E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলামের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

২০২৫ ডিসেম্বর ১৭ ১৭:২০:৪৩
ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলামের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন শিল্পের পথিকৃৎ ও ওয়ালটন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলামের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। 

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বুধবার ওয়ালটনের হেডকোয়ার্টার্স, করপোরেট অফিসসহ দেশব্যাপী ওয়ালটনের সার্ভিস সেন্টার, প্লাজা এবং পরিবেশক শোরুমগুলোতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

মহৎপ্রাণ ব্যক্তি নজরুল ইসলাম ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাতে না-ফেরার দেশে চলে যান। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। সে সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর তার নিজ গ্রাম গোসাই জোয়াইরে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।

কর্মজীবনে সফল ব্যক্তিত্ব আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম ৭ মে, ১৯২৪ সালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোসাই জোয়াইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এস এম আতাহার আলী তালুকদার এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ শামছুন নাহার।

প্রথমে বাবা এস এম আতাহার আলী তালুকদারের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত হলেও স্বাধীনতার পর আলাদাভাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক অবস্থায় তিনি নানাবিধ প্রতিক‚লতার সম্মুখীন হন। কিন্তু তার সততা ও কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে সব প্রতিক‚লতা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেন।

দেশের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রেজভী অ্যান্ড ব্রাদার্স, সংক্ষেপে আরবি গ্রুপ। রেজভী তার বড় ছেলে। পাঁচ ছেলে আর দুই মেয়ের পিতা তিনি। যে ব্যবসাতেই হাত দিয়েছেন, সফলতা পেয়েছেন সেখানেই। সৎ, নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সব মহলে ।

নজরুল ইসলাম তার ছেলেদের নিয়ে বৈঠক করে ব্র্যান্ডের নাম ঠিক করলেন ওয়ালটন। পারিবারিক বৈঠকে আরেকটি নাম ঠিক হয় মার্সেল। তবে প্রথমে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের নামেই যাত্রা শুরু। আরবি গ্রæপ নাম বদলে হয়ে গেল ওয়ালটন গ্রুপ। যাতে বিশাল ভূমিকা রাখেন তার মেধাবী সন্তানরা। আগে যেখানে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কথাটাকে অবহেলার চোখে দেখা হতো, একসময় সেটিই হয়ে ওঠে সম্মানের এক শ্লোগান।

এক সময় দেশে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয় ওয়ালটন পণ্যের। এই ব্র্যান্ডের পণ্যের উচ্চমান গ্রাহকদের আশাবাদী করে তোলে। এরপর শুরু হয় একই গ্রæপের আরেক ব্র্যান্ড মার্সেলের পথ চলা। নজরুল ইসলামের দূরদর্শিতা ও সুযোগ্য পরিচালনায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ওয়ালটন পণ্যের সুনাম ও খ্যাতি আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

২০০৬ সালে গাজীপুরের চন্দ্রায় জায়গা কিনে ওয়ালটনের নিজস্ব কারখানা নির্মাণের কাজে হাত দেওয়ার পর প্রথমে কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে সেসব বাধা পেরিয়ে নিজেদের অর্থেই কারখানা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। ২০০৮ সালে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত হয় ওয়ালটন ফ্রিজ। সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের পণ্য এবং সেবা দিয়ে জয় করে নেন গ্রাহকের আস্থা। পর্যায়ক্রমে শুরু হয় টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েব ওভেন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, কম্প্রেসার, লিফট, ফ্যান, সুইচ-সকেট, ক্যাবলসসহ শতাধিক ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স সামগ্রীর উৎপাদন। বর্তমানে ফিনিশড গুডসের পাশাপাশি ৫০ হাজারেরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পোনেন্টস ও ম্যাটেরিয়ালস উৎপাদন ও বাজারজাত করছে ওয়ালটন।

ওয়ালটন শুধু দেশেই বাজারজাত করে সীমাবদ্ধ থাকেনি। প্রথমে মধ্যপ্রাচ্য দিয়ে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়ে বর্তমানে ৫০টিরও বেশি দেশে যাচ্ছে ওয়ালটন পণ্য। মেড ইন বাংলাদেশ লেখাটি এখন বিশ্বের মানুষের কাছে সম্মান আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছে।

এরপর ‘সময় এখন বাংলাদেশের’ শ্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম মোবাইল ফোনের কারখানা। পরবর্তী সময়ে ল্যাপটপও উৎপাদন শুরু করে ওয়ালটন। এর মধ্য দিয়ে ওয়ালটন কারখানা কমপ্লেক্স হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন ও গবেষণাগার। প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি।

বর্তমানে বাংলাদেশে শিল্পায়নের মডেল হয়ে উঠেছে ওয়ালটন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ ওয়ালটনের উদ্যোগকে অভিহিত করেছেন আসল শিল্প হিসেবে।

ব্যবসায়িক সাফল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাÐে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, টাঙ্গাইল জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক এবং টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় জমি বন্ধকি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি তার গ্রামে এস এম নজরুল ইসলাম কারিগরি বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সাহায্য-সহযোগিতা দিতেন। অসুস্থ ও দরিদ্র মানুষের জন্য তার হৃদয় কাঁদতো। তিনি গ্রামের দুস্থ, বৃদ্ধ ও মহিলাদের জন্য বয়স্কভাতা প্রকল্প চালু করেছেন।

(এসএম/এএস/ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test