E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘কয়েকটি ছাড়া সব গার্মেন্টস কারখানা চালু রয়েছে’

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৭ ১৯:০১:৪৬
‘কয়েকটি ছাড়া সব গার্মেন্টস কারখানা চালু রয়েছে’

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমানে দেশের দুই হাজার ৯৭টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে গুটি কয়েক ছাড়া সব কারখানাই চালু রয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাসদর। আজ সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দিতে আয়োজিত এই প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাসদরের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। এতে গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত গত ৫০ দিনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এর আগে সর্বশেষ গত ২৮ ডিসেম্বর সেনাসদরের প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছিল।

লিখিত বক্তব্যে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ১৭২টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৫২৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে (মূলত গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায়) ৮৮টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভুত ৩০ বার মূল সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, বিজিএমইএ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে বর্তমানে দেশের ২ হাজার ৯৭টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে গুটি কয়েক (বেক্সিমকো গ্রুপ, সাউদার্ন ডিজাইনার্স লিমিটেড, স্বাধীন গার্মেন্টস (প্রা.) লিমিটেড ও সেল্ফ ইনোভেটিভ ফ্যাশন লিমিটেড) ছাড়া সকল কারখানাই চালু রয়েছে।

এই সেনা কর্মকর্তা আরও জানান, শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিগত এক মাসে ৪২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪টি, সরকারি সংস্থা/ অফিস সংক্রান্ত ৩টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ছিল ১৬টি।

এছাড়াও গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উৎযাপনের লক্ষ্যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।

কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ১৭ জানুয়ারি তারিখে রাজধানীর হাজারীবাগে অবস্থিত ফোনিক্স লেদার কমপ্লেক্স এ সংঘটিত অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে সেনাবাহিনী।

বিশ্ব ইজতেমা-২০২৫ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইজতেমা ময়দানে তুরাগ নদীর উপরে ৫টি ব্রিজ স্থাপন, বোম ডিসপোজাল দলসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল মোতায়েন ও পর্যাপ্ত সংখ্যক সেনা সদস্য যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত রয়েছে।

এছাড়াও, রাজধানীর সংস্কার কর্মকাণ্ড যেমন এন্টি পলিথিনি অপারেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পরিচালিত খাল পুনরুদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিগত এক মাসে যৌথ অভিযানে ৩৩৪জন মাদক ব্যবসায়ী অথবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন: ইয়াবা, ফেনিসডিল, অবৈধ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিগত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট দুই হাজার ১৪২ জনকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এসকল কাজের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশী কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্বও সার্বক্ষণিকভাবে পালন করে যাচ্ছে।

কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছে, তাঁদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী আজ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৮৫৯ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ৪১ জন এখনো চিকিৎসাধীন।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এই সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করে কর্মধারা অব্যাহত রাখবে সেনাবাহিনী।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা অপরাধমূলক কাজে জড়িত তাদের সামরিক আদালতে বিচার চলছে।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test