E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রংপুর চিনি কল : মিল কর্তৃপক্ষ-সাঁওতালদের অভ্যন্তরিন দ্বন্দ্ব

২০১৭ অক্টোবর ১৩ ১৪:৪৭:০২
রংপুর চিনি কল : মিল কর্তৃপক্ষ-সাঁওতালদের অভ্যন্তরিন দ্বন্দ্ব

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : সরকারি সম্পতি দখল মুক্ত করতে গিয়ে পুলিশ সদস্য ও জনপ্রতিনিধি রা হয়রানি ও শাস্তির স্বীকার হয়ে পরিবার ছাড়া। খোঁজ রাখেনা কেউ??
রংপুর চিনি কল, উত্তরবঙ্গে প্রথম ভারি শিল্প কারখানা, সুগার মিল গুলির মধ্যে সবচেয়ে বড়। বর্তমান গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে সুগার মিলের ৩৫ একর জায়গায় আছে কারখানা।

৩৫ দশমিক ৫৯ একরে আবাসন ব্যবস্থা, ৮ দশমিক ১৪ একর সুগার মিল থেকে রেলস্টেশনে যাতায়াতের সড়ক, ১৪ দশমিক ৩৫ একরে আখ উন্নতকরণ প্রকল্প, ৯৩ দশমিক ০৮ একর জমি খামার হিসেবে ব্যবহূত হয়, ১৬২ একরে পুকুর এবং ১৫৩২ একরে আখ চাষ করা হয়। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানী সরকার আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ এ ১৮৪০.৩০ একর জমি অধিগ্রহন করে।

৮০র দশকের পর থেকে মিলটি অব্যাহত ভাবে প্রতিবছর লোকসান দিয়ে আসার কারণে ২০০৪ সালে মিলটি লে অফ ঘোষণা করা হয়। মিলের শুরু থেকে সাহেবগঞ্জ খামারে মিল কর্তৃপক্ষ নিজে আখ চাষ করতো। এ জন্য সাহেবগঞ্জ এ অফিস, আবাসন, গোডাঊন থেকে শুরু করে স্কুল, মসজিদসহ সব ধরণের অবকাঠামো তৈরি করা হয়। মোট চাষযোগ্য জমি ছিল ১৫০০ একরের বেশী, কিন্তু আখ চাষের জন্য উপযোগী ছিল প্রায় ১৪০০ একর, বাকী জমি ছিল নিচু, জল বদ্ধতা ও সেচের অনুপযোগী উঁচুনিচু জমি হওয়ার কারণে আখ চাষ করা যেত না। মিল কর্তৃপক্ষ অল্টারনেট ভাবে মোটামুটি ৬০০ একর জমিতে আখ চাষ করতো। কারণ অনেকে হয়ত জানেন না, আখ মুড়ি ফসলসহ ২ বৎসর মেয়াদী একটা ফসল, একটা জমিতে দুই বছরের বেশী টানা আখ চাষ করলে ফলন ভাল হয় না। ফলে, আখের জমিতে অল্টারনেটভাবে অন্য ফসল চাষ করতেই হবে। সুতরাং যারা আখের জমিতে অন্য ফসল চাষ করা হচ্ছে বলে হৈচৈ করছেন, তাদের বিষয়টা আগে বুঝতে হবে।

২০০৪ সালে মিল লে অফ ঘোষণা করার পরে, সাহেবগঞ্জ খামারে অবস্থিত এই বিশাল জমি লীজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে এক বছর মেয়াদী লীজ দেয়া শুরু হয়। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা এই জমি লীজ নিয়ে বিভিন্ন ফসল আবাদ করা শুরু করে। শুধু দুইটি ফসল আবাদের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তামাক ও ভুট্টা। আন্দোলন ও রাজনৈতিক কারণে ২০০৬ সালে মিলটি আবার চালু হয়, কারণ তৎকালীন গোবিন্দগঞ্জের সংসদ সদস্যার বাড়ী ছিল চিনি কলের কারখানা যেখানে অবস্থিত সেই মহিমাগঞ্জে।

