E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

আজ পরেশের শ্রাদ্ধ !

২০১৪ নভেম্বর ২২ ০৮:৩১:০৩
আজ পরেশের শ্রাদ্ধ !

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : আজ শনিবার। মৃত্যুর ১৩ দিন পর শাস্ত্রীয় মতে আয়োজন করা হয়েছে পরেশ সাধুর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের। এক দেশে নয়, দু’দেশে হবে মন্ত্র পাঠ। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশে একজন মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনায় শ্রাদ্ধের মন্ত্র উচ্চারিত হচ্ছে। বাংলাদেশে মন্ত্র পাঠ করবেন বড় ভাইয়ের ছেলে। অন্যদিকে ভারতে মন্ত্র পাঠ করবে মৃতের স্ত্রী-সন্তানরা। কারণ, পরেশের মৃত্যুর পর বড় ভাইয়ের ছেলেই তার মুখাগ্নি করেছিল। অথচ সহজে ভিসা পেলে অনেক আগেই ভারত চলে যেতে পারতেন পরেশ। সেজন্য গত দেড় মাস আগে ভিসার জন্য আবেদন করেও ভিসা তো পায়ইনি, এমনকি এখন পর্যন্ত ভিসার ই-টোকেনও হাতে মেলেনি তাদের। মৃত্যুর খবর ভারতে ফোনে জানানো হলেও জন্মদাতার মুখটা শেষবারের মতো দেখতে পারলেননা ছেলে-মেয়েরা।

এমন হৃদয় বিদারক কথাই জানালেন মৃত পরেশ আইচের বড় ভাইয়ের পরিবারের স্বজনেরা। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামে।

তারা আরও জানান, অনেক আগেই ভারতে গিয়ে পরিবারের সাথে দেখা করে নিজের চিকিৎসা করার কথা জানিয়েছিলেন পরেশ সাধু। সেজন্য দালালের কাছে ভিসার জন্য টাকাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ভিসার ই-টোকেনও পাননি তিনি। গত ১০ নভেম্বর সকালে চিকিৎসা না করাতে পেরে মারা গেলেন তিনি।

রোগীর চিকিৎসা, ব্যবসায়িক কাজ, ডাক্তার, শিক্ষক, সাহিত্যিক, লেখাপড়া, আত্মীয়দের সাথে দেখা করা, ভ্রমনসহ নানা কারণে প্রতিদিন ভারতে যাচ্ছেন অসংখ্য যাত্রী। বৈধ পথে যেতেই পারেন তারা। কিন্তু প্রয়োজন হলেই অসুস্থ বাবা-মা বা অন্য কাউকে নিয়ে ভারত যেতে পারছেন না এখন। কারণ ভিসা কবে পাবেন তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেছেন না। ভিসা তো দূরের কথা, ভিসা প্রাপ্তির ই-টোকেনের কথাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না গমনেচ্ছু কোন যাত্রী বা দালালেরা। ভিসা প্রাপ্তির বিলম্বের কারণ অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ভারত সরকার বন্ধু প্রতিম দু’দেশের জনগনের জন্য ভিসা প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে অনলাইনে ভিসার আবেদন গ্রহন শুরু করেন। তাতে সাড়াও মেলে ব্যাপক। কিন্তু গত দুই-তিন মাস ধরে ভারতীয় ভিসা পাওয়ার লক্ষে ই-টোকেন প্রাপ্তির কাজটি চলে গেছে একটি নির্দিষ্ট দালাল চক্রের হাতে। আগে অনলাইনে ভারতীয় ভিসার ই-টোকেন (ভিসা প্রাপ্তির আবেদনপত্র জমা দেয়ার তারিখসহ) সহজে পাওয়া যেত। এখন ভারতীয় ই-টোকেন যেন সোনার হরিণ! দালালদের চাহিদানুযায়ি টাকা দেয়ার পরেও ই-টোকেন মিলছেনা। ভারতীয় ভিসা প্রসেসিং কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ই-টোকেন দেয়ার ব্যবস্থা করলেও তা পাওয়া এখন কঠিন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ভিসা প্রত্যাশীরা। এই সুযোগে বিনামূল্যের ই-টোকেনের বাণিজ্য করে সংঘবদ্ধ একটি দালাল চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় একাধিক দালাল জানান, ওয়েব সাইটে(www.ivacbd.com) ঢুকলে প্রথমে একটি ফরম আসে। ওই ফরম পূরণ করে দাখিল করলেই আগে ভিসার জন্য একটি তারিখ দেয়া হত। ওই তারিখে দূতাবাসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে গেলে সহজেই মিলত ভিসা। এখন দূতাবাসের ওয়েবসাইটি দালালদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি (দালাল) মোটা অংকের টাকা নিয়ে একটি বিশেষ ই-মেইলে ভিসা প্রার্থীর তথ্য প্রেরণ করে। ওই ই-মেইলের বার্তা পেয়ে পরে দালালরা ই-টোকেন দিয়ে থাকেন। এভাবেই মেলে ভারতীয় ভিসা। বিনামূল্যের ই-টোকেনের জন্য এখন ব্যয় করতে হচ্ছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা।

রাজিহার গ্রামের পরেশ আইচ ভিসার আবেদন করতে জেলা শহর বরিশাল গিয়েছিলেন। কিন্তু কত দিনের মধ্যে ভিসা হাতে পাওয়া যাবে এর কোন নির্দিষ্ট তারিখ সাইবার ক্যাফে থেকে জানাতে না পারায় ও টাকা বেশী চাওয়ায় বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। পরে টরকী বন্দরে অবস্থানকারী নারায়ন পোদ্দারের কাছে ভিসার ই-টোকেনের জন্য ৩ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু দেড় মাসেও ই-টোকেন হাতে পাননি তিনি। চিকিৎসা করাতে না পেরে মারা যান তিনি।

এ ব্যাপারে দালাল নারায়ন পোদ্দার বলেন, সবাই কাজ বোঝেনা। তাই মানুষ আমাদের কাছে আসে। তাদের কাজ করে সাহায্য করি। আমরা টাকা নেই। তবে কারো কাছ থেকে জোর করে নয়। তারা কাজ না করালে আমাদের কিছুই করার নেই। একইভাবে বললেন গৌরনদীর আরেক দালাল পান্না বনিক।

চিকিৎসার জন্য ভারতে গমনেচ্ছু পয়সারহাট গ্রামের যুবক রাসেল মিয়া জানালেন, বরিশাল ও খুলনার বিভিন্ন ভিসা প্রসেসিং প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিয়ে এটা বুঝেছি, টাকা ছাড়া ভারতীয় ভিসার জন্য ই-টোকেন পাওয়া কোন রকম সম্ভব নয়।

কচুয়ার ব্যবসায়ি কালা চাঁদ ঘোষ জানান, ভারত সরকার আগের চেয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে ছয় মাস করায় সকলের পক্ষে মঙ্গল হয়েছে। আগে যে কোন সময় যাওয়া আসা করা যেত। এখন দালাল চক্রের অপতৎপরতা না থাকলে ই-টোকেনের এত ঝামেলা থাকতো না। যেহেতু দুই তিন হাজার টাকা খরচ না করলে এখন ভিসা পেতে জটিলতার সৃষ্টি হয় সে কারণে আমরা বাধ্য হয়েই তাদের টাকা দেই।

(টিবি/অ/নভেম্বর ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test