E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্বপ্নে কক্সবাজারে তিন দিনের সংলাপ শুরু আজ

২০২৫ আগস্ট ২৪ ১২:১৮:২৯
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্বপ্নে কক্সবাজারে তিন দিনের সংলাপ শুরু আজ

স্টাফ রিপোর্টার : আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পূর্ণ হবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর। অতীত সকল রেকর্ড ভেঙে নিজ দেশ মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে এদিন সীমান্ত পেরিয়ে উখিয়া-টেকনাফে অনুপ্রবেশ করেছিল প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। আগে অবস্থান করাসহ বাংলাদেশে অবৈধ রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন প্রায় ১৪ লাখ। গত অর্ধযুগ ধরে তাদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা চলে আসছে, কিন্তু আলোর মুখ দেখা যায়নি আজও।

যে কোনো মূল্যে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে কক্সবাজারে বসছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। রবিবার (২৪ আগস্ট) থেকে ২৬ আগস্ট উখিয়ার ইনানীর সেনাবাহিনী পরিচালিত হোটেল বে-ওয়াচ মিলনায়তনে চলবে উচ্চ পর্যায়ের এ আয়োজন।

এরই মাঝে গত রমজানে (১৪ মার্চ) ক্যাম্পে আয়োজন করা রোহিঙ্গাদের এক সমাবেশে ড. ইউনূস বলেছিলেন, এই ঈদ না হোক, আগামী ঈদে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ঈদ করতে পারবেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের উপস্থিতিতে উপদেষ্টার এমন প্রত্যাশা বাণী স্বস্তি এনেছিল সবার মাঝে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এই প্রত্যাশা আর বাস্তবায়ন হয়নি।

কোনোভাবেই প্রত্যাবাসনের পথ সুগম হচ্ছে না, বরং দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা। এরপরও যেকোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে ফেরাতে অঙ্গীকারবদ্ধ প্রধান উপদেষ্টা। এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের আগে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।

‘টেকঅ্যাওয়ে টু দ্যা হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্যা রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ যৌথভাবে আয়োজন করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোহিঙ্গা ইস্যু বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তর। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাখাইনের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। এর পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তোড়জোড় থাকলেও এই উদ্যোগ কতটা আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক জান্তার নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রিত জীবনে বছর বছর বাড়ছে ভোগান্তি। অপরাধ, মাদক ও নানা সহিংস কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়রা। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ইয়াবার দাপটে উখিয়া-টেকনাফের জনজীবন অতিষ্ঠ। এই পরিস্থিতিতে বহু প্রতীক্ষিত আন্তর্জাতিক সংলাপকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম পুনরুজ্জীবনের এক নতুন সুযোগ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, তিন দিনের এ সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাবিদ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। আশা করা হচ্ছে অন্তত ৪০টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা অনেক কষ্টকর। এ সম্মেলনে রোহিঙ্গারা সরাসরি তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবেন। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি রাখাইনে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ২৪ ও ২৫ আগস্ট পাঁচটি কর্ম অধিবেশনে হবে মূল আলোচনা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে মানবিক সহায়তা, নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও টেকসই সমাধান। ২৬ আগস্ট অতিথিরা পরিদর্শন করবেন উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির।

সূত্র বলছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে ১০৭ দেশের অংশগ্রহণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে উচ্চ পর্যায়ের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। কক্সবাজারের এই আয়োজনকে সেই সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা হিসেবে দেখছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফর ঘিরে কক্সবাজারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অস্ত্র আইন ১৮৭৮-এর ধারা ১৭(ক) (১) অনুযায়ী জেলার সব বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রধারীকে নিজ নিজ থানায় অস্ত্র জমা দিতে হবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল মান্নান বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয়ের পর আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। এখন আন্তর্জাতিক মহল কার্যকর পদক্ষেপ নিলে হয়ত শান্তি ফিরবে। সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও রোডম্যাপ বের হলেই, এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

স্থানীয়দের মতে, কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ঘিরে কড়াকড়ি নিরাপত্তার পাশাপাশি আশা-প্রত্যাশার চাপও বাড়ছে। আট বছর ধরে স্থবির থাকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবার গতি পাবে কি না সবটাই নির্ভর করছে এ সংলাপের সাফল্যের ওপর।

(ওএস/এএস/আগস্ট ২৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৪ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test