E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

‘ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতির সূতিকাগার’

২০১৫ জুন ১৫ ১৭:৪০:১১
‘ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতির সূতিকাগার’

স্টাফ রিপোর্টার : ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতির সূতিকাগার। অনেক উদ্যোগ নিয়েও দুর্নীতি বন্ধ করা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী। আজ সোমবার ব্র্যাক আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘ইনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড সোশ্যাল ব্যারিয়ারস ফর উইমেন অ্যান্ড মার্জিনালাইজড কমিউনিটিজ টু অ্যাকসেস ল্যান্ড অ্যান্ড প্রোপার্টি রাইটস’ শিরোনামে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। ব্র্যাক এর মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি ছিল এটির আয়োজক।

অনেক বলার পরও দুর্নীতি না কমার প্রসঙ্গ টেনে ভূমি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্যাপারটি ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি’র মতো অবস্থা। এ ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন দুর্নীতি রোধের একমাত্র উপায় বলে মনে করেন তিনি। সরাসরি কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে (ম্যান টু ম্যান কন্টাক্ট) যোগাযোগ যত দিন না কমবে, তত দিনে দুর্নীতি কমবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার দাবির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামে সম্পত্তির উত্তরাধিকার সম্পর্কে যা বলা আছে, তা যথেষ্ট যৌক্তিক।’

এ ছাড়া তিনি ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢাকার বাইরের জেলা-উপজেলা পর্যায়েও সেমিনার করে সাধারণ মানুষকে অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে পরামর্শ দেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স স্টাডিজের ইনস্টিটিউশনাল অ্যাডভাইজর মঞ্জুর হাসান বলেন, শহরাঞ্চলে সম্পত্তি বণ্টনের সময় কী কী অসুবিধা হয়, সেগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। বাংলাদেশে আইনের শাসন খুব দুর্বল। ভূমি বণ্টনে অব্যবস্থাপনা এরই একাংশ।

সেমিনারে দুটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রথম গবেষণা প্রতিবেদনটি উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলার পাঁচটি উপজেলার ৫৪২ জনের ওপর জরিপের ভিত্তিতে করা হয়। এ বিষয়ে ভূমি জরিপ বিভাগের সাবেক পরিচালক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ভূমি অফিসগুলো নারীবান্ধব নয়। নারীরা উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে খুব একটা জানেন না। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা মেটাতে স্থানীয় সরকার আইন পরিবর্তন করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতায়িত করার প্রস্তাব দেন তিনি।

সেমিনারের মুক্ত আলোচনা পর্বে কয়েকজন অংশগ্রহণকারী অভিযোগ করেন, সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় ভাইয়েরা সম্পত্তিতে বোনদের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা চেয়ারম্যানেরা সনদ দিয়ে তাঁদের সহযোগিতা করেন।

চারটি জেলার মুসলিম, হিন্দু ও সাঁওতাল রমণীরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাচ্ছেন কি না, তা দ্বিতীয় গবেষণা প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফেরদৌস জাহান এ গবেষণাটি করেন।

ফেরদৌস জাহান বলেন, মুসলিম নারীরা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হলেও পরিবারের অসহযোগিতার জন্য পান না। হিন্দু নারীদের বিয়ের সময় যৌতুক দেওয়া হয়। এর বাইরে তাঁরা কোনো সম্পত্তি পান না। সাঁওতালদের মধ্যে যৌতুক প্রথা নেই, তার পরও সাঁওতাল নারীরা সম্পত্তি পান না।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের এর উপদেষ্টা সারা হোসেন বলেন, মুসলিম পারিবারিক আইনে ‘উপহার’ দেওয়ার সুযোগ আছে। অনেক পরিবারই ছেলে-মেয়েকে সম্পত্তি সমান ভাগে বণ্টন করে উপহার হিসেবে দিচ্ছেন। এ ছাড়া ভূমি বণ্টন নিয়ে যেসব ঝুট-ঝামেলা হচ্ছে, সেগুলো মেটাতে সরকারের আইনগত সহায়তা কার্যক্রমকে ভালোভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইনগত সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক ফস্টিনা পেরেরা ভূমি প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশে বলেন, ব্র্যাক ঢাকায় বসে সেমিনার করে না। ব্র্যাকের আইনগত সহায়তা কর্মসূচি ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি মনে করেন ভূমি নিয়ে জটিলতা মেটাতে মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় বাড়ানো উচিত।

(ওএস/এএস/জুন ১৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test