে

২০১৭ অক্টোবর ২৬ ১১:৩৭:৫৫
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা কমছে

স্টাফ রিপোর্টার : বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ সার-সংক্ষেপ পাঠানো হচ্ছে। এমনকি মন্ত্রিসভা বৈঠক ও মন্ত্রিসভা কমিটির সভার জন্য পাঠানো প্রস্তাবও নিয়মনীতি অনুসরণ করে পাঠাতে পারছেন না অনেক কর্মকর্তা। বিষয়টি তুলে ধরে সঠিকভাবে সার-সংক্ষেপ ও প্রস্তাব পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে বারবার তাগাদা দিয়ে চিঠিও পাঠানো হচ্ছে।

বারবার তাগাদার পরও সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এভাবে নিয়ম না মেনে ত্রুটিপূর্ণ প্রস্তাব পাঠানোর কারণে কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতার ঘাটতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

অনেক অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব আছেন যারা ইংরেজি বলতে পারেন না। বিদেশি ডেলিগেটদের মুখোমুখি হয়ে ইংরেজি বলার ভয়ে কর্মকর্তার ছুটি নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, কাজ করতে গেলে ছোটখাটো ভুলত্রুটি হতেই পারে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা কমেনি বরং আগের চেয়ে বেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজ’র। তবে কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। অনেকেই বলেছেন, প্রশাসনে এখন দলীয়করণের প্রভাব অনেক বেশি। তাই পদোন্নতি, ভালো পদায়নের ক্ষেত্রে এখন যোগ্যতার চেয়ে দলীয় আনুগত্যকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ কারণে কর্মকর্তাদের দক্ষতা কমছে- এটাই স্বাভাবিক।

কার্যবিধিমালা (রুলস অব বিজনেস) ও সরকারি কাজসংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান সম্পর্কে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই বলেও মনে করেন অনেকে।

কেউ কেউ বলছেন, অনেক অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব আছেন যারা ইংরেজি বলতে পারেন না। বিদেশি ডেলিগেটদের মুখোমুখি হয়ে ইংরেজি বলার ভয়ে কর্মকর্তার ছুটি নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান জাগো নিউজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে কীভাবে সামারি পাঠাতে হবে সেটা রুলস অব বিজনেস ও বিভিন্ন বিধি-বিধানে বলা আছে। কেউ সেটা না মেনে সামারি পাঠালে দক্ষতার প্রশ্ন তো আসবেই।’

সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘নানা কারণে বর্তমানে প্রশাসনের দক্ষতা নিয়ে এমনিতেই প্রশ্ন আছে। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও কোনো কর্মকর্তা ভুল বা অদক্ষতার পরিচয় দিলে তাকে শোকজ করা বা ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালো বা উৎকর্ষতার কোনো শেষ নেই। এভাবে চিঠি না পাঠালেও হয়, মিটিংয়ে বললেও হতো। চিঠি পাঠালে আমাদের টনক নড়ে। ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। পারফরমেন্স কমার কোনো কারণ নেই। আরও ভালো করার জন্য এ ধরনের তাগিদ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়, যাতে কোনো শৈথিল্য না আসে, কেউ হেয়ালিভাবে কোনো কাজ করতে না পারে।’

সিনিয়র সচিব আরও বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন কর্মকর্তারা। এখন সরকারে যারা আছেন মাননীয় মন্ত্রীরা তারাও খুব সূক্ষ্মভাবে কাগজপত্র বোঝার চেষ্টা করেন। আমলারা যতটুকু সূক্ষ্ম রাখা যায় সে চেষ্টা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফাইলের লাইন বাই লাইন পড়েন। তার চোখে ধরা পড়লে আমাদের জন্য বিব্রতকর অবস্থা হয়। সেটা মনে করে অনেকেই সাবধানে কাজ করেন।’

