ঘুরে আসুন রাজবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী ৪ দর্শনীয় স্থান

একে আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলা বাংলাদেশের মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোয়ালন্দ মহকুমা ফরিদপুর থেকে পৃথক হয়ে রাজবাড়ী জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ঢাকাসহ বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব অংশে সহজে যাতায়াতের অবধারিত একটি স্থান হওয়ায় একে 'বাংলার দ্বারপথ' নামে অভিহিত করা হত। রাজবাড়ী জেলার উত্তরে পদ্মানদীর ওপারে পাবনা জেলা, পূর্বে পদ্মা নদীর ওপারে মানিকগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে ফরিদপুর, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলা এবং পশ্চিমে কুষ্টিয়া জেলা অবস্থিত। এ জেলায় রয়েছে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। স্থানীয় ও বাইরের জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা এসব স্থানে ভ্রমণ করেন। চাইলে একদিনেই জেলার চারটি ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানে ঘুরে আসতে পারেন।
কল্যাণ দীঘি
রাজবাড়ী জেলার নবাবপুর ইউনিয়নের রাজধরপুর গ্রামের পাশে কল্যাণ দীঘি অবস্থিত। বর্তমানে বিশালাকারের দীঘিটি সমতল বিলে পরিণত হলেও দীঘির আয়তন স্পষ্টই বুঝতে পারা যায়। ১৬ খাদা জমি নিয়ে এমন বিরাট আয়তনের দীঘি এ অঞ্চলে বিরল। অনেকের মতে অষ্টাদশ শতকে রাজা সীতারাম কল্যাণ দীঘি কল্যাণ দীঘি খনন করেন। রাজা সীতারাম রাম সাগর, সুখ সাগর এবং কৃষ্ণ সাগর দীঘি গুলো খনন করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। লোকমুখে প্রচলিত আছে রাজা সীতারামের ২০০ জন সৈন্যের এক বাহিনী ছিল যারা যুদ্ধের সময় ব্যতীত মানুষের পানির কষ্ট দূর করতে জলাশয় খনন করতেন। রাজা সীতারাম প্রতিদিন নতুন খননকৃত জলাশয়ের স্নান করতেন বলেও মানুষের মুখে শুনতে পাওয়া যায়।
আবার অনেকে মনে করেন কল্যাণ দীঘি খান জাহান আলী কর্তৃক খননকৃত। ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে যান জাহান আলী যশোর এবং খুলনা অঞ্চল জয় করে খলিফাতাবাদ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। খান জাহান আলী জনহিতকর কাজের অংশ হিসাবে অসংখ্য দীঘি খনন করেন। খান জাহান আলী ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে একদল ধর্ম প্রচারক কে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রেরণ করেন। আর তাদের দ্বারা কল্যাণ দীঘি খনন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
যেভাবে যাবেন:ঢাকার গাবতলি থেকে রাবেয়া, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, রাজবাড়ী পরিবহণ, সপ্তবর্ণা, সাউদিয়া বাসে চড়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে রাজবাড়ী যেতে পারেন। এছাড়া ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে রাজবারী আসতে পারবেন। রাজবাড়ী থেকে ইজিবাইক অথবা স্থানীয় যেকোনো পরিবহনে কল্যাণ দীঘি দেখতে যারে পারবেন।
জোড় বাংলা মন্দির
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া গ্রামে পাশাপাশি দুটি মন্দির অবস্থিত। আর এই মন্দিরকেই জোড় বাংলা মন্দির নামে ডাকা হয়। একটি মন্দিরের চূড়া থাকলেও অন্য মন্দিরের চূড়া অবশিষ্ট নেই। ১৬৫৫ সালে উড়িষ্যার গৌড়ীয় রীতিতে রাজা সীতারাম রায় এ জোড় বাংলা মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে শ্রী কৃষ্ণ রাম চক্রবর্তী রাজা সীতারাম রায়ের অনুরোধে নলিয়া গ্রামে এসে দেব মন্দির এবং বিগ্রহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
যেভাবে যাবেন: রাজবাড়ী থেকে বালিয়াকান্দি বা সরাসরি জোড় বাংলা মন্দিরে যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। বালিয়াকান্দি থেকে সড়ক পথে জোড় বাংলা মন্দিরের দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার। বালিয়াকান্দি বাস স্ট্যান্ড থেকে ইজিবাইক, বাস অথবা স্থানীয় যেকোনো পরিবহণ এ চড়ে জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া গ্রামে অবস্থিত জোড় বাংলা মন্দিরে যেতে পারবেন। এছাড়া ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা থেকে খুব সহজে জোড় বাংলা মন্দিরে যাওয়া যায়।
জামাই পাগলের মাজার
রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ভুক্ত আলাদিপুর গ্রামে জামাই পাগলের মাজার অবস্থিত। ধারণা করা হয় ১৯৬০ সালের দিকে নেংটি পরিহিত এক ব্যক্তি বর্তমান মাজার প্রাঙ্গণের শেওড়া গাছের নিচে অবস্থান নেন। তার নামে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা প্রচলিত আছে। কথিত আছে, পাবনা জেলায় এক ধনী ব্যক্তি তার বোবা মেয়েকে গ্রামের এক পাগলের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের রাত শেষ হতেই বোবা মেয়ে কথা বলতে শুরু করেন। কিন্তু সেই পাগল জামাইকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে তারা রাজবাড়ী জেলার আলাদিপুরে তার সন্ধান পেলেও তিনি আর সংসারে ফিরে যায়নি। এই ঘটনার পর থেকে জামাই পাগল
