E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রয়োজনীয় কাগজের পরেও মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখাতে পারেনি অজিত মধু!

২০১৭ ডিসেম্বর ২৫ ১৫:০৫:৩১
প্রয়োজনীয় কাগজের পরেও মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখাতে পারেনি অজিত মধু!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সারা দিয়ে জীবন বাঁজি রেখে দেশের জন্য পাকিস্তানী হানাদারদের কবল থেকে দেশ মুক্ত করতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন অজিত মধু (৬২)। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য প্রয়োজনের অধিক সনদপত্র থাকলেও স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নেতাদের সন্তুষ্ট করতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখাতে পারেনি রণাঙ্গণ কাঁপানো এই যোদ্ধা।

আগৈলঝাড়া উপজেলার পশ্চিম বাগধা গ্রামের মৃত লক্ষ্মী কান্ত মধুর ছেলে অজিত মধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে জানান, তিনি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। তার রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের যুব শিবির নিয়ন্ত্রন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী (এমএনএ) স্বাক্ষরিত সনদ, ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া হাসনাবাদের টাকি ক্যাম্পের সনদ, প্রতাপপুর টাকি ক্যাম্পে মেজর এম.এ জলিল স্বাক্ষরিত সনদ, ৯নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর জলিল স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস সনদ, একই সেক্টর কমান্ডার এম.এ জলিলের রিকমান্ডেশন কার্ডসহ পাঁচটি সনদপত্র।

একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে একাধিক সনদের পরেও অজিত মধু দীর্ঘ ৪৬ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখাতে পারেননি। অজিত মধু আরও বলেন, তার নাম তালিকাভূক্তির করতে বিশ হাজার টাকা দাবি করেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কতিপয় নেতারা। তাদের চাহিদানুযায়ি টাকা দিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হতে চান নি বলেই আজও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠেনি তার।

তবে এজন্য তার কোন আপসোস নেই বলেও জানান অজিত মধু। তিনি বলেন, তালিকায় কোন দিন নাম না উঠলেও টাকা দিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেকাবেন না।

ইতিহাসের সস্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই যোদ্ধা বলেন, ১৯৭১ সালে বরিশাল পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র অবস্থায় ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনের ছুটিতে বাড়ি আসেন তিনি।

দেশে অরাজকতার মধ্যে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শুনে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেন নি তিনি। পরিবার পরিজনের কথা ভুলে দেশের টানে ওই বছরের আগস্ট মাসে তার একই এলাকা বাগধা গ্রামের দেবদাস রায়, উত্তর বাগধা গ্রামের লাল মিয়া মোল্লা, মাস্টার সুলতান আহমেদ, বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আইউব আলী মিয়াসহ ১১জন প্রশিক্ষনের জন্য যশোরের গঙ্গারামপুর হয়ে ক্যাম্প কমান্ডার ওয়াদুদের মাধ্যমে ভারতে যান তারা।

ভারতের হাসনাবাদের টাকি ক্যাম্পের ট্রেনিং সেন্টারে কমান্ডার কবির হোসেনের কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষনসহ যুদ্ধের বিভিন্ন রণকৌশলের প্রশিক্ষণ নেন তারা। প্রশিক্ষন ক্যাম্পে ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ জলিলকে দেখা যেত প্রায়ই। সেখান থেকে আরও উন্নত প্রশিক্ষনের জন্য উরিষ্যার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যান তারা। সেখানে ভারতীয় বশোংদ্ভুত একজন শিখ সম্প্রদায়ের কমান্ডারের কাছে প্রশিক্ষণ নেন তারা।

প্রশিক্ষণ শেষে মল্লিকপুরের ক্যাম্প কমান্ডার ওয়াদুদ যোদ্ধা অজিত মধুসহ ১৩জনকে তার ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরবর্তীতে মল্লিকপুর থেকে তাদের ১৩ জনকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বরিশাল সদরে। বরিশালে এসে ক্যাপ্টেন বেগ ও ক্যাপ্টেন ওমরের নেতৃত্বে প্রতাপপুর থেকে বরিশাল সদরের বর্তমান ওয়াপদা এলাকার সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন তিনি। যুদ্ধ জয়ের বিজয় পতাকা নিয়ে ২৫ ডিসেম্বর বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। পরবর্তীতে জীবিকার প্রয়োজনে চলে যান ঢাকায়। এক সময় তিতাস গ্যাসের ট্যাকনিশিয়ান পদে চাকুরী নেন তিনি। বর্তমানে চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশার মধ্যে থাকায় স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত এই বীর যোদ্ধা।

মুক্তিযোদ্ধা অজিত মধুর স্কুল পড়ুয়া পুত্র সুমন জানায়, দেশের জন্য সকল জাতি ও ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে কাজ করা সত্বেও দেশ স্বাধীনের পরে “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক” বিবেচনা করে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এভাবে তাদের এলাকায় আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখনো তালিকাভূক্ত হতে পারেননি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অজিত মধুর স্ত্রী সুকৃতি মধু জানান, গত এক যুগ আগে স্বামীর সহযোদ্ধা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আইউব আলী মিয়ার কাছে গিয়ে তার স্বামীর নাম তালিকাভুক্তির জন্য ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও তার স্বামীর নাম তালিকাভূক্তি হয়নি।
নিরূপায় হয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শুশান্ত বালার কাছে ছুটে যান এ দম্পতি।

সমাজসেবা কর্মকর্তা শুশান্ত বালা জানান, অজিত মধুর সকল কাগজপত্র দেখে তার আবেদনের শুপারিশ করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে তদ্বিরের অভাবে আজো তার কোন সারা পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তিনি অনলাইনে আবেদন করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আগৈলঝাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আইউব আলী মিয়া বলেন, অজিত মধু একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। অনলাইন আবেদনের যাচাই বাছাইয়ের পর তিনি তালিকাভূক্তি হতে পারবেন।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test