E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি ও সংস্কৃতিকর্মীদের নামে হত্যাচেষ্টা মামলায় আসকের উদ্বেগ

২০২৫ এপ্রিল ৩০ ১৯:৩৭:৪০
সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি ও সংস্কৃতিকর্মীদের নামে হত্যাচেষ্টা মামলায় আসকের উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার : বেসরকারি টেলিভিশনের তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা, জুলাই গনঅভ্যুত্থান মামলায় ৪ জেলায় কমপক্ষে ১৩৭ জন সাংবাদিককে আসামি এবং সাংস্কৃতিককর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়েরের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন আসে, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে আয়োজিত বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার ইউনেস্কো স্বীকৃতি, শোভাযাত্রায় বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মুখাকৃতির আদলে মুখোশ এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে। প্রশ্নোত্তরের এই পর্ব অনেকটা বাহাসে পরিণত হয়। এ ঘটনার পর একটি ফেসবুক পেজে সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্ন ঘিরে সংশ্লিষ্ট তিন টেলিভিশন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া ওই পেজ থেকে আরেকটি পোস্ট করে বলা হয়— এই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে ‘মার্চ টু দীপ্ত টিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা’। এর পরপরই তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে দায়ের হওয়া ৩২টি ফৌজদারি মামলায় অন্তত ১৩৭ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। এমনকি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও মামলা করা হয়েছে। অথচ গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা পর্যবেক্ষণে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সংক্রান্ত সংবাদ বেরিয়েছিল। কমিটি গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা পর্যবেক্ষণ করবে এবং সময়ে সময়ে মামলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে। অথচ কমিটি গঠনের পরেও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া কমিটি গঠনের পূর্বেকার মামলাগুলোর বিষয়েও কোনও ধরনের পদক্ষেপ স্পষ্ট নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যেকোনও সমাজের সৌন্দর্য হলো নাগরিকের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি। আর তা আইন দ্বারা অথবা প্রভাব বিস্তার দ্বারা সেই অধিকার খর্ব করার মতো ঘটনা যখন ঘটে, তখন সেটা নিপীড়ন বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বলে বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এ ধরনের মামলা কিংবা চাকরিচ্যুতির ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং যেকোনও সাংবাদিককে হয়রানি, নির্যাতন ও গনমাধ্যমের স্বাধীনতার কোনও ধরনের চাপ, কিংবা হস্তক্ষেপের ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। এ ধরনের ঘটনা সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে পেশাগত দায়িত্ব পালন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

এ ছাড়া এ ধরনের ঘটনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং জবাবদিহি সংকুচিত করে তোলে। এখানে উল্লেখ্য যে, গত দুই যুগে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় কিংবা এর সূত্র ধরে যেসব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাদের একজন সাংবাদিকেরও হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়নি, কিংবা শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। আর নিপীড়নের শিকার হয়েছেন— এমন সাংবাদিকের জন্য কোনও ধরনের প্রতিকার ব্যবস্থা নেওয়ার নজিরও বিরল। পেশাগত কাজে সাংবাদিকদের সুরক্ষা প্রদান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্যতম পূর্বশর্ত। এখনও পেশাগত কর্মে নিয়োজিত সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য এখনও সাংবাদিকতা পেশাটি আক্ষরিক অর্থে স্বাধীন কিংবা চাপমুক্ত হতে পারেনি। সরকারকে দ্রুত সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

আসক জানায়, সংস্কৃতিকর্মীদের বিরুদ্ধেও হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হয়েছে, যা সত্যিকার অর্থেই সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতি বিরূপ, বিদ্বেষমূলক আচরণ এবং তাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা বলেই বিবেচিত হয়। সম্প্রতি সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি, চলচ্চিত্র ও নাট্য অভিনয় শিল্পীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানে বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে, এমনকি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়নি। বরং বেআইনি ‘মব’ তৈরি করে নাগরিকের মর্যাদাহানি ও স্বাধীন চলাফেরায় হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকায় একজন অভিনয়শিল্পীকে বেআইনি ‘মব’ কর্তৃক আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ধরনের বেআইনি ‘মব’ সচেতন নাগরিকদের হতাশ ও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ঠ বলে দৃশ্যমান নয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, এ ধরনের ঘটনা সুশাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test