মিল চালু হলেও মিলের জমিতে অর্থাৎ সাহেবগঞ্জ খামারে আখ চাষ করার মত ফান্ড মিল কর্তৃপক্ষের না থাকার কারণে লিজের মাধ্যমে আখ চাষ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে লীজকৃত জমির ৫০ ভাগে আখ চাষ করতেই হবে এই শর্তে টেন্ডার দিয়ে লীজ দেয়া হত।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রকৌশলী মোঃ মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, গাইবান্ধা – ৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১০ সালে মে মাসে, মিলের তৎকালীন এম ডি মিলের লীজ দেয়া জমির মধ্যে ১২০ একর জমি তৎকালিন এমপি প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই লিটন চৌধুরীকে সাহেবগঞ্জ খামারে জমি লীজ দেওয়ার সিদ্ধান্তে জমির ৭ হাজার টাকা একর প্রতি বছর হিসেবে ঐ ১২০ একর জমি লীজ নেয়ার জন্য টেন্ডার দেয়। টেন্ডার মোতাবেক লীজকৃত জমির ফার্ম গড়ে তোলে এ ফার্মের সাফল্যে ইর্ষানিত হয়ে ইঞ্জি: মনোয়ার হোসেন এমপির এমপির নিজ দলীয় বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি তৎকালিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বর্তমান এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এমপি গং সাওতালদের এই জমি লীজে দেওয়া নেওয়াকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে অত্র উপজেলার সাওতাল জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে এই জনগোষ্টীর সঙ্গে মিলে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে জমি উদ্ধারে আন্দোলন সংগ্রাম করে বিশাল এই চক্রটি তারা আন্দোলন ও আদালতে মামলা মোকাদ্দমা, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক লিপি প্রদান, প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন,সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি দখল করে দখলি ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করে।

কিছুদিন দখলি এ ঝুপড়ি ঘর গুলো তুলে দেখানো বসতি দখলি জমির রামরাজ্যত্ব কায়েম কালে দখলি ঝুপড়ি ঘরে এলাকায় মিল কতৃপক্ষের কর্মচারীর জমিতে কাজ করতে গেলে তাদের উপর হামলা করে কর্মচারী ও এক লীজ গ্রহন কারী স্থানীয়কে আটক রেখে নির্যাতন করার এ খবর মিল কতৃপক্ষসহ কর্মচারী ও স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এখবরে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেড ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষের দ্বন্দ নিরসনে ছত্রভঙ্গ করতে উত্তেজিতদের উপরে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করলে পরবর্তীতে দখলদার সাওতাল জনগোষ্টি পুলিশের উপর হামলা করে তীর বিদ্ধ হয় পুলিশ সদস্যরা সহ মিলে কর্মচারীরা পিছু হটে পুলিশ কাটামোড়ে অবস্থান নিয়ে জেলা পুলিশ লাইন হতে রিজাভ ফোর্স, ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা মিলে উত্তেজিত সাওতালদের ছত্রভঙ্গ করতে আবারো অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় পুলিশ ও সাওতালদের মুখোমুখি অবস্থানে তীর ও গুলির যুদ্ধ চলে। এসময় অভিযানের সময় দখলি বাড়ী ঘর গুলো ধ্বংস করে জমি উদ্ধার করে মিল কর্তৃপক্ষের জমি দখলি মুক্ত করা হয়।

পরে নিজেরা করি, আইন শালিশ কেন্দ্র ও ব্লাষ্ট নামের তিনটি মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় ছমাস হেমব্রম বাদী হয়ে গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ, রংপুর চিনিকলের এমডি আব্দুল আউয়াল, ইউএনও আব্দুল হান্নান, গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার, ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আকন্দ সহ ৩৩ জনের নাম উলেøখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলা গ্রহন করেন গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার। মামলার বাদী আদিবাসী ছমাস হেমব্রম সাংবাদিকদেরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তীরবিদ্ধ হয়েছেন ৭ জন।গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় ৩ জন।

