E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাপাহারে সোলার চালিত পাতকুয়া স্থাপন

২০১৭ ডিসেম্বর ২৬ ১৭:৫১:৪৯
সাপাহারে সোলার চালিত পাতকুয়া স্থাপন

নওগাঁ প্রতিনিধি : ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত উত্তরের নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব উদ্ভাবনে পানীয় জল সমস্যা সমাধানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে “পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প সেচে সব্জি চাষ প্রকল্প”।

দেশের বরেন্দ্র এলাকার চাঁপাইনবানগঞ্জ জেলার নাচোল, গোমস্তাপুর, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলার কিছু অংশে মাটির নিচে বালির কোন লেয়ার না থাকায় সেখানে কোন গভীর নলকুপ বা অগভীর নলকুপ কিছুই বসেনা। ফলে প্রতিবছর খরা মৌসুমে ওই সব এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। ওই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ গৃহস্থালী কাজে পুকুরের পানি ব্যবহার ও কুপের পানি পান করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

সাপাহার বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল করিম জানান, তিনিসহ অন্যান্য প্রকৌশলীগন বেশ কয়েক বছর ধরে ওই সব এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। অবশেষে তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনে একটি পরিকল্পনা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠালে সরকার তা গ্রহণ করে বরেন্দ্র এলাকায় পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প সেচে শব্জি চাষ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেন। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় স্বাপেক্ষে উপজেলায় ১৪০টি পাতকুয়া স্থাপনের জন্য বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ওপর দায়িত্বভার ন্যস্ত করে সরকার।

বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই ৩ শ্রেণীর ঠিকাদারের মাধ্যমে উপজেলার পিছলডাঙ্গা, সিংগাহার, ধর্মপুর , বাহাপুর, বাসুল ডাঙ্গা, মদনশিং, ফুরকুটিডাঙ্গা, করলডাঙ্গাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ৬০ থেকে ৭০টি পাতকুয়া খনন কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে কুপগুলির সিংহভাগ কাজ শেষ হয়ে অনেকেই সুবিধাদি ভোগ করছে এবং কিছু অংশে খনন কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম আরো জানান, প্রতিটি পাতকুয়া মেশিনের মাধ্যমে ১২০ ফুট থেকে ১৫০ ফুট খনন করা হয়। এর পর ওই খননকৃত কুপে ৪৬ ইঞ্চি ব্যাসের রিং বসানো হয়। কুপের ওপরে লোহার এঙ্গেল দিয়ে নির্মিত ৩২ ফুট ব্যাসার্ধের একটি ঢাকনা স্থাপন করা হয়ে থাকে। এর পর কুয়া থেকে পানি উত্তোলনের জন্য ঢাকনার উপরিভাগে ২৫০ ওয়ার্ডের ১৬টি সোলার প্যানেল বসানো থাকে।

এছাড়া ঢাকনাটি এমন ভাবে বসানো হয়, যাতে করে বৃষ্টির পানি ঢাকনা চুয়ে কুপের ভিতর পড়তে পারে। যার ফলে সুফলভোগী ওই কৃষক-কিষানীরা পানীয় জল সংগ্রহসহ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সোলারের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে তাদের শাকশব্জি ফসলে দিতে পারে।

কুপগুলিতে কোন ব্যাটারী কিংবা বিদ্যুত সরবরাহ না থাকায় শুধু দিনের বেলায় প্যানেলের মাধ্যমে যতটুকু পানি কুপ থেকে উত্তোলন করা হয়, সারারাতে তা আবার যেন পূর্বের লেয়ারে ফিরে আসতে পারে। বর্তমানে সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিনন্দন পাতকুয়াগুলো যেমন এলাকায় শোভাবর্ধন করছে, ঠিক তেমনী এলাকার সুফলভোগীরাও ওই কুপ থেকে স্বল্প সেচে সব্জিচাষ করে বেশ লাভের মুখ দেখছেন।

মাটির নিচের সু-পেয় পানীয় জলের অভাবে যে এলাকার মানুষ একসময় পুকুরের পানি পান করত। অনেক কষ্টে দু’একটি গ্রামে মানুষ গর্তের মধ্যে ঢুকে ৮০/৯০ ফুট মাটির নিচে গিয়ে কুয়া খনন করে পানীয় জলের সমস্যা মোকাবেলার চেষ্টা করতো। আর এই সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কারো কারো প্রাণ পর্যন্ত দিতে হত ওই কুপের ভিতরেই। এখন সে এলাকাগুলিতে মেশিনের সাহায্যে সোলার চালিত পাতকুয়াগুলি স্থাপন করে সু-পেয় পানীয় জলের সমস্যা সমাধান করছে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

(বিএম/এসপি/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test