E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভেস্তে যেতে বসেছে রঘুরায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা 

২০১৭ ডিসেম্বর ২২ ১৫:০৯:৩৩
ভেস্তে যেতে বসেছে রঘুরায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা 

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলাধীন গোড়াই রঘুরায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হক সোনারের অনিয়ম-দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও উদাসীনতায় শিক্ষা ব্যবস্থা ভেস্তে যেতে বসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়টিতে জাতীয় বিভিন্ন দিবস পালনের ক্ষেত্রেও তার গোয়ার্তুমি,গড়িমসি ও অনাগ্রহকেই দায়ী করেছে স্থানীয়রা। এ অবস্থায় ক্ষব্ধ এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েছেন ওই  প্রধান শিক্ষক। 

ওই প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই বছর আগে ২০১৪ সালের ১২ মে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটি নিজের মনগড়াভাবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন ওই শিক্ষক। স্থানীয় নানা মহলের দাফটে এসব করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় এবছর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে কোন ধরনের কর্মর্সচী পালন করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন বিজয় দিবসের কর্মসূচী নিয়ে ব্যস্ত সেখানে গোড়াই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন ১৬ ডিসেম্বরে কোন অনুষ্ঠানাদি উদযাপন হয়নি? এমন প্রশ্নে স্বাভাবিকভাবেই খাদে পা পড়েছে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হকের।

এ নিয়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক এবং বিদ্যালয়টির সহ সভাপতি সামছুল হক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন। ওই সব অভিযোগ পত্রে বিজয় দিবস পালনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হক সোনারের গড়িমসি ও অবমাননার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ক’দিন ধরে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বেও সাথে নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারাও।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শুধু এবারের বিজয় দিবসই নয়, জাতীয় দিবস, মা এবং অভিভাবক সমাবেশ, ছাত্র-ছাত্রী উদ্বুদ্ধকরণে কোন সভা-সমাবেশ করে না প্রধান শিক্ষক। এছাড়া প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হকসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে সঠিকসময়ে আগমন ও প্রস্থান করে না। তাছাড়া প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সম্প্রতি স্লিপ প্রকল্পের ৪০হাজার টাকা বিপরীতে মাত্র একটি নাম ফলক ও নামে মাত্র একটি পতাকা স্তম্ভ স্থাপন করে অবশিষ্ট টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করে এলাকাবাসীরা।

২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হক বিদ্যালয়ে উপস্থিত নেই। সহকারী শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন, জীবুন্নাহার, আয়ভান ও মাহমুদা বেগম অফিসরুমে বসে খোশগল্প করছে। পাশে আরডিআরএস নামের বেসরকারী সংস্থার কর্মী কামরুন নাহার তৃতীয় শ্রেণীর খাতা মূল্যায়ন করছে। পাশের শ্রেণী কক্ষগুলোতে শিক্ষার্থীরা হইহুললুর করছে।

এসময় কথা হয় ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আঃ লতিফ মিয়ার সাথে। তিনি জানান, বিদ্যালয়টিতে একজন শিক্ষক বাদে সকলে মহিলা। এবং প্রতিটি মহিলার নবজাতক শিশু রয়েছে। তারা তাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সাংবাদিকরা আসার খবর পেয়ে এলাকাবাসীরা ওই বিদ্যালয়ে এসে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম- দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে ধরেন। এরমধ্যে আওয়ামীলীগের সদস্য এবং ওই বিদ্যালয়ের সহসভাপতি সামছুল হক গত ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস ওই বিদ্যালয়ে পালিত না হওয়ার স্বচিত্র ভিডিও উপস্থাপন করেন।

এ ব্যাপারে ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, যারা বিজয় দিবসকে অস্বীকার করে পালন করে না, তারা স্বাধীনতা বিরোধী। তারা সরকারী চাকুরী করে কিভাবে? তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার শাস্তি হওয়া দরকার। এছাড়া ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাইদুল ইসলাম স্লিপ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ করেন।

এলাকাবাসী আক্তারুল ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হকসহ সহকারী শিক্ষিকারা সঠিকসময়ে বিদ্যালয়ে আসে যাওযা করে না। এসব বিষয়ে বার বার স্কুল ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষক সহ সকল শিক্ষীকাকে সর্তক করার চেষ্টা করলে স্থানীয় শিক্ষীকাদের দাফটে তা আর বাস্তবায়িত হয় না।

একপর্যায়ে সভাপতি সাংবাদিকদের অফিস কক্ষে নিয়ে গেলে ওই স্থানীয় প্রভাবশালী শিক্ষিকা মাহমুদা বেগম অভিযোগকারীসহ বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে অভিযোগকারীদেরকে তালাবন্দি করার চেষ্টা করে। এসময় সাংবাদিকরাও অফিসে সভাপতির সাথে ছিলেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাইদুল ইসলাম সহ এলাকাবাসীরা ছুটে এসে তালা খুলে দেন। তালা খুলে দেয়ার পর ১২টা ৩৫মিনিটে প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হক অফিসে এসে বিষয়টির জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চান।

দূর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হক আংশিক সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি যা কিছু করেছি সব সরকারী বিধি অনুযায়ী করেছি। এ থানায় ২৬৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ রকম অনিয়ম দূর্নীতি সব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। আমি ফেরাস্তা না ভূল আমারও হতে পারে।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও ক্লাস্টার ট্রেইনার মোঃ জাহিদুল ইসলাম ফারুক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। মূল ঘটনা হলো ওই প্রতিষ্ঠানে পিয়ন নিয়োগকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

(পিএমএস/এসপি/ডিসেম্বর ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test