নাম সবার মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, জামাই পাগল যখন আলাদীপুরে আসেন তখন এখানে অনেক মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছিল তখন তিনি সকলকে সারিয়ে তোলেন। ধীরে ধীরে মানুষজন বিভিন্ন বিপদমুক্তির আর্জি নিয়ে তার কাছে আসতে থাকেন। তাকে কেউ কিছু বললে তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করতেন এবং তার উছিলায় মানুষের সমস্যার সমাধান হতো। জামাই পাগলের মৃত্যুর পর এক আগন্তুক সৎকারের সমস্ত ব্যবস্থা করেন এবং এখানে একটি মাজার গড়ে তোলা হয়। এরপর নুর বাকের শাহ নামের এক ভক্ত এখানে অবস্থান নেন। নুর বাকের শাহ এর মৃত্যুর পর গৌরী পাগলী মাজারটি দেখাশুনা করতেন। মাজার প্রাঙ্গণে একটি সুবিশাল মসজিদ রয়েছে। মাজারের ভেতরে মুর্শিদ জামাই পাগল, নুর বাকের শাহ এবং গৌরী পাগলীর পৃথক পৃথক কবর রয়েছে।
যেভাবে যাবেন: রাজবাড়ী জেলা সদর থেকে মুর্শিদ জামাই পাগল মাজারের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। রাজবাড়ী জেলা সদর এসে রিকশা বা ইজিবাইক নিয়ে সহজেই মাজারে যাওয়া যায়।
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় মহাকাব্যিক উপন্যাস বিষাদ সিন্ধু'র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়া গ্রামে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মীর মশাররফ হোসেনের পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে বাস করতেন। জানা যায় মীর মশাররফ হোসেনের পূর্বপুরুষ সৈয়দ সাদুল্লাহ বাগদাদ থেকে প্রথমে দিল্লী এবং পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলার স্যাকরা গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন।
মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০১ সালে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রায় দুই একর জায়গা জুড়ে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র ২০০৫ সালে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রে আছে সংগ্রহশালা, ১০০ আসন বিশিষ্ট সেমিনার কক্ষ, দফতর, গ্রন্থাগার, অতিথি কক্ষ, অভ্যর্থনা কক্ষ, ডাইনিং, কিচেন এবং প্রসাধন কক্ষ। বর্তমানে এই স্মৃতি কেন্দ্রটিতে অসংখ্য দর্শনার্থী ভ্রমণ করতে আসেন। শুক্র ও শনিবার সহ সকল ধরনের সরকারি ছুটির দিনে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকে।
যেভাবে যাবেন: রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ করে সরাসরি মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র যেতে পারবেন।
(ৎএকে/এসপি/জানুয়ারি ২২, ২০২৫)
পাঠকের মতামত:
- ‘হাসিনার নির্দেশেই আন্দোলনে মারণাস্ত্রের ব্যবহার হয়’
- ‘আ.লীগ দেশের জন্য রাজনীতি না করে ভারতের তাবেদারি করেছে’
- শ্যামনগর বিএনপি’র একাংশের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
- কুষ্টিয়ায় জিকে খালে মিলল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ
- প্লট জালিয়াতি, শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু
- ‘আমরা এমন জাতি নিজেদের সন্তানদেরও পুড়িয়ে মারি’
- ‘শেখ হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না’
- ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৪ জন
- নিজেকে বাঁচাতে মাকে দিয়ে বাদির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা সন্ধিগ্ধ আসামী রফিকুলের!
- জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- আরবি লেখা শেখার ছলে ঘরে নিয়ে শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, ধর্ষক গ্রেফতার
- সাত উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম ব্যাচের 'শিক্ষা সমাপনী
- হৃদরোগে আক্রান্ত জামায়াত আমির, বাইপাস সার্জারির পরামর্শ
- ‘৫ আগস্ট ঘিরে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই’
- ‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে ফ্যাসিস্ট মাথাচাড়া দিতে পারে’
- শ্রীনগরে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে চলছে স্বাস্থ্য সেবা
- হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা
- ‘গাজীপুরে আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে’
- ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৮৬ জন
- ১০২ এসিল্যান্ড প্রত্যাহার
- জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি ঐক্য পরিষদের
- ‘তিন মাসে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন হয়েছে, এক বছরেও না হওয়ার কারণ দেখছিনা’
- পাংশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শাহীন গ্রেপ্তার
- জামালপুরে দুই টিকিট কালোবাজারি আটক
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- ‘আমরা এমন জাতি নিজেদের সন্তানদেরও পুড়িয়ে মারি’
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
- রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে
- মহুয়া বনে
- সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রতিবাদে শেরপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ
- প্লট জালিয়াতি, শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