E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আজ শুভ বড়দিন

২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ১৩:৪৮:৫৮
আজ শুভ বড়দিন

স্টাফ রিপোর্টার : আজ খ্রিষ্টানদের ঘরে ঘরে উৎসবের আনন্দধারা। বর্ণিল আলোকের রোশনাইয়ে ভেসে যাচ্ছে গির্জা, ঘর-দুয়ার আর অভিজাত হোটেলগুলো। সাজানো হয়েছে গোশালা, ক্রিসমাস ট্রি আর বহুবর্ণের বাতি দিয়ে। আজ ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড়দিন। খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাসে ‘পাপীকে নয়, ঘৃণা করো পাপকে আর ‘ঘৃণা নয়, ভালোবাসো’—এই ‘সদা দীপ্ত রহে অক্ষয় জ্যোতির্ময়’ আহ্বান নিয়ে মানুষের ‘মনের রাজা’ যিশু খ্রিষ্ট এদিন আসেন এই পৃথিবীতে। তাই এদিনে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালন করছে তাদের এই সবচেয়ে বড় উৎসব।

আজ প্রভাতে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা (খ্রিষ্টযোগ) হবে। সব বাড়িতেই থাকবে কেক, পিঠা, কমলালেবু, পোলাও-বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ও উন্নতমানের খাবারদাবারের আয়োজন। বেড়ানো, ধর্মীয় গান, কীর্তন, অতিথি আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে পরমানন্দে দিনটি কাটাবেন তারা।

আজ সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন, বেসরকারি টিভি ও রেডিও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীসহ সবার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

আজ থেকে প্রায় ২ হাজার ২৪ বছর আগে জেরুজালেমের বেথেলহেম শহরের এক গোয়ালঘরে সেইন্ট মেরির (মুসলমানদের কাছে যিনি পরিচিত হজরত মরিয়ম আ. নামে) গর্ভে জন্ম হয়েছিল যিশুর, ঈশ্বর যাকে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মানবজাতির মুক্তির জন্য। যিশু নামের সেই শিশুটি বড় হয়ে পাপের শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষকে মুক্তির বাণী শোনালেন। তিনি বললেন,‘ঘৃণা নয়, ভালোবাসো। ভালোবাসো সবাইকে, ভালোবাসো তোমার প্রতিবেশীকে, এমনকি তোমার শত্রুকেও। মানুষকে ক্ষমা করো, তাহলে তুমিও ক্ষমা পাবে। তিনি বললেন, ‘পাপীকে নয়, ঘৃণা করো পাপকে। গরিব-দুঃখীদের সাধ্যমতো সাহায্য করো, ঈশ্বরকে ভয় করো।’ যিশুর কথা শুনে অনেকে তাদের মন ফেরাল।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। কাকরাইলসহ কয়েকটি গির্জায় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সোনারগাঁও হোটেল, রেডিসনসহ নামিদামি তারকা হোটেলগুলোতে আনন্দমুখর প্রস্তুতি। কাকরাইলের রমনা সেইন্ট ম্যারিস ক্যাথিড্রাল চার্চ ও মোহাম্মদপুরের সেইন্ট ক্রিস্টিনা গির্জার ভেতরে ও বাইরে নানা রঙের বেলুন, নকশা করা ককশিট, রঙিন কাগজ, জরি ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কৃত্রিম ‘ক্রিসমাস ট্রি’। গির্জা প্রাঙ্গণে থাকা গাছে ঝোলানো হয়েছে রংবেরঙের বাতি। গির্জার মূল ফটকের বাইরে মেলা বসেছে। মেলার দোকানগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সান্তা ক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হচ্ছে।

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের এই প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে ঢাকাসহ দেশের গির্জাগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বড়দিন উপলক্ষে দেশের গির্জাগুলোর প্রবেশপথে তল্লাশি, সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে। র্যাব ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গির্জা, উপাসনালয়সমূহ ও অনুষ্ঠানস্থলে প্রয়োজনীয় স্যুইপিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভার্চুয়াল জগতে যে কোনো ধরনের গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে পুলিশ ও র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখছে। যারা সাইবার জগতে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে উসকানি দেওয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালাবে তাদেরকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব। গির্জাসমূহের নিরাপত্তা রক্ষায় সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদেরকে গির্জা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাসেবক টিমকে সহায়তা করবে। সুষ্ঠুভাবে উত্সব পালনে পুলিশ সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছে।

গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল চার্চ পরিদর্শন শেষে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব জায়গায় সবাই যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে উত্সবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করতে পারে সেজন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, আমরা নিয়েছি।’

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test