E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জীববৈচিত্র সংরক্ষণে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি

২০১৪ জুলাই ০২ ২০:২৩:০৬
জীববৈচিত্র সংরক্ষণে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি

নাটোর প্রতিনিধি : চলনবিলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখাসহ চলনবিলকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে বিল ব্যবস্থাপনায় কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা হয়েছে।

গত সোমবার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা’র আয়োজনে নাটোর শহরের একটি চাইনিজ রেস্তোরায় “চলনবিল রক্ষায় করণীয়” শীর্ষক এক আলোচনাসভায় এমন জোড়ালো দাবি তোলা হয়।

বেসরকারি সংগঠন সাথী’র নির্বাহী পরিচালক শিবলি সাদিকের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তারা চলনবিল সংশ্লিষ্ট কোনো প্রকল্প অনুমোদনের পূর্বে গণশুনানী এবং ‘পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ’ বাধ্যতামূলক করারও জোড় সুপারিশ করেন।

আলোচনাসভায় এ সংক্রান্ত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের প্রফেসর ড. রেদওয়ানুর রহমান। প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য নাটোরের এডিসি জেনারেল মো. তৌফিক আল মাহমুদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়কারী তন্ময় কে. সান্যাল, বেলা’র ল’ইয়ার সাঈদ আহমেদ কবীর প্রমুখ।

এসময় নাটোরের সদর উপজেলা, গুরুদাসপুর, পাবনার চাটমোহর, এবং সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলার জেলে, কৃষক, মাঝি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, ভূমিদস্যুদের দখল, বিলের মধ্য দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে সড়ক-মহাসড়ক, কালভার্ট, বাঁধ নির্মান ও বিলের সাথে সংযুক্ত নদী ও খাল-বিলে গৃহস্থালী বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, কলকারখানার বর্জ্য, চাউলের চাতাল ও চামড়ার আড়তের বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে দূষণের কবলে পড়ে চলনবিল’র অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।

এই বিলের সাথে এক সময় যাদের (জেলে, মাঝি, চুর্ণকার, আদিবাসি) জীবন-জীবিকা জড়িত ছিল তাদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। বিলে মাছের পরিমান কমে যাওয়ার কারণে আনুপাতিক হারে মৎস্যজীবীদের সংখ্যা কমে গেছে। প্রতি বছর আট থেকে দশ হাজার লোক বেকার হয়ে পড়ছে। এই সবকিছুর ফলে চলনবিলের জীবন-জীবিকা, মৎস্য সম্পদ, কৃষি, প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

তারা আরো বলেন, চলনবিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরণের অবদান রেখে আসছে। এই বিলের সাথে অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই বিলের অস্তিত্ব অপরিকল্পিত বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে আজ হুমকির সম্মুখীন। সামগ্রিকভাবে এই বিলের উন্নয়ন ঘটাতে পারলে তার ইতিবাচক প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে পড়বে। তাই সরকারি-বেসরকারিভাবে চলনবিলের জীব-বৈচিত্র ও পরিবেশ সংরক্ষণ তথা বিলের অস্তিত্ব রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

আলোচনাসভায় বক্তরা চলনবিল উন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশমালা উস্থাপন করেন।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, জনমতের ভিত্তিতে সিএস রেকর্ড অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণপূর্বক চলনবিলকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে তা সংরক্ষণে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, চলনবিলের সাথে সম্পর্কিত সকল নদী ও খালের উপর স্লুইসগেট বা রেগুলেটর, বাঁধ, ক্রস বাঁধ, কালভার্ট ও অপরিসর সেতু অপসারণ করে এসব স্থানে পূর্ণপ্রস্থ সেতু নির্মাণ, বিলে পানি সরবরাহকারী সকল নদী-নদী, নদী-বিল, বিল-বিল এর সংযোগ খালসমূহের ভরাট হয়ে যাওয়া মুখ খুলে দেওয়া এবং প্রয়োজনমত পূণ:খনন করা,মাছ চাষ বা অন্য প্রয়োজনে চলনবিল এলাকার নদী-খাল-বিল-পুকুর লীজ প্রদান বন্ধ করা, নদী-খাল-বিলের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন অর্থাৎ পরিবেশ বান্ধব দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা, বিল ব্যবস্থাপনায় কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠনপ্রতিষ্ঠা করা, পেশা পরিবর্তনকারী (যেমন-মৎস্যজীবী, মাঝি, চুর্ণকার, আদিবাসি) মানুষদের জন্য সরকারিভাবে বিশেষ বরাদ্দ/কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং বিল এলাকার মানুষদের জন্য পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলার কৌশল নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে কর্মসূচী গ্রহণ করা প্রয়োজন।

(এমআর/এটিআর/জুলাই ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test