E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

ই-টোকেনই সোনার হরিণ !

২০১৪ নভেম্বর ১৬ ২০:৩৯:০৫
ই-টোকেনই সোনার হরিণ !

বিশেষ প্রতিনিধি : ভিসা তো দূরে থাক, ভারতীয় ভিসা আবেদনের ই-টোকেন এখন সোনার হরিণ। ভিসা প্রসেসিংয়ের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে ই-টোকেন। বিনামূল্যের ই-টোকেন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। ই-টোকেনের বাণিজ্য করে সংঘবদ্ধ ওই সিন্ডিকেটটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, ই-টোকেন না পেয়ে মুমূর্ষ রোগী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ই-টোকেন না পেয়ে জরুরি প্রয়োজনে অনেকে অবৈধ পথে ভারতে পা বাড়াচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ৭ লাখ লোক ভিসা নিয়ে ভারতে যায়। ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, মাল্টিপোল ভিসা প্রদান, ভ্রমণ, চিকিৎসা, আত্মীয়তার কারণে এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা প্রাপ্তি সহজতর করার জন্যে ভারতীয় ভিসা প্রসেসিং কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ই-টোকেন (ভিসা প্রাপ্তির আবেদনপত্র জমা দেয়ার তারিখসহ) দেয়ার ব্যবস্থা করে। এই ই-টোকেন নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ভিসা প্রদানের কাউন্টারে জমা দেয়ার পরই ভিসা দেওয়া হয়। কিন্তু এই ই-টোকেনই এখন সোনার হরিণ ! ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা চালিয়েও ই-টোকেন পাওয়া যাচ্ছে না। কোন কোন সাইবার ক্যাফে, কম্পিউটারের দোকান ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ই-টোকেন সংগ্রহ করে দিচ্ছে। অসহায় গরীব রোগীরা এত টাকার বিনিময়ে ই-টোকেন নিতে পারছে না।

যশোর শহরের খড়কী এলাকার মসলেউদ্দীন গুরুতর অসুস্থ। তাঁর ছেলে রিয়াদেরও চোখের সমস্যা। মসলেউদ্দীন গত এক মাস ধরে ই-টোকেনের জন্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিয়েও ই-টোকেন পাননি। তিনি বললেন, ‘শহরের মিতা সাইবার ক্যাফে, তাথৈ ট্রেডার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে, প্রতিটি ই-টোকেনে ২ হাজার টাকা লাগবে। আমি গরীব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? আমি শুনেছি ভিসা প্রসেসিংয়ের সঙ্গে যুক্তরা বিশেষ পছন্দের সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ই-টোকেন দিচ্ছে।’

কুষ্টিয়ার থানাপাড়ার গৃহবধূ ইসমত আরা বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও ই-টোকেন সংগ্রহ করতে পারিনি। একজন ই-টোকেনের জন্যে ৩ হাজার টাকা চেয়েছে। এত টাকা দিয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্যে যাওয়া সম্ভব নয়।’ যশোর শহরের চাঁচড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন বললেন, ‘আমি ২ হাজার টাকা দিয়ে ই-টোকেন নিয়েছি। খুলনার ভিসা সেন্টারে আরো ৬শ’ টাকা জমা দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করেছি।’

যশোর শহরে এমএসটিপি স্কুলের সামনে সাইবার ক্যাফে তাথৈ ট্রেডার্সের সত্ত্বাাধিকারী বাবুল হোসেন বলেন, ‘রাত দিন চেষ্টা করেও ই-টোকেন পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার সাইবার ক্যাফেওয়ালারা যোগাযোগ করে অনেক টাকার বিনিময়ে ই-টোকেন দিচ্ছে। ভারতের ভিসা প্রসেসিংয়ে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। সেখানকার লোকরা নিজেদের লোকদের ই-টোকেন দিচ্ছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই এলাকার আরেকটি সাইবার ক্যাফের মালিক বলেন, ‘আমরা ২ হাজার টাকা নিয়ে ই-টোকেন দিচ্ছি। এর জন্যে ঢাকার সিন্ডিকেটকেই দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৭শ’ টাকা।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য হচ্ছে, দুই দেশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সৌহার্দ্য সম্প্রীতির কথা বলছে। নানা কারণে প্রতিবেশী দেশে হাজার হাজার মানুষ যাচ্ছে। কিন্তু সাইবার ক্রাইম সিন্ডিকেট ই-টোকেন নিয়ন্ত্রণ করে দুই দেশের সম্পর্ককে তিক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’

(অ/নভেম্বর ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test