মামলার এজহারে বলা হয়, আদিবাসী সাঁওতালরা তাদের বাপ দাদার সম্পতি দাবী করে দীঘদিন যাবৎ বাগদা ফার্মের ৬ শ একর জমিতে বসবাস করে আসছে। রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও মিলের শ্রমিকদের নিয়ে কয়েক দফা সাওতাল পলøী উচ্ছেদের চেষ্টা করে। গত ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ ও শ্রমিকদের নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এসময় সাঁওতালরা তীর ধনুক নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এসময় পুলিশের গুলিতে প্রথমে একজন সাঁওতাল মারা যায়। পরের দিন আরও ১ জন নিহত হয়। অপরদিকে সাঁওতালদের তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হন ৯ পুলিশসহ ৩০ জন। পুড়িয়ে দেয়া হয় দখলি সাঁওতাল পলøী। পরে তারা স্থানীয় মাদারপুর ও জয়পুর সাঁওতাল পলøীতে আশ্রয় নেয়। ঘটনার পর স্বপন মুর্মু নামের এক সাঁওতাল বাদী হয়ে অঞ্জাত ৬ শ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

এদিকে গত ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তীরবিদ্ধ হয়েছেন ৭ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন সাঁওতাল নিহত হন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মুলআসামীরা ধরা ছোয়ার বাহিরে আছে এরমধ্যে মামলার তদন্ত ভার গ্রহন করে পিবিআই।

পিবিআই এর তদন্তকালিন সময়ে বিভিন্ন আলামত উদ্ধার কয়েকজন গ্রেফতার করে। গত রাতে গোপন খবরে এ মামলার অন্যতম আসামী ইউপি সদস্য শাহ আলম কে সাহেবগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

গ্রেফতারের আগমহুর্তে ইউপি সদস্য শাহআলম বাড়ী হতে ২ কিলো দুরে সাহেবগঞ্জ এলাকায় একটি শালিসে ছিলেন। সেখানে স্থানীয় ২০০ অধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।শালিসের স্থান হতে গ্রেফতার করার চেষ্টাকালে স্থানীয়রা ইউপি সদস্য শাহ আলম কে ছিনিয়ে নিতে পিবিআই এর সদস্যদের উপর হামলা করে পিবিআই এর ৪ সদস্যকে আহত করার ঘটনায় আবারো আরেকটি মামলা দায়ের করে পিবিআই।
এ মামলায় সাহেবগঞ্জ উচু মেরী ও নদী ওপারে নিচু মেরী এলাকা জুড়ে গ্রেফতার আতংঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সাহেবগঞ্জ বাজারে সন্ধ্যার পর জনশূন্য ভূতরে পরিবেশ বিরাজ করছে।

ইউপি সদস্য শাহ আলমের স্ত্রী জানান, সাওতাল পল্লীর ঘটনার দিন আমরা স্বামী স্ত্রী রংপুরে আমার বাবার বাড়ীতে ছিলাম। তাহলে সেদিনের ঘটনায় কি ভাবে আমার স্বামী আসামী হয়। শুধু মাত্র জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে নির্ভরতার প্রতিক পরপর দুবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য ও সাহেবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি। মিল কর্তৃপক্ষ ও সাঁওতালদের অভ্যান্তরিন দ্বন্দে আমার স্বামীসহ নিরপরাধ মানুষ গুলোকে রক্ষার অনুরোধ জানাচ্ছি সরকারের কাছে ।

তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন সরকারি সম্পতি রক্ষার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীকে সহযোগীতা করায় কি স্থানীয়দের অপরাধ।

(এসআইআর/এসপি/অক্টোবর ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test