E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সবুজ আন্দোলন

বাণিজ্যিক ভাবে বন্যপ্রাণী প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০১ ১৭:৪৯:০১
বাণিজ্যিক ভাবে বন্যপ্রাণী প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার : একদিকে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যদিকে অনিরাপদ আবাসনের কারণে বন্যপ্রাণীদের বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। গত শতাব্দীতে ১১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১ প্রজাতির সরীসৃপ ও অনেক প্রজাতির পাখি চিরতরে হারিয়ে গেছে। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে ২৩০ প্রজাতি। মানুষের জীবন চক্রে বন্যপ্রাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

মূলত যে সকল কারণে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে তার অন্যতম কারণ বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, বন উজার করে নগরায়ন, অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী শিকার, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, মাটি পানি ও বায়ু দূষণ। তবে সব থেকে বেশি ক্ষতির কারণ হচ্ছে বনের মধ্যে শিল্প কলকারখানায় স্থাপন।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিভিন্ন শাস্তির বিধান থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ খুব বেশি চোখে পড়ে না। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে খুব বেশি তৎপরতা দেখতে পায় না জনগণ যার ফলশ্রুতিতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করতে জনগণের করণীয় কি তা তারা বুঝতে পারে না। যদিও বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে প্রথম বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা হয় পরবর্তীতে ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী নিধন সংক্রান্ত আইন সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান অনুযায়ী বন্যপ্রাণী ধরা, মারা, বিক্রি, পরিবহন ও লালন-পালন সম্পন্ন নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইন অনুযায়ী শিকারের জন্য সর্বনিম্ন কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড এবং সর্বোচ্চ দন্ড হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা জরুরি এবং অর্থদণ্ডের পরিমাণ আরো বহু গুণ বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বন্যপ্রাণী প্রদর্শনী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে অর্থাৎ দেশের সকল চিড়িয়াখানা জনসাধারণের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে শুধুমাত্র গবেষণা এবং প্রজননের জন্য চিড়িয়াখানা চালু রাখতে হবে।

যদিও সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট বনভূমির পরিমাণ প্রায় ১৮ শতাংশ। দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলবর্তী সুন্দরবন, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বনভূমি, ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলা এবং রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অঞ্চল। এর আনুপাতিক হার ধরলে সুন্দরবন বাদে সবুজায়ন রয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। নিয়ন্ত্রণহীন জনসংখ্যার চাপে ক্রমশই বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বনজ সম্পদ। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ নেমে আসায় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে আবহাওয়ায়। বাতাস দূষিত হচ্ছে, ক্ষয় হচ্ছে মাটি। পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় অনাবৃষ্টি দেখা দিচ্ছে। যার ফলে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে মোট ৪ লাখ ১৬ হাজার ২৫৬ একর, যার মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ হেক্টর বনভূমি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি শিকার হয়েছে জবর দখলের। ক্রমবর্ধমান এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনভূমি ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে বন্যপ্রাণীর ৩৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ আরো প্রায় ৩০ প্রজাতির অস্তিত্ব মারাত্মক সংকটে রয়েছে, যা ক্রমে বনকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তুসংস্থানের জন্য অশনি সংকেত।

বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ আইন, ১৯৯৫ লঙ্ঘন করে নির্বিচারে শিল্পায়ন ও বিভিন্ন শিল্প বিশেষ করে ডায়িং কারখানা ও ট্যানারিগুলোর শিল্পবর্জ্য নদ-নদী, খাল-বিলসহ প্রাকৃতিক উন্মুক্ত জলাধারগুলোয় নিক্ষেপণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জলাধার বা জলজ জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে নষ্ট করা হচ্ছে। বন ও জলজ বাস্তুসংস্থানের ওপর অভিঘাতের সঙ্গে সাম্প্রতিক কয়েক দশকে বাংলাদেশে বায়ুদূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। পাশাপাশি কীটনাশকসহ অজৈব সারের যথেচ্ছ ব্যবহারে মাটির উর্বরাশক্তি রক্ষাকারী প্রাকৃতিক অনুজীবসহ শস্য ও সবজির ওপর নির্ভরশীল খাদ্যশৃঙ্খলের বিভিন্ন পাখি ও প্রাণী আশঙ্কাজনক হারে মরার কারণে মানুষের জীবন ও টেকসই জীবিকার ওপর হুমকি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

জাতীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে দেশের বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও বনজ সম্পদের উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। আর বাংলাদেশে রয়েছে বনায়নের বিপুল সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে।

করণীয়

* দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ,

* বিনামূল্যে বীজ ও চারা সরবরাহ

*নদীর কিনারা ও সড়কের দুপাশে গাছ লাগানো,

* বনভূমির গাছকাটা রোধ,

* অপরিণত গাছ কাটা বন্ধ করা

* বিদেশী প্রজাতির গাছ আমদানি বন্ধ

* সরকারি বনাঞ্চলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

*বনাঞ্চল সংরক্ষণে নতুন নতুন জায়গা অধিগ্রহণ এবং পাহাড় কর্তন রোধ করা।

আসুন আমরা সকলেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সর্বস্তরের বনাঞ্চল রক্ষায় জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলি।

আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর ফিরোজ জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডক্টর মনিরুল হাসান খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রুরাল এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ডক্টর আদিল মুহাম্মদ খান, পরিবেশবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি মাহমুদুর রহমান পাপন, আইডিয়াস'র পরিচালক পরিকল্পনাবিদ রাসেল আহমেদ।

এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাতৃভূমি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম হানিফ মাস্টার, প্রত্যাশার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন, সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের মহাসচিব মহসিন শিকদার পাভেল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)’র সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ নুরুজ্জামান হীরা, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টির সদস্য সচিব ফাতেমা তাসনিম, গণঅধিকার পেশাজীবী পরিষদের সহ-সভাপতি ইমরান হোসেন প্রমূখ।

(পিআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test