‘আমি মনে করি আগের চেয়ে আমাদের দক্ষতা অনেক বেড়েছে’ দাবি করেন মোজাম্মেল হক খান।

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ সার-সংক্ষেপ

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের (সিনিয়র সচিব/ভারপ্রাপ্ত সচিব) কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ সার-সংক্ষেপ (সামারি) প্রস্তুতের ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধি-বিধান (যেমন-কার্যবিধিমালা-১৯৯৬, সচিবালয় নির্দেশমালা-২০১৪, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে জারি করা এ সংক্রান্ত নির্দেশনা) যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ সার-সংক্ষেপ পাঠানো হচ্ছে। এমন সার-সংক্ষেপ নিষ্পত্তিতে অনাকাঙিক্ষত বিলম্ব ঘটছে, যা কাম্য নয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্তের জন্য প্রেরিত সার-সংক্ষেপ প্রস্তুতের সময় বিধিবিধান ও নির্দেশনাবলি আবশ্যিকভাবে অনুসরণের জন্য অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে কিছু বিষয় তুলে ধরে সে বিষয়ে যত্নশীল হওয়ার জন্যও বলা হয় ওই চিঠিতে।

‘সার-সংক্ষেপের বিষয় সূত্রে খ্রিস্টিয় তারিখের পাশাপাশি অবশ্যই বঙ্গাব্দ উল্লেখ করতে হবে। দীর্ঘ বাক্য ও পুনরুক্তি পরিহার করে সংক্ষিপ্ত অথচ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সুস্পষ্ট ও যুক্তিপূর্ণ ভাষায় সার-সংক্ষেপ প্রণয়ন করতে হবে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সংযোজিত সংলাপগুলো সুবিন্যস্ত ও সঠিক হওয়ার পাশাপাশি ছায়ালিপি/প্রতিলিপিগুলো স্পষ্ট পঠনযোগ্য হওয়া আবশ্যক। বিষয় ও বরাত সূত্রের সঙ্গে সংলাপের প্রাসঙ্গিক অংশ মার্কার দিয়ে দৃশ্যমান করা সমীচীন। পত্রাংশ যথানিয়মে পৃষ্ঠা নম্বর সম্বলিত হওয়া অপরিহার্য।’

‘স্বাক্ষরের জন্য নির্ধারিত স্থানে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ সিদ্ধান্ত/মন্তব্য/পর্যবেক্ষণ/আদেশাবলি লিপিবদ্ধ করার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরিসর রাখতে হবে।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলা বানানের শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী বাংলা একাডেমি প্রণীত বানানরীতি অনুসরণ করতে হবে।’

সার-সংক্ষেপ প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর জারি করা নির্দেশনা অনুসরণেরও অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে।

ভুল সার-সংক্ষেপ পাঠানো হচ্ছে মন্ত্রিসভায়

চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল ‘মন্ত্রিসভার জন্য সার-সংক্ষেপ প্রণয়ন, প্রেরণ, মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশগ্রহণ এবং মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিধি-বিধান, রীতি ও পদ্ধতি’ শিরোনামে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের (সিনিয়র সচিব/সচিব/ভারপ্রাপ্ত সচিব) কাছে একটি নির্দেশনা পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এতে বলা হয়, মন্ত্রিসভার জন্য সার-সংক্ষেপ প্রণয়ন ও প্রেরণ, মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশগ্রহণ এবং মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে বিধি-বিধান, রীতি ও পদ্ধতি প্রচলিত আছে, যা যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানিয়ে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পত্র দেয়া হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগুলোর ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর করণীয় বিষয় সম্বলিত একটি তালিকা এবং মন্ত্রিসভার জন্য সার-সংক্ষেপ প্রণয়ন ও পাঠানোর সময় একটি চেকলিস্টও ফের চিঠির সঙ্গে দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

নিয়ম না মেনে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে মন্ত্রিসভা কমিটিতে

সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট ‘মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য সার-সংক্ষেপ প্রণয়ন, প্রেরণ, মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অংশগ্রহণ এবং মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিধি-বিধান, রীতি ও পদ্ধতি’ শিরোনামে আরেকটি চিঠি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এতে বলা হয়, মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য সার-সংক্ষেপ প্রণয়ন ও প্রেরণ, মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অংশগ্রহণ এবং মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে বিধি-বিধান, রীতি ও পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এসব বিধি-বিধান, রীতি ও পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানিয়ে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পত্র দেয়া হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগুলোর ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর করণীয় বিষয়ের একটি তালিকা এবং মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য সার-সংক্ষেপ প্রণয়ন ও পাঠানোর সময় একটি চেকলিস্ট ফের চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত করে।

(ওএস/পিএস/অক্টোবর ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৩ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test