E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

জমি নিয়ে বিরোধ

সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চার সদস্যকে পিটিয়ে জখম

২০১৪ জুলাই ০৪ ০৯:৫৯:১৬
সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চার সদস্যকে পিটিয়ে জখম

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এক সংখ্যালঘু পরিবারের উপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারিরা ওই পরিবারের চার সদস্যকে পিটিয়ে জখম করে নগদ টাকা ও জিনিসপত্রসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করেছে। বুধবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের কুলটুপুরি গ্রামের এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। জমি ছেড়ে না দিলে বা মামলা তুলে না নিলে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন মামলা নেয়নি। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করা হয়।

আহতরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার কুলটুপুরি গ্রামের অশ্বিণী মণ্ডলের ছেলে নারায়াণ চন্দ্র মণ্ডল (৬০), তার ছেলে শ্রীনিবাস মণ্ডল (২৮), তার স্ত্রী সন্ধ্যা রানী মণ্ডল (২০) ও নিমাই মণ্ডলের স্ত্রী সুমিত্রা মণ্ডল (৩৫)।

শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শ্রীনিবাস মণ্ডল জানান, ঠাকুর দাদা মৃত নবীন চন্দ্র মণ্ডল, কেশব চন্দ্র মণ্ডল ও হাজারী লাল মণ্ডলের কাছ থেকে ওয়ারেশ সূত্রে পেয়ে তারা কুলটুপুরি মৌজার ১৪ বিঘা জমি শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে রয়েছেন। ওই জমির মধ্যে এক বিঘা কিনেছেন দাবি করে কয়েক মাস আগে একই গ্রামের ফকির মিস্ত্রীর ছেলে জবেদ আলী মিস্ত্রী জোরপূর্বক ঘর বানিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করে। পরে তারা জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে সমুদয় সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করলে তার বাবা নারয়ণ চন্দ্র মণ্ডল শ্যামনগর সহকারি জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। যা বর্তমানে বিচারাধীন।

তিনি আরো জানান, গত ১৭ জুন জাবেদ আলীর নেতৃত্বে খায়ের , নণ্টু, মনিরুল, শহীদুল ও গফুরসহ ১০/১২জন তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তার স্ত্রীসহ বাড়ির মহিলাদের ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিয়ে পিটিয়ে জখম করে বাড়ি দখলের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় তার বাবা মামলা করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলা নেয়নি। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলা নেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।

পুলিশ ক্ষতাসীন দলের নেতাদের আশ্রয়ে থাকা আসামীদের গ্রেফতার না করায় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তারা বাদি (নারায়াণ) পরিবারের উপর হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এরই জের ধরে বুধবার ইফতারির পর নামাজ শেষে জাবেদ আলীর নেতৃত্বে খায়ের , নণ্টু, মনিরুল, শহীদুল ও গফুরসহ ১২/১৩ জন তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হামলারিরা তার স্ত্রী সন্ধ্যা রানী মণ্ডল, কাকিমা সুমিত্রা মণ্ডল ও বাবা নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডলকে ঘর থেকে টেনে বের করে লোহার রড, বাঁশের লাঠি ও দা দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। পরে তারা নগদ টাকা, সোনার গহনা ও ব্যবহৃত সামগ্রীসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে। জমি ছেড়ে না দিলে ও মামলা তুলে না নিলে নারায়ন চন্দ্র মণ্ডলসহ পরিবারের সদস্যদের ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে চলে যাওয়ার আগে তারা হুমকি দিয়ে যায়।

নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল অভিযোগ করে বলেন, বৃহষ্পতিবার সকালে তিনি স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ জেলা পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরকে অবহিত করলে তার নিদের্শে বিকেলে পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন। এ ব্যাপারে জাবেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. হাবিবুর রহমান জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শ্রী নিবাস মণ্ডল, সন্ধ্যা রাণী মণ্ডল ও সুমিত্রা মণ্ডলের মাথা, হাত , পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বিপ্লব জানান, তিনি তদন্ত করে মামলা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। পরে তদন্ত শেষে নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডলের আট জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আসামীরা পলাতক রয়েছে।

(আরকে/জেএ/জুলাই ০৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test